গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে ত্রৈমাসিক জিডিপি সংকোচনের শিকার হয়েছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতি জাপান।
কর
বৃদ্ধি ও ভয়াবহ টাইফুন জাপানের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করায় প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়েছে দেশটির।
খবর এএফপি।
গতকাল প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস জাপানে আঘাত হানার আগেই গত বছরের শেষ দিকে দেশটির জিডিপি সংকুচিত হয়েছে।
তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকে জিডিপি ১ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হতে দেখা গেছে।
গত বছর ভোক্তা করহার ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করে জাপান সরকার, যা গত বছরের অক্টোবর থেকে বাস্তবায়ন হয়েছে।
এছাড়া টাইফুন হাগিবিসের আঘাতে দেশটিতে শতাধিক প্রাণহানি ঘটে এবং ব্যাপক বন্যার শিকার হয় জাপান।
মূলত চতুর্থ প্রান্তিকে এ প্রতিকূল পরিস্থিতিরই প্রতিফলন ঘটতে দেখা গেছে।
অর্থনীতিবিদরা সর্বশেষ প্রান্তিকে ১ শতাংশের কাছাকাছি সংকোচনের পূর্বাভাস করলেও এতটা দুর্বল পরিসংখ্যান আশা করেননি।
নরিনচুকিন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান অর্থনীতিবিদ তাকেশি মিনামি বলেন, চতুর্থ প্রান্তিকের পরিসংখ্যান একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না।
একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অর্থনীতিতে আঘাত হেনেছে, অন্যদিকে প্রভাব প্রশমনে সরকারের পদক্ষেপ সত্ত্বেও কর বৃদ্ধির পর ভোক্তা আস্থা উল্লেখযোগ্য হারে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
গতকাল চার প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধি পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।
এর
মধ্যে চতুর্থ প্রান্তিকে ২০১৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের পর সবচেয়ে বড় সংকোচন দেখা গেছে।
সে
সময় জাপানের অর্থনীতি ১ দশমিক ৯ শতাংশ সংকুচিত হয়।
পাঁচ প্রান্তিক পর ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে জাপানের বেসরকারি ব্যয়ে প্রথম পতন দেখা গেছে।
চতুর্থ প্রান্তিকে বেসরকারি ব্যয় কমেছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ।
এদিকে নগদহীন পেমেন্ট ব্যবস্থার ফলে বিনিয়োগ শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও কারখানা ও সরঞ্জাম ব্যয় কমেছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।
বর্তমানে অর্থনীতিবিদরা জাপানের অর্থনীতির ওপর সম্প্রতি চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন।
এরই মধ্যে জাপানি কোম্পানিগুলোর ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যক্রম ও পর্যটনের ওপর ভাইরাসের প্রভাব পড়তে দেখা গেছে।
মিনামি বলেন, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে জাপানের প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসার কেবল ‘শূন্য’ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় বেসরকারি ব্যয় বাড়ার কথা থাকলেও আগামী মাসগুলোয় তা কতখানি পুনরুদ্ধার হবে, সেটা ভাইরাসের বিস্তারের ওপর নির্ভর করছে।
এছাড়া চীন থেকে যন্ত্রাংশের চালান বিলম্বিত হওয়ার কারণে সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন তৈরি হতে পারে, যা রফতানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
মিনামি আরো বলেন, জাপানের অর্থনীতি টানা দ্বিতীয় প্রান্তিকে সংকুচিত হওয়ার ‘সম্ভাবনা’ রয়েছে, যা মূলত ‘মন্দা’ হিসেবে ধরা হয়।
এদিকে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রোববার জাপানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কাত্সুনবু কাতো জনগণের কাছে জনাকীর্ণ স্থান উপেক্ষা করার এবং ‘অপ্রয়োজনে
সমবেত’ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের পুনরুদ্ধারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না বলে সুমি ট্রাস্টের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নাওয়া ওশিকুবো মনে করছেন।
তিনি বলেন, ভাইরাসের বিস্তার সত্ত্বেও প্রথম প্রান্তিকে বহিঃস্থ চাহিদা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।
ফলে প্রথম প্রান্তিক ও তার পরেও আমরা ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির দেখা পেতে পারি।
এছাড়া কর অব্যাহতির প্রভাবে অভ্যন্তরীণ চাহিদাও পুনরুদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে টোকিও অলিম্পিকের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি।
সন্দেহাতীতভাবেই জাপানের অর্থনীতিতে এ ক্রীড়া আয়োজনের উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।