বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বড় বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতে ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব। পাশাপাশি বিদ্যু-জ্বালানি, কৃষি খাতে বড় বিনিয়োগ করবে দেশটি। এছাড়া বিভিন্ন শাখায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের আরো বেশি বৃত্তি দেবে দেশটি। দুই দেশের স্বার্থ রক্ষায় ৩১টি বিষয়ে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ-সৌদি আরব। বাংলাদেশ-সৌদি আরব যৌথ কমিশনের দুই দিনব্যাপী ১৩তম বৈঠক শেষে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষে স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ এবং সৌদি প্রতিনিধি দলের নেতা ও দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মাহির আবদুল রহমান গাসিম। স্বাক্ষরের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চুক্তির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। দুই দিনব্যাপী এ বৈঠকের আয়োজন করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)

জানা গেছে, যেসব বিষয়ে সহযোগিতা করতে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে বিদেশ, অভ্যন্তরীণ ও বিচার বিভাগীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে উভয় পক্ষই পাসপোর্ট, ওয়ার্কিং ভিসা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ভ্রমণের নথি জারি করার বিষয়ে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। এছাড়া সৌদি পক্ষ জনশক্তি সম্পর্কিত বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষ ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও মতবিনিময় কর্মসূচির জন্য বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি (বিএফএসএ) এবং প্রিন্স সৌদ আল ফয়সাল ইনস্টিটিউশন ফর ডিপ্লোম্যাটিক স্টাডিজের (পিএসএফআইডিএস) মধ্যে সমঝোতা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছে এবং প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া উভয় পক্ষ নিজ নিজ দেশের মধ্যে বিচারিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে কাজ করার জন্য আরো সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশেই মাদক নিয়ন্ত্রণ, জালিয়াতি এবং জালিয়াতির অপরাধের ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে আরো সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া উভয় দেশে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে নতুন তথ্য হালনাগাদ করবে। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানকে সৌদির সঙ্গে সমান হিসেবে বিবেচনা করার এবং তার বিপরীতে উভয় পতাকাবাহী বাহককে সবদিকেই সমান বিবেচনা করতেও জিএসিএ সম্মত হয়েছে।

সচিব মনোয়ার আহমেদ জানান, সৌদির অ্যাকোয়া পাওয়ারের সঙ্গে ১৮০ মেগাওয়াটের বিদ্যুকেন্দ্রের জন্য চুক্তি হয়েছে। শিগগিরই সৌদি আরবের বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসবেন এবং এমওইউ স্বাক্ষর হবে। দুই দেশের সম্পর্ক অন্য উচ্চতায় গেছে। আমরা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেছি। যৌথ কমিশন বৈঠক দুই বছর পর পর হয়। কিন্তু টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক চলে সবসময়ই। তাই বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়ন হয় টেকনিক্যাল কমিটির মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহির আবদুল রহমান গাসিম বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু একটা স্পর্শকাতর বিষয়। এরই মধ্যেই সৌদি আরবে কিছু রোহিঙ্গা আটক রয়েছে। অনেকে জেলও খাটছে। তাদের সাজা শেষে ফেরত পাঠানো হবে।

বৈঠকে সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে ট্রাফিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ মামলার অনলাইন জমা দেয়ার বিষয়ে সমস্যা, মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ চেক প্রদান-সংক্রান্ত সমস্যা এবং ফাঁসির আদালত থেকে নিহতের উত্তরাধিকারীর নাম এবং ফাঁসির আদালতে জমা দেয়ার মামলা সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় সৌদি পক্ষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্রঋণ, বিধিবিধান, বিজ্ঞপ্তি এবং এ বিষয়ে জ্ঞান সম্পর্কে বাংলাদেশীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সৌদি প্রতিনিধি দলকে ক্ষুদ্রঋণ সম্পর্কিত অভিজ্ঞতার জন্য সরাসরি এমআরএ এবং পিকেএসএফের সঙ্গে সাক্ষা করার অনুরোধ জানানো হয়।

বৈঠকে সৌদি পক্ষ সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষ সৌদি রফতানি কর্মসূচির (এসইপি) বাংলাদেশী ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের উপকারভোগীদের অর্থায়নের সুবিধার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। সৌদি চেম্বারের কাউন্সিলের অধীনে সৌদি বিনিয়োগকারী সংস্থা এসিডব্লিউএ পাওয়ার, আরামকো, আল-বাওয়ানী, আল জোমিয়া, ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন ও রেড সি গেট ওয়ে টার্মিনাল বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন