এছাড়া
বিদেশে অর্থ পাচারের
মতো ধ্বংসাত্মক দুর্নীতি
করে ভবিষ্যতে কেউ
বিদেশে পাড়ি জমালে
তাকে অর্থ পাচার
মামলায় দেশে তলব
করে অথবা তার
অনুপস্থিতিতে
বিচার করে বিদেশকে
সতর্ক করে দেয়া
হবে না—এমন
কথা নিশ্চয় করে
বলা যায় না।
কারণ দেশের স্বার্থে
একদিন হয়তো আমাদের
সরকারকে
সেদিকেই
এগোতে হবে। অবশ্য
দুর্নীতির
বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের
ব্যাপারে
সরকারের
বর্তমান
কঠোর অভিযানও তেমন
ইঙ্গিতই
দেয়, যা নিঃসন্দেহে
সরকারের
ভাবমূর্তি
বাড়াচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশের ব্যাংক
লুটেরাদেরকে
বিদেশের
সরকার সহজে বিশ্বাস
করে রাজনৈতিক আশ্রয়ের নামে
আজীবন প্রতিরক্ষা দিয়ে
তাদের দেশ তথা
অর্থনীতিকে
বিপদের ঝুঁকিতে ফেলতে
চাইবে বলে মনে
হয় না। কারণ
এসব মানববেশী দানবসদৃশ
ব্যক্তির
লোভ একদিন-না
একদিন বিদেশের ক্ষতি
করে নিজেদের লাভ
বাড়াতে চাইবেই। তাই
আন্তঃদেশের
নিরাপত্তার
স্বার্থে
সংশ্লিষ্ট
আন্তর্জাতিক
আইনও একদিন কঠোর
হবে। তাই এ
দেশের অসাধু অর্থ
পাচারকারীদের
সুদিনের
কাউন্টডাউন
হয়তো শুরু হয়েছে।
এছাড়া
একদিকে এ দেশের
মানুষ ‘রিফিউজি’ হয়ে
বিদেশে তৃতীয় শ্রেণীর
নাগরিক হিসেবে নানা
বৈষম্যের
চাপা অশান্তিতে ভুগবে,
অন্যদিকে
বিদেশের
কঠোর শৃঙ্খলার ভয়ে
আইন ভেঙে সুবিধা
নেয়ার দুঃসাহসী অভিজ্ঞতা
বুকে চেপে তারা
তা কাজে লাগিয়ে
ফায়দা না লুটে
বেশিদিন
চুপচাপ বসে থাকবে—এমনটি হয়তো
হবে না। তাই
বিদেশ কখনই স্বদেশের
চেয়ে ভালো নয়।
দেশী
ব্যাংকিংয়ের
বিষয়ে
আবারো
বলতে
হয়,
পেশাদার
ব্যাংকারদের
ব্যাংকিংয়ের
সুফল
ও
কুফল
সম্পর্কে
ব্যাংকের
মালিকপক্ষকে
বোঝানো
অসম্ভব
কাজ
নয়।
কারণ
অনিয়মিত
ব্যাংকিংয়ে
অসৎ
টার্গেট
পূরণ
হলেও
তা
টেকসই
হয়
না।
এমন
এথিক্যাল
ব্যাংকিংয়ের
বক্তব্যকে
মুষ্টিমেয়
অসৎ
ব্যাংক
মালিক
তথা
কর্মী
ভাষণ
ভেবে
পাত্তা
দেবেন
না।
কারণ
তারা
যৌথভাবে
ব্যাংকের
পর্ষদ
সভা
ও
বার্ষিক
এজিএমকে
কৌশলে
ম্যানেজ
করে
নিজেদের
অন্যায্য
পাওনা
সহজে
আদায়
করে
নিতে
পারেন।
এতেই
ব্যাংকের
ক্ষতি
হয়,
যা
জাতীয়
অর্থনীতিকে
অধিক
বেকায়দায়
ফেলতে
পারে।
তবে
ব্যাংকের
চুক্তিভিত্তিক
এমডিরা
শেষ
বয়সে
অতিরিক্ত
হিসেবে
পাওয়া
নিজেদের
মোটা
প্যাকেজের
চাকরির
তোয়াক্কা
না
করলে
তারা
অলিখিত
চাপের
ফাঁকা
ভয়কে
পেশাদারিত্ব
দিয়ে
সামলাতে
পারেন
এবং
এটা
করা
সম্ভব।
তবে
ব্যাংকারগোষ্ঠীর
দৃঢ়
একতা
ব্যাংকিংয়ের
সব
অনিয়ম,
দুর্বলতা
দূর
করতে
সক্ষম
হতে
পারে
এবং
তাতে
ব্যাংকারদের
চাকরি
নিরাপদ
থাকতে
পারে।
কারণ
দেশের
বলবৎ
আইনে
‘ব্যাংকার
ছাড়া
কেউ
ব্যাংকের
এমডি
হবেন
না।
আবার
পেশাদার
ব্যাংকার
ছাড়া
ব্যাংক
বাঁচবে
না।’
তাই
জোর
দিয়ে
বলা
যায়
সৎ
পেশাদারিত্ব
প্রকৃত
পেশাদারের
চাকরি
রক্ষা
করতে
তথা
ব্যাংককে
টিকিয়ে
রাখতে
অদ্বিতীয়
সহায়ক
শক্তি
হিসেবে
কাজ
করতে
পারে।
এটি
সত্য,
ব্যাংক
বাঁচলে
ব্যাংকারগোষ্ঠী
বংশপরম্পরায়
এর
সুবিধা
ভোগ
করতে
পারবে।
আবার
ব্যাংকের
মালিকপক্ষও
তাদের
বিনিয়োগের
পরিমিত
রিটার্ন
পেয়ে
পর্যাপ্ত
সামাজিক
মর্যাদা
নিয়ে
বংশপরম্পরায়
ব্যাংকিং
জগতে
টিকে
থাকতে
পারবে।
কিন্তু
আলোচিত
দুর্নীতির
কারণে
ব্যাংকের
অপূরণীয়
ক্ষতি
হলে
মালিক
ও
কর্মী
উভয়
পক্ষই
বিপুলভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত
হবে।
কারণ
গুনে
গুনে
ঘরে
তোলা
অবৈধ
আয়ের
টাকা
আপন
ভেবে
অতিগোপনে
রাখলেও
আবার
তা
গুনে
গুনেই
বের
করে
দিতে
হবে
রোগবালাই,
দুর্ঘটনা,
মামলা-হামলা বা অন্যসব আকস্মিক
বিপদ-আপদ ইত্যাদি
দুর্বিপাক
সামাল
দিতে।
তখন
আলমারি,
সিন্দুক,
দেয়াল
অথবা
মেঝের
মধ্যে
গর্ত
খুঁড়ে
বানানো
গোপন
টাঁকশাল
এবং
বালিশ-তোশক ইত্যাদি
ভর্তি
অবৈধ
টাকা
সব
শেষ
হয়ে
যাবে।
অবশেষে
ঋণগ্রস্ত
হয়ে
পড়তে
হবে।
আবার
সন্তানদের
সুশিক্ষার
বদলে
সম্পদে
মুড়িয়ে
দেয়া
হলে
টাকার
গরমে
হয়
তারা
বিপথগামী
হবে,
না-হয় সেই সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের
হাতে
অকালে
প্রাণ
হারাবে।
তাই
দুর্নীতির
সপক্ষে
দু-একটি ব্যতিক্রমী
নজির
দেখিয়ে
তাকে
সমর্থন
দেয়া
যাবে
না।
কারণ
‘পাপের
ধন
প্রায়শ্চিত্তে
যায়’। তাই সত্ভাবে
বলা-চলার বিকল্প নেই। তবে এমনটি করতে অটুট ‘মনোবল’ ও দৃঢ় সংকল্প লাগে।
উল্লিখিত
মনোবল
কথাটি
অতি
তাত্পর্যপূর্ণ
ও
মূল্যবান।
মনোবল
শব্দের
অর্থ
দাঁড়ায়
মনের
বল।
‘মন’
ও
‘বল’
এ
দুটি
শব্দের
মধ্য
থেকে
মন
শব্দটির
ওপর
বিশেষ
গুরুত্ব
দিয়ে
বলা
যায়
মানবজীবনে
এর
অবস্থান
সবচেয়ে
উঁচুতে।
কারণ
মানুষের
মূল
চালিকাশক্তি
হচ্ছে
এই
মন।
মনই
মানুষের
অন্যসব
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
অর্থাৎ
হাত-পা, চোখ, নাক, কান ইত্যাদির
বলিষ্ঠ
নিয়ন্ত্রক
বা
বলা
যায়
রিং-মাস্টার।
কথাটির
মাহাত্ম্যের
প্রমাণে
বলা
যায়,
মানুষ
কোনো
বিষয়ের
দিকে
অপলক
তাকিয়ে
থাকলেও
অনেক
সময়
তা
দেখে
না
বা
শুনে
না।
এমনটি
যেকোনো
লোকের
বেলায়
ঘটতে
পারে
যখন
তার
মন,
চোখ
এবং
সেই
কাজ
সম্পৃক্ত
অন্য
অঙ্গ
বা
প্রত্যঙ্গ
নিবেদিত
হয়ে
কোনো
কাজের
সঙ্গে
একজোট
না
হয়।
তাই
বলতে
হয়,
দেহতত্ত্বের
বেলায়
সামষ্টিক
ছাড়া
কোনো
একক
শক্তি
পুরামাত্রায়
কাজ
করে
না
বলে
সেই
কাজটি
ক্ষতিগ্রস্ত
হয়।
আবার
লিডার
বা
মন
বাদে
একাধিক
অঙ্গ
একজোট
হলেও
তারা
সঠিকভাবে
কাজ
করতে
পারবে
না।
কারণ
মন
বা
মস্তিষ্ক
যতক্ষণ
মানুষের
কোনো
অঙ্গকে
হুকুম
না
করে,
ততক্ষণ
সে
অঙ্গ
কাজ
করে
না।
অতএব
বলতে
হয়,
মন
মানুষের
জীবন
ময়দানে
সর্বাধিক
ক্ষমতাধর
খেলোয়াড়।
তাই
মনকে
সফলভাবে
কাজে
লাগাতে
দেহ
বা
শরীরকে
সবসময়
সবল,
সুস্থ
ও
সচল
রাখতেই
হবে।
মনের
সঙ্গে
অন্যসব
অঙ্গের
এবং
অন্যসব
অঙ্গের
ওপর
মনের
দাদাগিরি
ছাড়া
স্বাবলম্বন
সফল
হতে
পারে
না।
তাই
স্বাবলম্বনের
মতো
সফল
জীবন
দর্শনের
আঙ্গিকে
লেখা
আমার
দুটি
বই
জীবন ও মানুষ: ব্যাংক ও ব্যাংকিং
এবং
একজন ব্যাংকারের দুর্লভ অভিজ্ঞতার
পাতায়
সুস্থ
থাকার
১১টি
অব্যর্থ
উপাচার
দেয়া
হয়েছে,
যা
প্রতিদিন
অনুশীলন
করলে
মানুষ
সুস্থ
না
থেকে
পারে
না।
সংক্ষেপে
বলা
যায়,
‘তনু’
ও
‘মন’-কে গভীরভাবে
নিবিষ্ট
করিয়ে
নিজেকে
স্বাবলম্বী
করতে
পারলে
সব
কাজে
সফল
হওয়া
যায়।
তাই
স্বাবলম্বনের
তাগিদে
নিজের
মন
তথা
শরীরকে
প্রস্তুত
করা
আবশ্যক।
অতএব
বলা
যায়,
অবলম্বন
নয়,
স্বাবলম্বন
বা
‘সেলফ
হেল্প’ই মানুষের
রক্ষাকবচ।
এখন
জনপ্রিয়
ফুলের
উদাহরণ
টেনে
বলতে
হয়,
ফুলদানিতে
ফুল
মানায়,
কাঁটা
নয়।
তাই
তো
কাঁটা
ছেঁটে
ফুলকে
দানিতে
সাজানো
হয়
তার
সৌন্দর্যে
ঘরের
শোভা
বাড়াতে
এবং
এর
মনোহরী
গন্ধে
মানুষের
মন
মাতাতে।
মানুষ
চাইলে
ফুলের
মতো
নিজেকে
অন্যের
কাছে
গ্রহণযোগ্য
করে
তুলতে
পারে
শুধু
ভোগের
পরিবর্তে
ত্যাগের
মহিমা
দিয়ে।
মনকে
স্থির
এবং
দেহকে
সমন্বিত
করে
স্বনির্ভর
হতে
পারলে
মানুষ
স্বচ্ছন্দে
চলতে
পারে।
জানা
মতে,
উন্নত
বিশ্বে
স্বনির্ভর
হয়ে
সব
মানুষ
নিজেদের
সব
কাজ
নিজেরাই
করে
বলে
তারা
ভালো
থাকে।
কিন্তু
আমরা
করি
না।
কারণ
সেকালের
রাজা-জমিদার তথা ব্রিটিশ
শাসন
আমাদের
পরনির্ভরতার
বিলাসী
শিষ্টাচারের
ধোঁকায়
ফেলে
পঙ্গু
বানিয়েছে।
ভারত
কিন্তু
তাদের
সেই
প্রহসনী
শিষ্টাচার
পুরাপুরি
গ্রহণ
করেনি।
তাই
তারা
তুলনামূলক
ভালো
আছে।
কিন্তু
এ
দেশে
আমরা
চতুর্থ
শ্রেণীর
কর্মচারী
তথা
‘হোম
স্টাফ’
এবং
গাড়িচালক,
পিয়ন
ইত্যাদি
লোকের
হাতে
জিম্মি
হয়ে
গেছি।
তাদের
কাজের
শারীরিক
কষ্টের
চেয়ে
সেই
কাজে
আমাদের
স্ট্যাটাসের
অসম্মানজনক
কাতরতা
আমাদের
অধিক
বিপর্যস্ত
করে।
তাই
তো
দিশেহারা
হয়ে
তেমন
খোঁজখবর
না
করে
হুট
করে
অপরিচিত
কাউকে
কাজে
নিয়োগ
দিয়ে
থাকি
এবং
তাদের
ওপর
নির্ভর
করে
সব
ছেড়ে
দিই।
ফলে
অনেক
সময়
তাদের
হাতে
আমাদের
নির্মমভাবে
খুন
হওয়ার
মতো
ধারাবাহিক
খবর
হতে
হয়।
তবে
মানুষ
জন্মের
পর
থেকে
অন্যের
হাত
ধরে
বেড়ে
ওঠায়
জীবনে
অবলম্বন
খোঁজে,
যা
গুরুত্বপূর্ণ
পারিবারিক
বন্ধনে
রূপ
নেয়।
এমন
বন্ধনকে
অটুট
রাখতে
সবার
সহযোগিতার
হাত
প্রসারিত
করা
উচিত।
তাতে
কাজ
পাওয়ার
সুযোগ
এবং
করার
ক্ষমতা
বাড়ে।
তাই
বলা
যায়,
স্বাবলম্বী
টিমওয়ার্কের
আরেক
নাম
সফলতা।
অতএব,
ব্যাংকিং
খাতের
দুর্বল
অবস্থা
কাটাতে
সেলফ
হেল্প
বা
স্বাবলম্বনযুক্ত
টিমওয়ার্ক
জোরদার
করা
প্রয়োজন,
যাকে
বৈজ্ঞানিক
ভাষা
বা
ব্যাংকিং
নামাবলি-পরিভাষার
আবরণে
গুড
গভর্ন্যান্স
বলা
যায়।
এটিই প্রকৃত
‘ব্যাংক
সংস্কার’। বর্ণিত সংস্কার
বিচ্ছিন্নভাবে
না
করে
একটি
‘স্বাধীন
ব্যাংক
কমিশনের’
সরাসরি
নিয়ন্ত্রণে
এবং
তত্ত্বাবধানে
পরিপূর্ণ
বিজনেস
প্ল্যানের
আওতায়
করা
উত্তম।
কারণ
প্রস্তাবিত
ব্যাংক
কমিশনের
প্রধানসহ
সব
লোকবল
অবশ্যই
বাণিজ্যিক
ব্যাংকিংয়ে
দক্ষ,
অভিজ্ঞ,
সৎ,
অবসরী
তথা
সবল-সক্ষম কর্মকর্তা
হবেন।
তাই
তাদের
সংস্কার
প্ল্যান
ব্যর্থ
হবে
না।
তারা
সেলফ
হেল্পের
অনুসারী
ও
অনুগামী
হবেন।
জীবনসায়াহ্নে
এসে
তারা
কোনোভাবেই
অসৎ
ও
ভিতু
হবেন
না।
কিছু
ভালো
করার
শেষ
সুযোগ
তারা
কোনোক্রমেই
হেলায়
হারাবেন
না।
তাই
বলতে
হয়—সেলফ হেল্প ইজ দ্য বেস্ট হেল্প অর্থাৎ স্বাবলম্বনই
সৌভাগ্যের
প্রসূতি।
(শেষ)
রবিউল হোসেন: সাবেক
ব্যবস্থাপনা
পরিচালক
সোনালী
ব্যাংক