সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দুর্নীতির বিরুদ্ধেও সজাগ থাকুন

বণিক বার্তা ডেস্ক

রুটিন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিদ্যমান কিছু সামাজিক অভিশাপের বিরুদ্ধে সতর্ক নজর রাখার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সমাজে মাদক, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ দুর্নীতির মতো কিছু সামাজিক অভিশাপ রয়েছে। সরকার এসব সামাজিক অভিশাপ নির্মূল করতে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে যাবে। আমি এসব বিষয়ে আপনাদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করছি। খবর বাসস আইএসপিআর।

গতকাল সকালে মিরপুর সেনানিবাসে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) ২০১৯-২০ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সমাজের বিদ্যমান সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান পরিচালনায় সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এরই মধ্যে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, মাদক দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছি। অপরাধবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। সমাজকে রক্ষা করার জন্য ধরনের অভিশাপ নির্মূল করা জরুরি। কারণ আমরা আমাদের সন্তানদের জীবন ধ্বংস করার কোনো সুযোগ দিতে চাই না।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে সারা বিশ্বের সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে চলতে পারে, তেমনই একটি আধুনিক সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। আমি সশস্ত্র বাহিনীকে এমনভাবে উন্নত করতে চাই, যাতে তারা যেকোনো দেশে যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্তি রক্ষায় কাজ করে যেতে পারে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী পৃথিবীর যেখানে কাজ করেছে, সেখানেই সুনাম অর্জন করেছে। মানবিক সেবা দিয়ে বিভিন্ন দেশে স্থানীয় মানুষের হূদয় জয় করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। 

১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লার সামরিক একাডেমিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে জাতির পিতার দেয়া ভাষণের বিশেষ কিছু অংশ উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা পেলে আমাদের ছেলেরা যেকোনো দেশের যেকোনো সৈনিকের সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারবে। আমার বিশ্বাস, আমরা এমন একটি একাডেমি সৃষ্টি করব, সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের এই একাডেমি দেখতে আসবে। আজকে এটা বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী সময় কোর্সে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় আমরা চাই আপনারাও (বিদেশী শিক্ষার্থীরা) আমাদের বন্ধু হিসেবে থাকবেন এবং সে দেশে বাংলাদেশের একজন গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনারা বাংলাদেশকে কখনো ভুলবেন না, সেটাই আমরা চাই।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ডিএসসিএসসির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. এনায়েত উল্ল্যাহ স্বাগত বক্তব্য রাখনে। তিনি বলেন, বছরের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান একটি বিশেষ তাত্পর্য বহন করে। কেননা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর এক মহতী লগ্নে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি কলেজের উন্নয়নে অনবদ্য সহযোগিতা দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য কলেজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বছর ডিএসসিএসসি ২০১৯-২০ কোর্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১২৫ জন অফিসার, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৩৪ জন অফিসার, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ২২ জন অফিসার এবং চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিয়েরালিয়ন, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, সুদান, তানজানিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা, যুক্তরাষ্ট্র জাম্বিয়া থেকে আসা ৫৪ জন অফিসারসহ মোট ২৩৫ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, ডিএসসিএসসি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যম পর্যায়ের নির্বাচিত অফিসারদের কমান্ড স্টাফ হিসেবে ভবিষ্যতের গুরুদায়িত্ব পালনে দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। শুরু থেকে পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর হাজার ২৫৩ জন অফিসার, পাঁচজন পুলিশ অফিসার ৪২টি বন্ধুপ্রতিম দেশের মোট হাজার ১৬৫ জন বিদেশী অফিসার প্রতিষ্ঠান থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ভারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. শামসুল হক, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এএমএমএম আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও, তিন বাহিনীর পিএসও, সংসদ সদস্য, শিক্ষাবিদ সামরিক-বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন