মানবদেহের পরিবেশবান্ধব বাণিজ্যিক সমাধি

বণিক বার্তা অনলাইন

বেশিরভাগ ধর্ম ও সংস্কৃতিতে মৃত্যুর পর মরদেহ সমাধিস্থ করার রীতি প্রচলিত। অবশ্য ভস্মীভূত করার প্রচলনও রয়েছে। মানুষের মরদেহ সমাধিস্থ করলে ধীরে ধীরে সেটি পচে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এসময়টিতে প্রচুর পরিমানে গ্রিনহাউস তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান ‘হিউম্যান কম্পোস্টি’ নামে একটি প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছে, যেটি অধিকতর পরিবেশবান্ধব বলে দাবি করছে। শিগগিরই তারা বাণিজ্যিকভিত্তিতে এ উদ্যোগ শুরু করবে।

মৃত্যুর পর পরিবেশের ক্ষতি না করে উল্টো নতুন জীবনের লালনপালনের সুযোগ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ‘রিকম্পোজ’। মার্কিন এ প্রতিষ্ঠানটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ওয়াশিংটনে কার্যক্রম শুরু করবে। বিশ্বে তারাই প্রথম মানুষের মৃতদেহকে সমাহিত করার পাশাপাশি দ্রুত কম্পোস্টে পরিণত করার প্রক্রিয়াটি বাণিজ্যিকভাবে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।

মানুষ মরে গেলে পচে যায়। পচনের আগেই তাই মৃতদেহকে সমাহিত করা হয়। একটি মরদেহ পচে যাওয়ার সময় বিপুল পরিমান গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন হয়। ‘হিউম্যান কম্পোস্টি’ প্রক্রিয়ায় এটি ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়। এই  

প্রক্রিয়ায় একটি বদ্ধ পাত্রে কাঠের কুচি, আলফালফা ঘাস এবং খড় বিছিয়ে মরদেহটি রাখা হয়। এতে দেহের কমল টিস্যুগুলো মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে পুরোপুরি কম্পোস্ট হয়ে যায়। ফলে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমান অনেকখানি কমে যায়। 

কম্পোস্ট তৈরি হওয়ার পর সমাধিগুলো গাছ রোপণের উপযুক্ত হয়। মানুষ মারা যাওয়ার পরেও পরিবেশ রক্ষায় এভাবেই ভূমিকা রাখার সুযোগ পেতে পারে। এমনটাই  বলছেন ‘রিকম্পোজ’ এর প্রতিষ্ঠাটা ক্যাটরিনা স্পেড। তিনি বলেন, এই পৃথিবী আমাকে সারা জীবন রক্ষা করেছে, লালনপালন করেছে। এর বিনিময়ে অবশ্যই কিছু প্রতিদান দেয়া উচিত। ‘হিউম্যান কম্পোস্টি’ প্রক্রিয়া সে অর্থে যৌক্তিক ও সুন্দর।

এরই মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ তাদের নিউজলেটারে স্বাক্ষর করেছেন। মৃত্যুর পর তারা ‘হিউম্যান কম্পোস্টি’ প্রক্রিয়ায় সমাহিত হয়ে পরিবেশ রক্ষায় অংশ নিতে চান।

ক্যাটরিনা ডিকম্পোজিং এবং রিকম্পোজিং এর মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য দেখান। তিনি বলেন, রিকম্পোজিং-এ দেহ কম কার্বন নিঃসরিত করে সহজে ও দ্রুত জৈব সারে পরিণত হয়। ডিকম্পোজিং-এর বেলায় এতো দ্রুত সম্ভব হয় না। এটি অত্যন্ত ধীর প্রক্রিয়া।

শিল্পীর আঁকা হিউম্যান কম্পোস্টি প্রযুক্তির একটি সমাধিক্ষেত্র

প্রক্রিয়াটি সোজাসাপটা মনে হলেও কৌশলটি নিখুঁত করতে বৈজ্ঞানিক গবেষণাই চলেছে চার বছর। ক্যাটরিনা এই কাজটি দিয়েছিলেন মাটি বিজ্ঞানী অধ্যাপক লিন কার্পেন্টার বোগসকে। ওয়াশিংটনে প্রাণীদেহের পচন একটি সুপ্রতিষ্ঠিত চর্চা। অধ্যাপক কার্পেন্টার বোগসের কাজ ছিল এটি মানুষের বেলায় কাজে লাগানো। তিনি দেখলেন এতে মরদেহের তাপমাত্রা ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে এতে পরিবেশগত নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

রিকম্পোজিং এই বছরের শেষের দিকে ব্যবসা শুরু করবে। যে কেউ এতে অংশ নিতে পারেন তবে প্রক্রিয়াটি কেবল ওয়াশিংটনেই বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কলোরাডোতে এর অনুমতি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ক্যাটরিনার বিশ্বাস, বিশ্বব্যাপী এটি জনপ্রিয় হবে।

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন