মো. অহিদুজ্জামান রাজু,
২০০০ সালে জুনিয়র হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়
ব্যাডমিন্টন দলে খেলা শুরু করেন। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ২০১১ সাল পর্যন্ত। তিন
বছর ধরে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শাপলা আক্তার, জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের ইতিহাসে
এককভাবে ছয়বারের ট্রিপল ক্রাউন বিজয়ী। এছাড়া জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে
সাতবার সিঙ্গেল চ্যাম্পিয়ন,
নয়বার ডাবল চ্যাম্পিয়ন এবং ছয়বার মিক্সড ডাবল
চ্যাম্পিয়ন হন।
খেলাধুলার মাঠে কোচ-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক থেকেই রাজু ও শাপলার মধ্যে গড়ে উঠেছিল চমত্কার বোঝাপড়া, যা একদিন বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। ভালোবাসা দিবসে বণিক বার্তার
মুখোমুখি হয়ে এ দুজন জানান সে সম্পর্কের আদ্যোপান্ত। কথার শুরুটা করলেন
অহিদুজ্জামান রাজু। ‘শাপলা যখন জুনিয়র হয়ে প্রথম খেলতে আসে, তখনই প্রথমবারের মতো আমি ওকে দেখি। ২০০৬ সালে চট্টগ্রামে
যখন ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে গেলাম,
তখন দেখি মেয়েটি ভালো খেলছে। তখন শুধু একজন
খেলোয়াড় হিসেবেই ওকে আমার ভালো লেগেছিল। প্রেম বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টি তখনো
মাথায় আসেনি। ২০০৭ সালে যখন নিট কনসার্ন ব্যাডমিন্টন ক্লাব নামে একটি ক্লাব তৈরি
করি, তখন ওই ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল শাপলা। সেখানে কিছু
খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়েছিল,
যাদের মধ্যে ১ নম্বরে ছিল শাপলা। মূলত তখন থেকেই
সে আমার অধীনে খেলা শুরু করে। এ সময় তার খেলা ও নিয়মানুবর্তিতা দেখে মুগ্ধ হতাম।
আসলে ক্লাবের চার খেলোয়াড়ের মধ্যে শাপলা একটু আলাদা ছিল। তাকে যখন যা বলা হতো, সে ঠিক ততটুকুই করত,
একটু বেশিও না আবার একটু কমও না। ১০ মিনিট
দৌড়াতে বলেছি, অনেকের মাথায় আসত ১০ মিনিট কেন? ২০ বা ৩০ মিনিট ধরে দৌড়াই। কিন্তু শাপলা ঠিক ১০ মিনিট পরই
থেমে যেত। এ বিষয়টি ছিল ওর বিশেষ গুণ। সে সবকিছুতেই কোচ হিসেবে আমার ওপর ভরসা
রাখত। একটা পর্যায়ে খুব স্বাভাবিকভাবে এগুলোই হয়তো তার প্রতি আমাকে আকৃষ্ট করেছে।
এভাবেই ধীরে ধীরে ব্যক্তিগতভাবে তাকে ভালো লাগা শুরু।’
কথা চালিয়ে যান রাজু, ‘যদিও ভালো লাগার বিষয়টি একে অন্যকে বলা হয়ে ওঠেনি, এমনকি বিয়ের বিষয়টিও মাথায় আসেনি। পরবর্তীতে বিয়ের জন্য
পরিবার জোরাজুরি শুরু করার পর এক পর্যায়ে গিয়ে আমার মনে হলো, আমি যে ধরনের মানুষ,
যেকোনো একটা মেয়ে হুট করে এসে আমার সঙ্গে মানিয়ে
নিতে পারবে না। তখন আমি আমার মনের কথাটি আমার মাকে জানাই। মূলত দুই পরিবারের
মাধ্যমেই আমরা গাঁটছড়া বাঁধি।’
এদিকে অনুভূতি ব্যক্ত করার
জন্য খানিকটা মুখিয়ে ছিলেন শাপলা। রাজুর কথা থামিয়ে তিনিও জুড়ে দেন অতীতের সেসব
মধুর গল্প। ‘আমি ঢাকায় কী করতাম,
কার সঙ্গে মিশতাম, কে আমাকে গাইড করত—পুরোটাই পরিবারের সবার সঙ্গে শেয়ার করতাম। তাই আগে থেকেই তার ব্যাপারে বাসার
সবাই জানত যে, ছেলে হিসেবে সে অনেক ভালো। এজন্য প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে
সঙ্গে বাড়ির সবাই রাজি হয়ে যায়। যদিও প্রথমে প্রস্তাব পাওয়ার পর পরই আমি রাজি
হইনি। বাড়িতে বলে আমরা দুজনই সময় নিয়েছিলাম। তারপর নিয়মিত ফোনে কথা শুরু হয় এবং
ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।’ ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে ঘর বাঁধেন তারা।
ফিচার প্রতিবেদক