বিক্ষোভকারী চিহ্নিত করতে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার ভারতের

বণিক বার্তা ডেস্ক

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভে অংশ নেয়ার আগে মুখ ঢেকে যেতেন আর্টিস্ট রাচিতা তানিজা। তিনি কখনো মাস্ক, হুডি বা স্কার্ফ পরতেন পুলিশের ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তিতে যাতে ধরা না পড়েন।

আন্দোলন ও বিক্ষোভের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ভারতের রাজধানী ও উত্তর প্রদেশের পুলিশ মধ্য ডিসেম্বরে শুরু হওয়া সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। নতুন এ প্রযুক্তি নিয়ে পর্যাপ্ত নীতিমালা না থাকায় খুবই উদ্বিগ্ন অ্যাক্টিভিস্টরা। গত মে মাসে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন শুরু করেছে এবং বিরোধী মতের ওপর দমন-নিপীড়ন বাড়িয়েছে।

২৮ বছর বয়সী তানিজা বলেন, আমি জানি না তারা আমাদের ডাটা নিয়ে আসলে কী করবে। সরকার যেভাবে দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে, সেখানে আমাদেরকে নিজেদের সুরক্ষা করা দরকার। নিজেদের মুখমণ্ডল গোপন করতে সস্তায় অনলাইন কার্টুন সরবরাহ করছে তানিজা।

এছাড়া সরকার যে এ নিয়ে গোপনীয়তার আশ্রয় নিচ্ছে, সে বিষয়ে অভিযোগ তুলছেন সমালোচকরা। দিল্লির বিক্ষোভে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ করে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

বিক্ষোভকারীদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। তারা বলছে, কিছু কিছু বিক্ষোভকারী ব্যাপক সহিংসতা করেছে।

প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপির এক মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে চাননি। এটা সরকারের বিষয় বলে তিনি প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান। তবে পুলিশ বলছে, ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি নিয়ে ভয়ের বিষয়টি অবান্তর। দিল্লির ক্রাইম রেকর্ডস অফিসে রাজন ভগত নামে পুলিশের এক ডেপুটি কমিশনার বলেন, আমরা শুধু কিছু চিহ্নিত মানুষকে আটক করছি। আমাদের কাছে বিক্ষোভকারীদের কোনো ডাটা নেই বা ডাটা সংরক্ষণের পরিকল্পনাও নেই। সম্ভাব্য গ্রেফতার ও আটক নিয়ে বিস্তারিত জানাতে তিনি রয়টার্সের কাছে অস্বীকৃতি জানান।

ভারতীয় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ইন্নেফু ল্যাবসের ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি এআই ভার্সন ব্যবহার করছে ভারতের পুলিশ। এতে মানুষের চলন-বলন ও অঙ্গভঙ্গি বিশ্লেষণ করা যায়। ইন্নেফুর সহপ্রতিষ্ঠাতা তরুণ উইগ বলেন, যদি কেউ কোনো পুলিশ কর্মকর্তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করে, তাহলে কি তার অধিকার নেই ওই ব্যক্তির ভিডিও চিত্র ধারণ করা এবং চিহ্নিত করা? ৩৬ বছর বয়সী উইগ আরো জানান, ভারতের ১০টি প্রদেশের পুলিশ ইন্নেফু সেবা গ্রহণ করছে।

ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১ হাজার ১০০ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে উত্তর প্রদেশের পুলিশ। ২২ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ভারতের বৃহত্তম এ প্রদেশে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে প্রায় দুই ডজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়।

নজরদারিতে চীন থেকে অবশ্য অনেক পিছিয়ে আছে ভারত। নয়াদিল্লিতে প্রতি ১০০ জনের জন্য শূন্য দশমিক নয়টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। এর বিপরীতে চীনের বাণিজ্য নগরী সাংহাইয়ে প্রতি ১০০ জনের বিপরীতে ১১ দশমিক ৩টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন