নভেল করোনাভাইরাসে মৃত ৪২৫

মোকাবেলায় ভুলত্রুটি ও ঘাটতির কথা স্বীকার চীনের

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভুলত্রুটি ঘাটতি থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছে চীন। দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটির পক্ষ থেকে গতকাল স্বীকারোক্তি দেয়া হয়। এদিকে গতকাল নিজ দেশের উহানফেরত এক নাগরিকের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে হংকং। নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের বাইরে প্রাণহানির এটি দ্বিতীয় ঘটনা। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৫ হাজার ব্যক্তির নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে প্রাণহানি হয়েছে কমপক্ষে ৪২৫ জনের। খবর বিবিসি।

প্রাথমিক অবস্থায় চীন যেভাবে প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করেছিল, তা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে অনেক। বিষয়টি স্বীকার করে নিজস্ব সংকট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটি। একই সঙ্গে কমিটির পক্ষ থেকে দেশটিতে অবৈধ বন্যপ্রাণী বিপণনের সঙ্গে জড়িতদের কঠোরভাবে দমনের নির্দেশনা জারি করেছে কমিটি। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটির অবৈধ বন্যপ্রাণীর বাজার থেকেই প্রথম ছড়িয়েছে নভেল করোনাভাইরাস।

কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুলত্রুটি সংশোধন ঘাটতি পূরণের জন্য আমাদের এখন জাতীয় সংকট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে জরুরি বিপজ্জনক পরিস্থিতি সামলানোয় আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, মুহূর্তে অবৈধ বন্যপ্রাণীর বাজার বিপণন ব্যবস্থার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কঠোর প্রয়োগ এবং শক্তভাবে দমনের জন্য তদারকি বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উহান ভাইরাস বা নভেল করোনাভাইরাসের (২০১৯-এনসিওভি; প্রকৃতপক্ষে করোনাভাইরাস কয়েক প্রজাতির ভাইরাসের একটি পরিবার, যার মধ্যে সার্স, মার্স ভাইরাসও অন্তর্ভুক্ত) সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে মারাত্মকভাবে অবহেলা করার অভিযোগ রয়েছে চীনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। সে সময় উহানের এক চিকিৎসক তার সহকর্মীদের নিয়ে সতর্ক করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় তার বিরুদ্ধে ভুল বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ ওঠে। একই সঙ্গে তার সতর্কীকরণের প্রয়াস অবৈধ কার্যক্রম আখ্যা দিয়ে থেকে বিরত থাকার জন্য হুঁশিয়ারি দেয় চীনা পুলিশ। পরবর্তী সময়ে জানুয়ারির শেষ দিকে এসে ভাইরাসটির উত্পত্তিস্থল হিসেবে বিবেচিত হুবেই প্রদেশকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলার আদেশ দেয় চীন সরকার। যদিও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

শুধু চীনের মূল ভূখণ্ড নয়, আশপাশের অন্যান্য দেশেও নভেল করোনাভাইরাস এখন মারাত্মক সমস্যার কারণ হয়ে উঠেছে। গতকালই হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ সেখানে এতে আক্রান্ত এক ব্যক্তির মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে। উহান ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে মৃত্যুর এটিই প্রথম ঘটনা। ৩৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি গত ২১ জানুয়ারি উহান গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। এর আগে চীনের বাইরে নভেল করোনাভাইরাসে একমাত্র মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল ফিলিপাইনে।

হংকংয়ে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের এতে আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত হওয়া গেছে। চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত ১৩টি সীমান্তের ১০টিই বন্ধ হয়ে করে দিয়েছে হংকং।

চীনের প্রতিবেশী অন্য দেশগুলোর মধ্যে তাইওয়ান এরই মধ্যে দুই সপ্তাহের মধ্যে চীনের মূল ভূখণ্ড ঘুরে আসা বিদেশীদের দেশটিতে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ জুয়ার কেন্দ্র ম্যাকাও সেখানকার সব ক্যাসিনো অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে কোরিয়ান সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (কেসিডিসি) ৪২ বছর বয়সী ওই নারী থাইল্যান্ডে গিয়ে সংক্রমিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিভাগও বিষয়টিতে অস্বীকৃতি জানায়নি। কারণ চীনের বাইরে উহান ভাইরাসের সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ থাইল্যান্ডেই ঘটেছে।

চীনের যেসব অঞ্চলে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, বাংলাদেশসহ অনেক দেশ এরই মধ্যে নিজ নিজ নাগরিকদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছে। নিজ দেশে ফেরত আনার পর এদের আবার সাময়িকভাবে কোয়ারান্টাইন করে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে, যাতে কেউ সংক্রমিত হলেও রোগটি ছড়িয়ে না পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে চীন থেকে ২১ বছরের কম বয়সী সব মার্কিন নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া হুবেই প্রদেশ থেকে যে কাউকে দুই সপ্তাহের জন্য কোয়ারান্টাইন করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ২০টি দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার কথা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন