রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে রক্ষা করছে না চীন: রাষ্ট্রদূত

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারকে রক্ষা করতে চীন আর ভেটো দেবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল সকালে চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ডিক্যাব টক অনুষ্ঠানে তিনি কথা বলেন।

লি জিমিং অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে চীন মিয়ানমারকে রক্ষা করছে না। বন্ধুত্বের কারণে দ্বিপক্ষীয় একটি ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে। চীন চায়, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া নিশ্চিত হোক এবং একই সঙ্গে উভয় দেশ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করুক।

বহু বছর ধরে মিয়ানমার পশ্চিমাদের চাপে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে আমরা কাউকে রক্ষা করছি না। আমরা কেবল এটাই বোঝানোর চেষ্টা করছি, আপনি যদি মিয়ানমারের ওপর আরো জোর প্রয়োগ করেন, তাহলে সেখানকার সমাজে এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হবে। তারা হয়তো আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো তখন বুঝবে না। আর আন্তর্জাতিকভাবে যে চাপ তৈরি করা হচ্ছে, তা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নয়। চাপগুলো আসছে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে। চীনের ওপরও ধরনের আন্তর্জাতিক চাপ ছিল। পশ্চিমাদের আমি এটাই বলব, এটাকে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করতে দিন। দুটি দেশ যুদ্ধের মধ্যে নেই। তাদের সম্পর্ক খারাপ নয়।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারকে সুরক্ষা করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে লি জিমিং বলেন, আমার মনে হয় না যে নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে আর আলোচনা করবে। ফলে প্লাটফর্মে চীনের আর ভেটো দেয়ার সুযোগ থাকছে না।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ভুল পক্ষ অবলম্বন করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা সংকটটি আইসিজেতে রয়েছে। এখানে গণহত্যা হয়েছে কিনা, তার রায় এখনো বাকি রয়েছে। তাদের রায়ের আগে বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে না। আর আমি মনে করি না, চীন মিয়ানমারকে রক্ষা করছে। বাংলাদেশ, চীন মিয়ানমারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। দুই বন্ধুর সংকটে চীন এখানে বন্ধু হিসেবে সহযোগিতা করছে। এমনকি আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মেও চীন একই চেষ্টা করছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল (আইপিএস) বিষয়ে চীনের অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি একটি নতুন বিষয়, যা যুক্তরাষ্ট্র সামনে এনেছে। দেশটি তার নৌবাহিনীর একটি শক্তিশালী বহরের নামে এটির নামকরণ করেছে। এটি পরিষ্কার, আইপিএস বেল্ট অ্যান্ড রোডের মতো কোনো অর্থনৈতিক জোট বা কৌশলগত বিষয় নয়। আর বিষয়টিতে ভারত খুবই আকর্ষণীয়ভাবে সামনে এসেছে। তারা বলছে, ইন্দো-প্যাসিফিক একটি ভৌগোলিক ধারণা। ভারতীয়রা এটিকে সামরিক সহযোগিতা কৌশল হিসেবে দেখছে না।

তিনি বলেন, আসিয়ানের কিছু দেশও নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছে। আইপিএস নিয়ে তাদের ধারণা সেখানে প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা এটিকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ভাবছে। বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আর বাংলাদেশ আমাদের যে বার্তা দিয়েছে, তা হলো আইপিএস যদি অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভিত্তি হয়, তবেই বাংলাদেশ এখানে অংশ নেবে। আর যদি এটি সামরিক কৌশল হয়, তাহলে বাংলাদেশ এতে থাকবে না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে লি জিমিং বলেন, জাপান মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর করছে। সুতরাং চীন মনে করছে সোনাদিয়ায় প্রস্তাবিত সমুদ্রবন্দরটির আর প্রয়োজন নেই। এর পরিবর্তে চীন এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে বে-টার্মিনাল নির্মাণে অন্যান্য দেশের মতো প্রতিযোগিতা করতে চায়।

১৭১ বাংলাদেশীকে ফেরত না আনার পরামর্শ

অনুষ্ঠানে চলমান নভেল করোনাভাইরাস সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, এক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। চীনের অনুমতির কোনো বিষয় নেই। বাংলাদেশের উড়োজাহাজ সেখানে যেতে চায় না। কারণ সেখানে গেলে উড়োজাহাজ অন্য দেশে যেতে পারবে না। তবে ফিরতে চাওয়া ১৭১ বাংলাদেশীকে নিজেদের এবং তাদের পরিবারের স্বার্থেই ফিরে না আসার বিষয়ে উৎসাহিত করব।

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়া, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নানা রকম বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বাস্তবতা হলো, চীন শুরু থেকেই এটা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এর পূর্ণ সক্ষমতাও দেশটির রয়েছে। ভাইরাসটি উহান থেকে ছড়িয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এটার উত্পত্তি আসলে কোত্থেকে, সে বিষয়ে বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা কারো কাছে নেই। ব্যাপারে কাজ চলছে, গবেষণা হচ্ছে।

সংকটে চীনের পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। একই সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তে চীনের সরবরাহকৃত ৫০০ কিট আগামীকাল ঢাকা এসে পৌঁছবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, করোনাভাইরাস সমস্যা শুধু উহানে। অন্য প্রদেশে কোনো সমস্যা নেই। উহান ছাড়া সবখানে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্য দেশে ব্যবসা স্থানান্তর হবে ব্যয়বহুল, অসম্ভব অপ্রয়োজনীয়।

এজন্য তিনি ব্যবসায়ীদের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানান।

ডিক্যাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টির সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন