সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন

বরাদ্দ প্রদানে খারাপ অঞ্চলকে গুরুত্ব দেয়া হোক

আধুনিক যুগে উন্নয়নের একটি প্রধান শর্ত হয়ে উঠেছে সড়ক অবকাঠামো যে দেশে সড়ক অবকাঠামো যত শক্তিশালী, পণ্য বা মানুষ যত সহজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচল করতে পারে, সে দেশে উন্নয়ন তত বেশি গতি পায় কয়েক বছর ধরে চার লেন, ছয় লেন করাসহ বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি মহাসড়ক উন্নয়নে ব্যাপক প্রচেষ্টা দেখা গেলেও সামগ্রিকভাবে সড়ক নেটওয়ার্ক রক্ষায় ততটা মনোযোগ দেখা যায় না তার প্রতিফলন দেখা যায় সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের বরাদ্দের বৈষম্যে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খারাপ অঞ্চলে বরাদ্দ কম, ভালো অঞ্চলে বেশি আবার বরাদ্দ হলেও নির্মাণকাজের তদারকি যথাযথ না হওয়ায় কাজ মানসম্মত হয় না ফলে মেরামত বা নির্মাণ করা সড়কগুলো স্থায়ী হয় না কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই সড়কগুলোয় ভাঙন ধরে বিশেষজ্ঞরা সড়কের দুরবস্থার জন্য যে কারণগুলো চিহ্নিত করেছেন, তার মধ্যে আছে অর্থ বরাদ্দে বৈষম্য, দেরিতে কাজ শুরু করা, রাজনৈতিক চাপে অযোগ্য ঠিকাদার নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অতিরিক্ত ওজনের বা অতি ভারী যানবাহন চলাচল, ঠিকাদার-প্রকৌশলী সিন্ডিকেটের লাগামহীন দুর্নীতি এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির অভাব

বর্তমান সরকার দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ অনেক মেগা প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে কিন্তু দেশের সামগ্রিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা যদি এভাবে ভেঙে পড়ে, তাহলে জনগণ এসব মেগা প্রজেক্টের সুফল থেকে বঞ্চিত হবে তাই বিদ্যমান সড়ক অবকাঠামোর চলাচলযোগ্যতা অটুট রাখার ওপর আরো জোর দিতে হবে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হলো, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পরও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল কাটেনি বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট-২০১৯ প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক অবকাঠামোর মানের ভিত্তিতে প্রণীত সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় নেপাল ছাড়া অন্য সব দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ১০০-এর মধ্যে ৩৫ দশমিক , আর নেপালের ২৭ শ্রীলংকার স্কোর ৪৬ দশমিক , ভারতের ৫৭ দশমিক পাকিস্তানের ৪৯ দশমিক সামগ্রিকভাবে অবকাঠামো বিবেচনায় ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম

নেপালের অধিকাংশ ভূমি পাহাড়ি, ফলে সেখানে টেকসই সড়ক নির্মাণ করা কঠিন কিন্তু বাংলাদেশে তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া প্রায় পুরোটাই সমতল সেক্ষেত্রে যদি সড়ক ব্যবস্থার অবনতি ঘটে, তার দায় সওজ বিভাগ কোনোভাবে এড়াতে পারে না সড়ক নির্মাণ সংস্কারে দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়টি এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক নির্মাণে প্রয়োজনীয় অনেক শর্তই সংশ্লিষ্টরা মানেন না সড়কের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে যথার্থই বলা হয়েছে, সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়নে শুধু বেশি বিনিয়োগ করলেই চলবে না, বিদ্যমান অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণেও মনোযোগী হতে হবে প্রতি বছর দুই ঈদের আগে বর্ষার মৌসুমে সড়ক সংস্কারের কাজ বেশি হয় এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ সময়মতো অর্থায়ন না হওয়ার অজুহাত দেয়, যা গ্রহণযোগ্য নয়

প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণ ব্যয় অনেক বেশি সরকারের দাবি, জমি নিচু অধিগ্রহণ ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে নির্মাণ খরচ বেশি পড়ে তাদের যুক্তি আংশিক সত্য হতে পারে, পুরো সত্য নয় বাংলাদেশে অধিগ্রহণ করা জমির দাম কিছুটা বেশি হলেও শ্রম অনেক সস্তা নির্মাণের জন্য দেশী উপকরণও তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায় তাই সড়ক কিংবা সেতুর নির্মাণ ব্যয় অস্বাভাবিক বেশি হওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই

বরাদ্দ প্রদানে বা বণ্টনে বৈষম্য বাংলাদেশে নতুন নয় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা যে গুরুত্ব পায়, তাও নতুন নয় তবে এবার দলীয় কিন্তু প্রভাবশালীদের প্রাধান্য বেড়েছে ফলে সড়ক ভালো নাকি মন্দ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কার এলাকা আমরা চাইব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আলোচ্য জরিপটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বরাদ্দ বণ্টনে আরো সতর্ক হবে পাশাপাশি সওজ অধিদপ্তরের সক্রিয়তা প্রত্যাশিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন