বোরো আবাদে ভাটা

মিরসরাইয়ে ৭০ শতাংশ সেচপাম্প বন্ধ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি মিরসরাই

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সেচপাম্প আছে ১৪০টি। মূলত বোরো মৌসুমে সেচ দেয়ার জন্য এসব পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। তবে চলতি বোরো মৌসুমে ৭০ শতাংশ সেচপাম্পই বন্ধ পড়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোকসানের কারণে ধান আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। কৃষকরা আগ্রহী না হওয়ায় ভর মৌসুমেও সেচপাম্প চালু করা হয়নি। এতে চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মিরসরাইয়ের ১ হাজার ৪৫০ হেক্টরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে মাত্র ৯০০ হেক্টরে। বাকি জমিতে বোরো আবাদের সম্ভাবনা কম। এ কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫০০ হেক্টর কম জমিতে বোরো আবাদ হবে।

সূত্র জানায়, এ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় বিএডিসির ১৪০টি সেচপাম্প আছে। এসব পাম্প দিয়ে সেচের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয়রা কৃষকরা বোরো ও বিভিন্ন শাকসবজির চাষ করে থাকেন। বিনিময়ে বিএডিসি নির্দিষ্ট একটি ফি নিয়ে থাকে। কিন্তু এবার বোরো মৌসুমে প্রায় ১০০টি সেচপাম্পই বন্ধ পড়ে আছে। অর্থা ৭০ শতাংশের বেশি পাম্প দিয়ে এবার সেচ দেয়া হচ্ছে না। এতে যেসব কৃষক বোরো আবাদ করছেন, তারাও বিপাকে পড়েছেন।

উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামে সেচপাম্প পরিচালনাকারী মো. সুরুজ আলী বলেন, কৃষকরা বোরো আবাদ করছেন না। তাই তিনি পাম্প বন্ধ রেখেছেন। কৃষকরা ধান আবাদে আগ্রহী হলে পুনরায় পাম্প চালু হবে। তিনি জানান, এক কানি (১২০ শতক) জমিতে পানি সেচ দেয়া বাবদ কৃষকরা ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিয়ে থাকেন।

উপজেলার একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোরো আবাদে আলাদা করে সেচের প্রয়োজন হয়। তাই খরচ বেশি পড়ে। কিন্তু উপাদন খরচের তুলনায় ধানের বাজারমূল্য কম হওয়ায় তারা এবার বোরো আবাদ করছেন না বা কমিয়ে দিয়েছেন।

তারা জানান, প্রতি কানি জমিতে বোরো আবাদ করতে খরচ হয় ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এ জমি থেকে ধান পাওয়া যায় ৪৫-৫০ মণ, যার বাজারমূল্য ২০-২৫ হাজার টাকা। অর্থা এক কানিতে কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা লোকসান হয়। তাই অনেকে বোরো আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

এক কৃষক বলেন, এক শতক জমিতে বোরো আবাদ করতে খরচ হয় ২৫০-৩০০ টাকা। কিন্তু ধান হয় মাত্র ১২-১৫ কেজি, যার বাজারমূল্য মাত্র ১৫০-১৬০ টাকা। এত লোকসান দিয়ে কে ধান চাষ করবে?

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম জানান, বোরোতে খরচ বেশি। তাই অনেক কৃষক বোরো আবাদ করতে চান না। এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০০ হেক্টর কম জমিতে বোরো আবাদ হবে। বোরো আবাদ না হওয়ার কারণে অনেক সেচপাম্প বন্ধ হয়ে গেছে। ভালো দাম পেলে কৃষকরা আবার ধান আবাদে আগ্রহী হবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন