লাউ প্রধানত শীতকালীন সবজি।
তবে এখন সারা বছরই লাউ পাওয়া যায়।
উন্নত বীজ ও জাত উদ্ভাবন সম্ভব হওয়ায় সবজিটির উৎপাদন যেমন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে, তেমনি ১২ মাসই মানুষের পাতে তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে লাউ।
লাউয়ের উৎপাদন বৃদ্ধির পথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা।
সবজিটির নতুন দুটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
এ
দুটি জাতের ফলন হবে গাছের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত।
ফলে লাউয়ের উৎপাদন শুধু আর মাচায় সীমাবদ্ধ থাকবে না।
এতে উৎপাদন বেড়ে লাভবান হবেন কৃষকরা।
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষণা) ড. একেএম আমিনুল ইসলাম সম্প্রতি লাউয়ের নতুন এ দুটি জাত উদ্ভাবন করেছেন।
নাম দেয়া হয়েছে বিইউ হাইব্রিড লাউ-১ ও বিইউ লাউ-১।
গাছের একেবারে গোড়া থেকে ফলন দেয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি গাছগুলো তুলনামূলক ছোট হওয়ায় ছাদকৃষিতে এ দুটি জাত জনপ্রিয়তা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অধ্যাপক ড. একেএম আমিনুল ইসলাম জানান, লাউ প্রধানত শীতকালীন সবজি।
তবে কৃষিবিজ্ঞানের কল্যাণে আলোক অসংবেদনশীল উন্নত জাত উদ্ভাবন সম্ভব হওয়ায় এখন সবজিটি সারা বছরই পাওয়া যায়।
সহজলভ্য হলেও লাউয়ের মৌলিক বা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জাতের সংখ্যা খুব কম।
তাছাড়া লাউ গাছ লতানো একটি উদ্ভিদ।
এর
জন্য মাচা করতে হয়।
জায়গা বেশি লাগে।
এ
কারণে অনেকেই লাউ আবাদ করতে চান না।
বিশেষত, শহর অঞ্চলে বাণিজ্যিক আবাদ, ছাদকৃষি বা ভার্টিক্যাল এগ্রিকালচারের জন্য লাউ কিছুটা বেমানান।
তিনি বলেন, লাউ আবাদে এসব চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো মাথায় রেখে এমন কিছু স্বতন্ত্র জাত উদ্ভাবন করতে চেয়েছি, যেগুলোর উৎপাদনশীলতা বেশি।
আবাদে জায়গাও কম লাগবে।
দীর্ঘ গবেষণার ফলাফল হিসেবে বিইউ হাইব্রিড লাউ-১ ও বিইউ লাউ-১ নামের দুটি নতুন জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে।
লাউয়ের উচ্চফলনশীল এ জাত দুটির মধ্যে একটি হাইব্রিড।
অন্যটি উন্মুক্ত পরাগায়িত (ওপি)। দুটি জাতেরই ফলনের তুলনায় অঙ্গজ বৃদ্ধি খুব কম, যা আধুনিক বা স্মার্ট কৃষির জন্য একেবারে মানানসই।
এছাড়া পুং ও স্ত্রী ফুলের অনুপাত কম হওয়ায় গাছে খাদ্যের যে জোগান দেয়া হয়, তা অত্যন্ত মিতব্যয়িতার সঙ্গে সরাসরি ফল উৎপাদনে ব্যবহার হয়।
অর্থাৎ প্রচলিত জাতের তুলনায় এ দুটি জাতে গাছের খাবারের অপচয় তুলনামূলক কম হয়।
ফল
ঝরে পড়ার হারও তুলনামূলক কম।
একই সঙ্গে হাইব্রিড জাতটি আলোক অসংবেদনশীল হওয়ায় সারা বছরই চাষ করা সম্ভব।
খেতে সুস্বাদু।
গরমের মৌসুমেও এর স্বাদে খুব একটা হেরফের হয় না।
গাছের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত প্রতি গিটে লাউ ধরে।
একেকটি লাউয়ের ওজন তিন-চার কেজি।
আর বিইউ লাউ-১ জাতের ওজন হয় এক কেজি থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম।
আধুনিক ছোট পরিবারে এক বেলার চাহিদা পূরণে এ আকারের লাউ যথোপযুক্ত।
ফলে এক বেলার জন্য কেটে রান্না করে বাকিটা পরের বেলার জন্য রেখে দিতে হবে না।
স্বাদ ও পুষ্টিগুণ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমে আসবে।
