জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডের স্রষ্টার নাম নিশ্চয় মনে আছে? বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগলের হয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি। অ্যান্ডি রুবিন; গুগলের সাবেক এ নির্বাহীর উন্নয়নকৃত অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারের সুবাদে স্মার্টফোন বাজার আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। এক সময় গুগল ছেড়ে তিনি এসেনশিয়াল প্রডাক্টস নামে ফোন স্টার্টআপ চালু করেছিলেন। তার হাত ধরে যে স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হয়েছিল, তার সঙ্গে পাল্লা দিতে কাজ করছিল এসেনশিয়াল প্রডাক্টস। তবে না, হার্ডওয়্যার দিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ স্মার্টফোন বাজারে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি সেটি। যে কারণে গত বুধবার এক ব্লগ পোস্টে অ্যান্ড্রয়েড স্রষ্টার ফোন স্টার্টআপের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। খবর এএফপি।
২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে এসেনশিয়াল প্রডাক্টস।
গত
কয়েক বছর একাধিক মডেলের নতুন স্মার্টফোন, স্মার্ট হোম স্পিকার ও নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেমের ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৭ সালে এসেনশিয়াল প্রডাক্টসের প্রথম স্মার্টফোন বাজারে ছাড়া হয়েছিল।
বৈশ্বিক বাজারে খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি ডিভাইসটি।
অবশ্য স্মার্টফোন বাদে অন্যান্য ডিভাইস দিয়ে ভালোই পরিচিতি পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
এসেনশিয়ালের ব্লগ পোস্টে জানানো হয়, ‘এসেনশিয়াল
ফোন১’ নামে একটি স্মার্টফোনের পাশাপাশি বেশকিছু যন্ত্রাংশ বাজারে ছাড়া হয়েছে।
এছাড়া গত বছর ‘প্রজেক্ট
জেম’ কোড নামে একটি ফোন উন্মোচন করা হয়েছিল।
এর
পরই এসেনশিয়ালের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এসেনশিয়াল প্রডাক্টসের লক্ষ্য ছিল মোবাইল কম্পিউটিংয়ে নতুন উদ্ভাবন নিয়ে আসা, যা মানুষের লাইফস্টাইলের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
বৈশ্বিক প্রযুক্তি বাজারে নতুন কিছু দেয়ার চেষ্টায় ত্রুটি না থাকলেও সামনে কোনো পরিষ্কার পথ নেই।
যে
কারণে ফোন স্টার্টআপটি বন্ধ করে দেয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
এসেনশিয়াল প্রডাক্টসের ফোনে আর কোনো নিরাপত্তা হালনাগাদ মিলবে না।
তবে প্রতিষ্ঠানটির সফটওয়্যার গিটহাবে থাকবে, যাতে ডেভেলপাররা তা কাজে লাগাতে পারেন।
প্রতিষ্ঠানটির ক্রস প্লাটফর্ম মেইল সফটওয়্যার ‘নিউটন
মেইল’ আগামী এপ্রিল থেকে বন্ধ হয়ে যাবে।
অ্যান্ড্রয়েডের সহপ্রতিষ্ঠাতা অ্যান্ডি রুবিন।
২০০৫ সালে অ্যান্ড্রয়েডকে অধিগ্রহণ করে বর্তমানে অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশন নিয়ন্ত্রিত সার্চ জায়ান্ট গুগল।
পরবর্তী আট বছরে গুগলের হয়ে অ্যান্ড্রয়েডকে মুঠোফোন দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যারে রূপ দিয়েছেন অ্যান্ডি রুবিন।
এখন বিশ্বের ৮৫ শতাংশ স্মার্টফোনই অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলছে।
২০১৪ সালে গুগল ছেড়ে দেন অ্যান্ডি রুবিন।
এরপর তিনি বিনিয়োগ করেন ‘প্লেগ্রাউন্ড
গ্লোবাল’ নামের একটি উদ্যোগে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস ও অগমেনটেড রিয়ালিটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করে।
২০১৬ সালের জুনে রুবিন এক সম্মেলনে বলেছিলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরে প্রযুক্তিবিশ্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
সাধারণত একটি নতুন কম্পিউটিং প্লাটফর্ম দাঁড় করাতে ১০-১২ বছর সময় প্রয়োজন।
পরবর্তী প্লাটফর্ম হবে তথ্য ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমকে ‘মানুষ’ হয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ দান করা।
অ্যান্ডি রুবিনের স্টার্টআপের প্রথম ফোন ‘এসেনশিয়াল
ফোন১’-এ ৫ দশমিক ৭১ ইঞ্চি এলটিপিএস আইপিএস এলসিডি ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছিল।
অর্থাৎ ২০১৭ সালের আগস্টে বাজারে আসা ডিভাইসটি বেশ বড় ডিসপ্লের ছিল।
খুব পাতলা বেজেলসংবলিত সিরামিক ও ধাতব উপাদানে তৈরি কাঠামোর ফোনটিতে ন্যানো সিম ব্যবহারের সুবিধা ছিল।
অ্যান্ড্রয়েড ৭.১ নুগাটচালিত ডিভাইসটিতে অক্টা-কোর কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ প্রসেসর ছিল।
৪
গিগাবাইট র্যামের ডিভাইসটিতে ১২৮ গিগাবাইট অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ সুবিধা রাখা হয়েছিল, যা মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে বাড়ানোর কোনো সুযোগ ছিল না।
ডিভাইসটিতে এলইডি ফ্ল্যাশ সুবিধার ১৩ ও ১৩ মেগাপিক্সেলের ডুয়াল রিয়ার এবং ৮ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরা ছিল।
আধুনিক স্মার্টফোনের সব ফিচার রাখার পরও ডিভাইসটি বৈশ্বিক বাজারে সাড়া ফেলতে ব্যর্থ হয়।