হাজারীখিলের বনে সড়ক না করার সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম ব্যুরো

বন বিভাগের আপত্তি সত্ত্বেও চট্টগ্রামের বৃহত্তম সংরক্ষিত বনাঞ্চল হাজারীখিলের মধ্য দিয়ে সড়ক নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। নিয়ে বন বিভাগ সওজ মুখোমুখি অবস্থানে চলে যাওয়ায় ওই সড়ক নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ১৩ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে সরকার। ওই কমিটি কয়েক দফা পরিদর্শন শেষে সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে সড়ক নির্মাণ না করার সুপারিশ করেছে।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অনেক দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী, জীববৈচিত্র্য গাছের সমাবেশ রয়েছে। বনের মাঝ বরাবর সড়ক নির্মাণ করলে এগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়বেআমাদের যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে সড়কটি নির্মাণ থেকে সরে আসার সুপারিশ করেছেন কমিটির সদস্যরা।

কমিটির পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বারৈয়াঢালা (সীতাকুণ্ড)-হাজারীখিল-ফটিকছড়ি সড়কটি সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ১২ ফুট চওড়া প্রস্তাবিত সড়ক নির্মাণ হলে বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান এবং হাজারীখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এর প্রতিবেশ দুই ভাগে বিভক্ত হবে। কমিটির পঞ্চম সভায় হাজারীখিল জাতীয় উদ্যানকে গুরুত্বপূর্ণ পাখি বৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বন বিভাগ এবং এর সাপেক্ষে সভায় বিভিন্ন প্রমাণসংবলিত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির সুপারিশ করেছে, বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান হাজারীখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের অভ্যন্তরে যে নয় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা আছে, সেটির পরিবর্তে ফটিকছড়ি প্রান্তের ১২ কিলোমিটার রাস্তা ১৮ কিলোমিটার করা যেতে পারে। অন্যদিকে ফটিকছড়ির মানুষের যাতায়াতের জন্য বিকল্প সড়ক হিসেবে মিরসরাই-নারায়ণহাট (ফটিকছড়ি) সড়কটি উন্নয়ন প্রশস্ত করে ব্যবহার করলে সড়ক সমস্যার সমাধান হবে।

বিষয়ে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) চন্দন কুমার দে বণিক বার্তাকে বলেন, জাতীয় স্বার্থে আমরা বনের ভেতর দিয়ে সড়ক নির্মাণ না করার জন্য সুপারিশ করেছি। তবে বনকে বাইরে রেখে বিকল্প উপায়ে সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব কিনা সে বিষয়ে নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাই করার পরামর্শ দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা দেবে সেভাবেই কাজ হবে।

হাজারীখিল এলাকায় সংরক্ষিত বনভূমির মধ্য দিয়ে সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা থেকে ফটিকছড়ির হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের লম্বা বিল পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প ২০১৮ সালের ২৯ জুন একনেকে অনুমোদন পায়। 

সড়কের নয় কিলোমিটার সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সংরক্ষিত অভয়ারণ্যটি দুই ভাগে বিভক্ত হবে এবং জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই  জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংরক্ষিত এলাকায় রাস্তা নির্মাণ না করে মিরসরাই থেকে নারায়ণহাট সড়কটি উন্নয়নের জন্য বিবেচনা করার প্রস্তাব দিয়েছিল বন বিভাগ। কিন্তু বন বিভাগের আপত্তি অগ্রাহ্য করে সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়েই সড়কটি নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল সওজ। বিষয়টি নিয়ে বন বিভাগ সওজের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে গত নভেম্বরে বন বিভাগ সওজসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে ১৩ সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়। দুই মাসের বেশি পর্যবেক্ষণ  শেষে সড়ক নির্মাণ না করার সুপারিশ করে কমিটি।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংগ্রাহক মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল সরকার বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব পাস হলেও বন বিভাগের চরম আপত্তি বাধার মুখে সওজ বিভাগ কাজ শুরু করতে পারেনি। এদিকে ১৩ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির কাছে আমরা আমাদের মতামত উপস্থাপন করি। সেখানে কমিটির সদস্যরা সড়কটি নির্মাণের পক্ষে কোনো শক্ত তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি, যার কারণে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় সড়কটি নির্মাণ না করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। আমাদের দেয়া বিকল্প সড়কটি সংস্কার করে ব্যবহারের সুপারিশও করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন