চীনের বাইরে নভেল করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত দেশগুলোর অন্যতম সিঙ্গাপুর।
ভাইরাসের কারণে এরই মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে নগররাষ্ট্রটি।
এ
অবস্থায় চলতি বছরের বাজেট প্রকাশ করতে যাচ্ছে এশিয়ার অন্যতম ধনী এ দেশ।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নভেল করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব প্রশমনে সিঙ্গাপুর এবার বেশ বড় আকারের বাজেট ঘোষণা করতে পারে।
খবর সিএনবিসি।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (আজ) বার্ষিক বাজেট বক্তব্য দিতে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুরের অর্থমন্ত্রী হেং সুই কিট।
এবারের বাজেটে তাকে নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির পাশাপাশি আরো বেশকিছু সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে।
বিশেষ করে ভাইরাস সংক্রমণের আগে গত বছর দেশটিকে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বেশ ভুগতে হয়েছে।
ওই
বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে সিঙ্গাপুরের সেমিকন্ডাক্টর রফতানিতে ধস নামে।
অথচ সেমকিন্ডাক্টর হলো সিঙ্গাপুরের অন্যতম প্রধান রফতানি পণ্য।
এ অবস্থায় চলতি বছরের শুরু থেকেই ভাইরাসের সংক্রমণ দেশটির অর্থনীতিতে আগে থেকে বিদ্যমান ক্ষত আরো বড় করেছে বলে জানান সিঙ্গাপুরের ব্যাংক ডিবিএসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আরভিন সিয়াহ।
চলতি মাসের শুরুর দিকে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশটির অর্থনীতিতে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব ২০০৩ সালে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট সিনড্রোম) ভাইরাসের প্রভাবকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এর
প্রধান কারণ হলো, সার্সের প্রাদুর্ভাবের পরবর্তী সময়ে
সিঙ্গাপুর চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো বাড়িয়েছে।
বর্তমানে চীনই নগররাষ্ট্রটির প্রধান রফতানি বাজার।
এছাড়া সিঙ্গাপুরে বেড়াতে আসা আন্তর্জাতিক পর্যটকদের সিংহভাগ আসেন চীন থেকে।
কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণে চীনে চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি হ্রাস পেয়েছে সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা ব্যয়।
ফলে এ বছর সিঙ্গাপুরের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছেন আরভিন সিয়াহ।
এর
আগে তিনি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১ দশমিক ৪ শতাংশ করলেও এখন তা কমিয়ে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ ধার্য করেছেন।
তাছাড়া গত বছর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০০৯ সালের পর সর্বনিম্ন।
সিয়াহ ও অন্য অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতিকে করোনাভাইরাসের প্রভাব থেকে বাঁচাতে বাজেটে সিঙ্গাপুর সম্ভবত ইতিহাসের অন্যতম বড় রাজস্ব ঘাটতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে।
এ
ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে ৭০০-৮০০ কোটি সিঙ্গাপুরি ডলার।
বাজেটে এত বেশি রাজস্ব ঘাটতি রাখতে পারার কারণ হচ্ছে, এর আগের বাজেটগুলো থেকে ধনী নগররাষ্ট্রটির বেশ বড় অংকের উদ্বৃত্ত জমা হয়েছে।
তাছাড়া সিঙ্গাপুরের সংবিধান অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদে দেশটির সরকারকে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়।
এ
হিসাবে আগামী বছরের এপ্রিলে নির্বাচনের আগে এটি হলো সরকারের সর্বশেষ বাজেট।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সিঙ্গাপুরের সরকারের কাছে চলতি মেয়াদে বাজেট উদ্বৃত্ত রয়েছে ১ হাজার ৭০০ কোটি সিঙ্গাপুরি ডলার।
তবে এর সবই এবার ব্যয় করা হবে না।
এ বিষয়ে ব্রোকারেজ হাউজ মেব্যাংক কিম এংয়ের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ চুয়া হাক বিন বলেন, যথেষ্ট আর্থিক সুযোগ থাকার পরিপ্রেক্ষিতে বিধি অনুযায়ী অর্জিত উদ্বৃত্তের কিছু অংশ সরকারকে মজুদ করতে হয়।
তিনি আরো বলেন, এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য হবে এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়া, যার মধ্য দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণজনিত সংকটকালে দেশটির ব্যবসা ও শ্রমিকদের সহায়তা করা যায়।
এ
সহায়তায় সরকারের ব্যয় হতে পারে ৭০ কোটি সিঙ্গাপুরি ডলার।
তাছাড়া বাজেটে আয়কর রেয়াত ও ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রা ব্যয় প্রশমনে আর্থিক বরাদ্দের মতো ‘নির্বাচনবান্ধব’ কিছু বিষয়ও যুক্ত হতে পারে।
পর্যটন ও যোগাযোগ খাতের পুনরুজ্জীবনে রেয়াত হতে পারে বাণিজ্যিক সম্পত্তি ও হোটেলের কর।
পাশাপাশি সেবা শিল্পে সহায়তার জন্য বৈদেশিক কর্মসংস্থান কোটা সাময়িকভাবে শিথিল এবং বিভিন্ন ব্যবসার উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশের বাইরে সম্প্রসারণের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে।