দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বাগেরহাটের দশানী-রামপাল-মোংলা সড়কটি বেহাল অবস্থায় রয়েছে। খানাখন্দে ভরা ৩৩ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রী ও চালকদের। সড়কের মাঝখানে থাকা বড় বড় গর্তে পড়ে উল্টে যাচ্ছে অটোরিকশাসহ ছোট-বড় অসংখ্য যানবাহন। কিন্তু বিকল্প সড়ক না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করছে হাজারো মানুষ।
তবে বাগেরহাট সড়ক বিভাগ বলছে,
সড়কটির
প্রশস্তকরণ ও সংস্কারের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো
হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে দ্রুতই কাজ শুরু হবে।
স্থানীয়রা বলছে,
বাগেরহাট
শহরের দশানী থেকে শুরু হয়ে সড়কটি মোংলায় গিয়ে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ
কয়েকটি বাজার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা রয়েছে।
কিন্তু বেহাল অবস্থার কারণে এ সড়ক দিয়ে হেঁটে চলাও দায়। খানাখন্দে ভরা সড়কের ওপর
দেয়া পাথরে উল্টে যায় রিকশা,
ভ্যানের
মতো ছোট যানবাহন।
যানবাহন চালকরা জানান,
খারাপ
রাস্তার কারণে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যানবাহন। এছাড়া একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ মোড় থাকায়
দুর্ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। দ্রুত এ সড়ক সংস্কার না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা
করছেন তারা।
এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন মিহিনা বেগম। সম্প্রতি ভাঙা সড়কে রিকশা
উল্টে আহত হন তিনি। মিহিনা বেগম বলেন,
আমি
আত্মীয়র বাড়ি থেকে অটোরিকশায় বাড়ি ফিরছিলাম। সামনের দিক থেকে আসা একটি ভ্যানকে
জায়গা দিতে গেলে সড়কের ভাঙা অংশে চাকা পড়ে আমাদের অটোরিকশা উল্টে যায়। আমিসহ অটোর
ছয় যাত্রী আহত হন।
মোটরসাইকেল চালক রানা বলেন,
ভাঙা
রাস্তার ওপর মোটরসাইলের চাকা উঠলেই তা পিছলে দুর্ঘটনা ঘটছে।
অটোরিকশা চালক রফিক মিয়া বলেন,
আমরা গরিব
মানুষ, দিন আনি দিন খাই।
রাস্তার কারণে গাড়ির পেছনে যত টাকা খরচ হয়,
তাতে
আমাদের পরিবার নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।
অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইমন বলে, বাড়ি থেকে আমার বিদ্যালয়ের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। এজন্য হেঁটে
আমি বিদ্যালয়ে যাতায়াত করি। কিন্তু ভাঙা রাস্তায় অবিরাম যানবাহন চলাচলের কারণে
প্রচুর ধুলাবালি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বেহাল রাস্তার কারণে প্রায়ই হাঁটার রাস্তায়
বিভিন্ন যানবাহন তুলে দেন চালকরা। এজন্য দুর্ঘটনার পড়ার আশঙ্কা থাকে।
বাগেরহাট সদরের কাড়াপাড়া কাদম্বিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী
শিক্ষক মোর্শেদা বাঁধন বলেন,
মূল সড়কের
পাশেই আমাদের বিদ্যালয়ের অবস্থান। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা খুবই
ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমরাও ভয়ে থাকি কখন কি দুর্ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায়
কোনো গতিরোধকের ব্যবস্থা না থাকায় মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত জেলা তথ্য কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দীন বলেন, মোংলা, রামপাল, ফয়লাসহ বিভিন্ন
এলাকায় যাতায়াতের জন্য আমরা এ সড়ক ব্যবহার করি। কিন্তু সারা বছর সড়কটির এমন
বেহালদশা থাকে যে বাড়ি থেকে বের হতে গেলেই আঁতকে উঠি। বর্ষায় সড়কের অর্ধশতাধিক
স্থানে পানি জমে। শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালি। সব মিলে বেহাল সড়কের কারণে আমাদের
ভোগান্তি চরম মাত্রায় উঠেছে। দ্রুত রাস্তা যদি সংস্কার করা না হয়, তাহলে যেকোনো সময় বড়
দুর্ঘটনা ঘটারও সম্ভাবনা রয়েছে।
এসব বিষয়ে বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, দশানী থেকে মোংলা
পর্যন্ত সড়কে দৈর্ঘ্য ৩৩ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার।
বর্তমানে সড়কটির মাত্র ছয় কিলোমিটার অংশের প্রস্থ ১৮ ফুট রয়েছে। অবশিষ্ট ২৭
কিমি সড়ককে ১৮ ফুটে উন্নীতকরণ ও পুরো সড়ক সংস্কারের জন্য ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে
পাঠানো হয়েছে। অনুমোদেন হলে দ্রুত কাজ শুরু করব। এছাড়া সাময়িকভাবে সড়কটিকে সচল
রাখতে মেরামতের জন্য আমরা দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নির্বাচন করেছি। মার্চের মধ্যে
সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ ভাঙাচোরা এলাকা সংস্কার করা হবে।