মাত্র ১২ লাখ লোক ট্যাক্স দেয়, এটা লজ্জার : দুদক চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে বর্তমানে ২০ লাখ লোক ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেন। আর ১২ লাখ লোক ট্যাক্স দেন। এই সংখ্যাকে জাতীয় লজ্জা বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান . ইকবাল মাহমুদ। গতকাল বিসিএস (কর) একাডেমি আয়োজিত দুদক কর্মকর্তাদের আয়কর আইন বিধানাবলি সংক্রান্ত বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্স উপ-কর কমিশনারগণের রিফ্রেশার্স প্রশিক্ষণ কোর্স-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেন।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করার অর্থ হচ্ছে আপনি দেশের মানুষ। মানুষ টাকা ঘরে রেখে দেয়। কখনো বাসায় সার্চিং হয় না। তবে ইদানীং হচ্ছে। দুদক-এনবিআরের মধ্যে আমরা লিংকআপ করতে পারছি না। এনবিআর কেন অটোমেশনে যাচ্ছে না, তাও জানি না। অটোমেশন হচ্ছে হচ্ছে বলেও হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমি জানি না কর কর্মকর্তাদের কেন গ্রেফতার করার ক্ষমতা নেই। বর্তমান আইন অবশ্যই পরিবর্তন হওয়া উচিত। কর কর্মকর্তাদের সিজ অ্যারেস্ট করার ক্ষমতা থাকা উচিত।

যার জাতীয় পরিচয়পত্র থাকবে তার ট্যাক্স ফাইল থাকবে বলে মন্তব্য করেন ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, আয় থাকুক আর নাই থাকুক, জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে সবার ট্যাক্স ফাইল থাকবে। আমি ট্যাক্স বৃদ্ধির পক্ষে না। বরং সরকারকে বলেছি ট্যাক্স কমান। দেশের মালিক জনগণ। তাদের হক যেন কেউ মেরে না খায়।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যারা ঘুষ খায়, সেটা ভিক্ষার শামিল বলে মনে করেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, জোর করে কেউ টাকা পকেটে দিয়ে যায় না। ঘুষ না চাইলে তো কেউ দেবে না। চাইতে হলে হাত পাততে হয়। আর হাত পেতে ঘুষ নেয়া ভিক্ষা একই।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, যার ট্যাক্স দেয়ার কথা সেটা যদি সে না দেয় তাহলে দুদক আইনে তা আত্মসাৎ বলে গণ্য হবে। আর আত্মসাৎ করা দুর্নীতি। কারণ সেটা জনগণের টাকা, জনগণের হক। তিনি বলেন, দুদক কখনো গণ্ডির বাইরে গিয়ে কিছু করতে চায় না। আমরা ট্যাক্স সংগ্রহ করি না। ব্যাংকের ঋণ তদারকিও আমরা করি না। কিন্তু ঋণ নিয়ে পালিয়ে গেলে সেটা দেখার এখতিয়ার রয়েছে দুদকের। 

ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা দুদক কর্মকর্তাদের বলেছি, আগে নিজেরা ট্যাক্স আইনটা জানেন। জালের মতো বিছিয়ে আছে আমলাতন্ত্র। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমাদের কোনো ট্যাক্স বেস নেই। এমন অনেক লোককে আমরা পেয়েছি যার কোনো ট্যাক্স ফাইল নেই, কিন্তু সে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করছে।

করের আওতা বাড়ানোর প্রসঙ্গেও কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ট্রেড লাইসেন্সধারী এবং ঢাকা চট্টগ্রামের বাড়িওয়ালাদের নিয়ে ডাটাবেজ তৈরি করুন। তাদের করের আওতায় নিয়ে আসুন। কিন্তু কর নির্ধারণের হার কমান, করের আওতা বাড়ান। রাষ্ট্র কাউকে অবৈধভাবে আয় করার সুযোগ দেবে না। যারা ট্যাক্স ফাঁকি দেবে তাদের ব্যাপারে সক্রিয় থাকবেন। অসত্ভাবে অর্থ উপার্জন করেছে কিনা দেখবেন। যারা কর ফাঁকি দেয়, তারা প্রকৃতপক্ষে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করছে। যে কর দেয় না সে দুর্নীতিবাজ। এটা জনগণের টাকা। ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা কোনো সৎ ব্যবসায়ীকে হয়রানি করতে চাই না। বরং তাদের সুবিধা, উন্নতিতে সহযোগিতা করতে চাই। বিনিময়ে তারা ট্যাক্স দেবেন।

এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন) আরিফা শাহনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিসিএস কর একাডেমির মহাপরিচালক লুতফুল আজীম, দুদকের মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা) একেএম সোহেল, এনবিআর সদস্য (করনীতি) আলমগীর হোসেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন