শিপ ব্রেকিংয়ের পাঁচ প্রতিষ্ঠান

ভাঙার অনুমোদন নিয়ে গোপনে জাহাজ নির্মাণ!

দেবব্রত রায়, চট্টগ্রাম ব্যুরো

জাহাজ ভাঙা শিল্পে বিশ্বের শীর্ষ দেশ এখন বাংলাদেশ সম্প্রতি আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থা     শিপ ব্রেকিং প্লাটফর্মের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া হয় তবে দেশের শিপইয়ার্ডগুলোতে বিদেশ থেকে আমদানি করা স্ক্র্যাপ জাহাজ ভাঙার লাইসেন্স দেয়া হলেও নিয়ম লঙ্ঘন করে অনেক ইয়ার্ডে নতুন জাহাজ নির্মাণ করা হচ্ছে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিতে পরিত্যক্ত জাহাজের অব্যবহূত যন্ত্রাংশ দিয়ে বানানো হচ্ছে এসব নৌযান এতে নৌপথে ঝুঁকি বাড়ছে যেটা সরাসরি আইনের লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠানটি বলছে, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে আমদানি করা পুরনো জাহাজ কাটার জন্য, নতুন জাহাজ নির্মাণের জন্য নয় লাইসেন্স ছাড়া যেকোনো সাইজের নতুন জাহাজ কেউ নির্মাণ করতে চাইলে সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি

শিপইয়ার্ডগুলোতে নতুন জাহাজ নির্মাণ হচ্ছে এমন চিত্র উঠে এসেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার পাঁচটি ইয়ার্ডে নতুন জাহাজ নির্মাণের কাজ চালানো হচ্ছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে এসব ইয়ার্ডের মধ্যে মেসার্স এইচএ মান্নান স্টিল, মেসার্স ক্রিস্টাল শিপার্স লিমিটেড, মেসার্স ওশান ইস্পাত, মেসার্স জিরি সুবেদার স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড এই চারটি শিপইয়ার্ডে সরাসরি পুরনো স্ক্র্যাপের সহায়তায় বার্জ জাহাজ তৈরি করা হচ্ছে অন্যদিকে মেসার্স আরএ শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে সরেজমিন প্রমাণ না পেলেও সেখানে গোপনে নতুন জাহাজ নির্মাণ হচ্ছে বলে ধারণা করছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শকরা

সম্প্রতি স্ক্র্যাপ জাহাজ বিভাজনকারী শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে অনুমোদনহীনভাবে জাহাজ নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনার দায়ে অভিযুক্ত চার ইয়ার্ডের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট মামলা দায়ের করার জন্য সুপারিশ করেন সরেজমিন পরিদর্শন করা দুই পরিদর্শক বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ (সংশোধিত ২০০২), অনুসারে মামলার সুপারিশ করা হয়

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শকরা জানান, লোকবল সংকটের সমস্যা থাকলেও আমরা নিয়মিত শিপইয়ার্ডগুলো পরিদর্শন করে থাকি তবে আমাদের কাছে তথ্য আসে যে, মালিকরা তাদের ইয়ার্ডে পুরনো স্ক্র্যাপের সাহায্যে নতুন জাহাজ গোপনে তৈরি করে সেগুলো ব্যবহার করছে

পরিদর্শকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মেসার্স  এইচএ মান্নান স্টিলে আট-নয় বছর ধরে কোনো স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটা না হলেও পুরনো জাহাজের প্লেট ব্যবহার করে বার্জ নির্মাণ করে মালিক অন্য জায়গায় নিয়ে ব্যবহার করছে এদিকে মেসার্স ক্রিস্টাল শিপার্স লিমিটেডের জাহাজ নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে অন্যদিকে মেসার্স ওশান ইস্পাত ইয়ার্ডে একটি জাহাজ নির্মাণ শেষ করে সমুদ্রে চলাচলের জন্য ব্যবহার করছে এবং আরেকাটি নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে আর মেসার্স জিরি সুবেদার স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের ইয়ার্ডে দুটি জাহাজের নির্মাণকাজ চলছে যার মধ্যে একটি নির্মাণের শেষ পর্যায়ে, অন্যটির কাজ চলছে

সর্বশেষ মেসার্স আরএ শিপ ব্রেকিংয়ের ইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণ হচ্ছে এমন অভিযোগ থাকলেও পরিদর্শনে সেটা পাওয়া যায়নি তবে ইয়ার্ডে গোপনে বার্জ জাহাজ নির্মাণ হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা নতুন জাহাজ নির্মাণ অন্যান্য ইয়ার্ডে হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে গোপনে খোঁজ রাখছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে তারা বলছেন, এগুলোর বাইরে আরো ১০টির বেশি ইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণ হতে পারে

প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (চট্টগ্রাম অঞ্চল) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, জাহাজ ভাঙা শিল্প এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য ভিন্ন ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হয় কিন্তু কেউ জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য লাইসেন্স নিয়ে জাহাজ নির্মাণ করতে পারে না আমাদের কাছে যে প্রমাণ আছে তাতে চারটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়েই ছয়টি নতুন জাহাজ নির্মাণ করছে যেটা পরিবেশ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এমনকি তাদের কাছে বিডার (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) কোনো অনুমতিপত্র আছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেব প্রয়োজন হলে ইয়ার্ডের অনুমোদন বাতিল করার মতো সিদ্ধান্ত নিতেও পিছপা হবে না পরিবেশ অধিদপ্তর

এর আগে গত বছর ইস্পাত শিল্পের গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন খাজা স্টিলে দুটি নতুন জাহাজ এবং গোল্ডেন ইস্পাত লিমিটেডের মালিকানাধীন গোল্ডেন আয়রন অ্যালায়েন্স শিপইয়ার্ডে একটি জাহাজ নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া যায় পরবর্তী সময়ে তাদের জরিমানা করে জাহাজ নির্মাণ বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প খাত বিশ্বে শীর্ষস্থানে থাকলেও দেশে খাতে ক্রমশ জটিলতা বাড়ছে এদিকে সরকারের কর ফাঁকি দেয়ার জন্য এসব জাহাজ নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদন্ত করা উচিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন