একীভূত হচ্ছে ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠান দুটিকে একীভূত করতে ‘বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউশন আইন, ২০২০’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে একীভূত করে এ আইন করা হয়েছে। ২১টি ধারাসংবলিত এ আইন অনুযায়ী ইনস্টিটিউট পরিচালনায় ১২ সদস্যের একটি বোর্ড থাকবে। বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তিন বছরের জন্য মনোনীত হবেন। একজন পরিচালক থাকবেন, যিনি এ হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি এ আইন যথাযথ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি গেজেট ও প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিধি প্রণয়ন করতে পারবেন। এ বিধির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, প্রয়োজনীয় এমন প্রবিধান প্রণয়ন করতে পারবে ব্যবস্থাপনা বোর্ড।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জারি করা অধ্যাদেশ অনুযায়ী শিশু হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে উল্লেখ করে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এ অধ্যাদেশগুলোকে আইনে পরিণত করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। এ কারণে এটি আইনে পরিণত করা হয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে ঢাকা শিশু হাসপাতাল পরিচালিত হলে সর্বস্তরের শিশুদের উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রণয়নের মাধ্যমে একটি সুস্থ-সবল জাতি গঠনে হাসপাতালটি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে।
নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা নিয়ে আমরা নিয়মিত আলাপ-আলোচনা করছি। আজকে (সোমবার) এটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি। এটা নিয়ে আমরা কনসার্ন। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া একটা স্ক্যানিং সিস্টেম দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গত বুধবার এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটা জানিয়েছেন। অত্যাধুনিক এ স্ক্যানারের মধ্য দিয়ে গেলেই যেকোনো ভাইরাস ধরা পড়বে। আমাদের যে সিস্টেম আছে, সেটার সঙ্গে এটিও থাকবে। এটা আরো নিরাপদ। টেস্ট কেস হিসেবে তারা এমনিতেই এটা আমাদের দেবে। আমাদের সব এয়ারপোর্টেই তারা এটা দিতে চায়। তাদের নিজেদের আবিষ্কৃত এ প্রযুক্তি দিয়ে যেকোনো ভাইরাসই শনাক্ত করা যাবে বলে দাবি করা হচ্ছে।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে স্বাক্ষরের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সহযোগিতা চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশ্ব সংস্কৃতির সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির মেলবন্ধন জোরদার করার লক্ষ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক চুক্তি সম্পাদন ও এর আওতায় সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে মোট ৪৪টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
চুক্তির মূল লক্ষ্য ও বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক কৃষ্টি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ; সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং বিশেষজ্ঞ বিনিময়ের মাধ্যমে শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উভয় দেশের জনগণের জ্ঞান ও সচেতনতা অর্জন; সভা, সেমিনার ও প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে উভয় দেশের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি; চারুকলা, শিল্পকলা, শিল্প সংস্কৃতি ও সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উভয় দেশের সংস্কৃতি সমৃদ্ধকরণ; প্রকাশনা, গবেষণা ও তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ; সামগ্রিকভাবে সংস্কৃতি, শিল্পকলা এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষার সুযোগ সৃষ্টি।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতাবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য গ্রিস সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো খসড়ার ওপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি নেয়া হয়। এরপর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ২০১২ সালের ১৩ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গ্রিস সরকারের কাছে খসড়া চুক্তিটি পাঠানো হয়। গ্রিস সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর খসড়ায় কয়েকটি অনুচ্ছেদে কিছু শব্দ ও বাক্য সংযোজন করা হয়। এসব পরিমার্জন শেষে স্বাক্ষরিতব্য সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশ ও গ্রিস সরকারের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম শুরু হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগের চুক্তির ধারাবাহিকতায় এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলে উভয় দেশের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হবে। কোনো পক্ষ চুক্তি বাতিল করতে চাইলে চুক্তি বাতিলের তারিখের ছয় মাস আগে লিখিতভাবে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করতে হবে।