ওষুধের কাঁচামালের মজুদ তিন থেকে চার মাসের

বদরুল আলম

বাজার আধিপত্য বিবেচনায় দেশের বৃহৎ ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। দেশের বাজারে বিক্রীত ওষুধের ১৬ শতাংশই সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠান ওষুধ তৈরির কাঁচামাল অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টের (এপিআই) একটি অংশ আমদানি করে চীন থেকে। তবে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ব্যাহত হওয়ায় ওষুধের কাঁচামাল সরবরাহ বিঘ্নের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ওষুধের কাঁচামাল মজুদ রয়েছে তিন-চার মাসের। যদিও স্কয়ারের দাবি, ওষুধভেদে প্রতিষ্ঠানটির কাছে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল তিন থেকে ছয় মাসের মজুদ আছে।

জানা গেছে, চীনে করোনাভাইরাসের প্রভাবে আমদানিনির্ভর কাঁচামালপ্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে দেশের সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে। মোট আমদানির ২৬ শতাংশই চীন থেকে আমদানি হয় বলে অনিশ্চয়তা এখন আশঙ্কায় রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে আমদানিনির্ভর শিল্প পোশাক, বস্ত্র ওষুধ শিল্পের কাঁচামালপ্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে খাতসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের মধ্যে।

সূত্রমতে, শঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে কাঁচামালের প্রাপ্যতার বিষয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও। সম্প্রতি দেশের ওষুধ শিল্প মালিকদের সমিতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিকে (বিএপিআই) কাঁচামাল মজুদের তথ্য জানাতে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যা অনুসরণে সংগঠনের পক্ষ থেকে সদস্য ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে এপিআই মজুদের হালনাগাদ তথ্য।

প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএপিআই সেক্রেটারি জেনারেল এম শফিউজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। তাই এপিআইয়ের মজুদের হালনাগাদ নিয়ে আমরা কাজ করছি। শীর্ষ ৩০টি কোম্পানির কাছ থেকে কিছু ফিডব্যাক পেয়েছি। এখন পর্যন্ত তিন বা চার মাসের কাঁচামাল মজুদ আছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। সংগঠনের সদস্য প্রায় ১৭০টি কোম্পানি। যদি পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটে, সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত বাজারে ধারাবাহিকভাবে পণ্য দিতে পারব।

ওষুধের ওপর নির্ভর কাঁচামালের চাহিদারও তারতম্য ঘটে উল্লেখ করে এম শফিউজ্জামান বলেন, সামগ্রিক দিক বিবেচনায় যে পণ্যটি যে পরিমাণ বাজারে সরবরাহ হয়, তাদের বর্তমান কাঁচামালের মজুদ অনুযায়ী কারো আড়াই মাস, কারো তিন মাস, কিছু কিছু পণ্য চার মাসেরও মজুদ আছে। এর মধ্যে পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি করা যাবে বলে আশা করছি। কারণ কাঁচামাল আমদানিতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে নতুন বছরের ছুটির পর এখনো কাঁচামাল সরবরাহ শুরু হয়নি চীন থেকে। বড় কোম্পানিগুলোর কাঁচামালপ্রাপ্তি নিয়ে কোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা এখনো দেখছি না।

খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের ওষুধ শিল্পের বাজারের আকার ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ১৬ শতাংশ হারে বাড়তে থাকা বাজারটি যার ৭০ শতাংশই করে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালে দেশে ওষুধ বিক্রির পরিমাণ বিবেচনায় শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে স্কয়ার, ইনসেপ্টা, বেক্সিমকো, রেনাটা, হেলথকেয়ার ফার্মা, অপসোনিন ফার্মা, এসিআই, এসকায়েফ, অ্যারিস্টোফার্মা একমি।

ওষুধ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, ওষুধের কাঁচামালের সবচেয়ে সস্তা উৎস হলো চীন। দেশটির বিকল্পগুলোর মধ্যে আছে ভারত, ভিয়েতনাম। এছাড়া দাম অনেক বেশি হলেও আছে ইউরোপীয় কোম্পানি। সবচেয়ে সস্তা চীন হলেও দেশটির সরবরাহ করা এপিআইয়ের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশের ভালো বড় কোম্পানিগুলো চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি করে না। রফতানির উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামালগুলোর বিষয়ে ক্রেতাদের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকে, ফলে ক্রেতা না চাইলে চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি করা যায় না।

বিএপিআই সূত্রমতে, দেশের ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টের (এপিআই) ৯৭ শতাংশ চাহিদা মেটানো হয় আমদানির মাধ্যমে। গত অর্থবছরে দেশে ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় হয় ৬০ কোটি ডলার বা হাজার কোটি টাকা।

হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ডিএমডি সিইও মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, সাধারণত ন্যূনতম দুই মাসের মজুদ আমাদের থাকে। বড় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেরই পর্যাপ্ত মজুদ থাকে। পণ্যের ভিন্নতা অনুযায়ী মজুদের পরিমাণেও ভিন্নতা থাকে। এখন পর্যন্ত কোনো উদ্বেগের পরিস্থিতি নজরে আসেনি। আমাদের সাপ্লাই চেইনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হচ্ছে, তারাও বলছে করোনার পরিপ্রেক্ষিতে মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই। মুহূর্তে কোনো সমস্যার শঙ্কা নেই। কিন্তু আগামী মাসগুলোর বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না।

একই ধরনের মত প্রকাশ করেছেন বিএপিআই ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং রেনাটা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিইও সৈয়দ এস কায়সার কবির। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমরা এপিআই আমদানি করব। কিন্তু এর উৎপাদন বিশ্বব্যাপীই ব্যাহত হতে পারে। কারণ পুরো খাতটি চীনের মধ্যস্থতাকারীদের ওপর নির্ভরশীল। তার পরও আতঙ্কিত হওয়ার সময় এখনো আসেনি। পরিস্থিতি বুঝতে আমাদের আরো এক মাস অপেক্ষা করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন