বিডিএফ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

কারাগারে বসেই উন্নয়নের পরিকল্পনা করেছিলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নয়ন কোনো ম্যাজিক নয়, রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কারণেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন আসছে। তাই উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে সহায়তা প্রদানে খুব বেশি শর্তারোপ না করার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রেবাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম (বিডিএফ) ২০২০’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সরকারের উন্নয়ন চাহিদার সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের সম্পৃক্ত করতেই দুই দিনব্যাপী বিডিএফ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়ার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলো তুলে ধরা হবে এবারের সম্মেলনে। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন। ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

বিডিএফ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে কাজগুলো শুরু করেছি সেগুলো টেকসই উন্নয়নে রূপান্তর করতে চাই। সেটা করতে গেলে আর্থিক সংগতি দরকার। আশা করছি, আমাদের যারা উন্নয়ন সহযোগী রয়েছেন, তারা এগিয়ে আসবেন, সহযোগিতা করবেন। কারণ, একটা বিষয়ে কেউ যখন সফল হয়, সেখানে সাহায্য করতে তো কারো দ্বিধা থাকে না, বরং আগ্রহ বেড়ে যায়। আমরা সাধারণত সেটাই দেখে থাকি। কাজেই সেটাই হবে বলে আমরা মনে করি।

দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা মাথায় রাখতে হবে কোনো রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া কখনো কোনো দেশ উন্নতি করতে পারে না। একটি দেশকে গড়ে তোলার জন্য সেখানে যেমন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কমিটমেন্ট থাকা দরকার, তেমনি একটি পরিকল্পনা থাকাও দরকার।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর কারাবন্দি অবস্থায় উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি খসড়া করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সলিটারি কম্পার্টমেন্ট পেয়েছিলাম। একেবারে একা বন্দি একটা জায়গায়। সেই সময়টাকে আমি কাজে লাগিয়েছিলাম। আমি তখনই বসে বসে চিন্তা করেছিলাম যদি কখনো দেশ গড়ার সুযোগ পাই বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, সুপেয় পানিএই বিষয়গুলো আমরা কীভাবে করব এবং কত সালের মধ্যে কী কী করব তার একটা খসড়া আমি কারাগারে বসে প্রণয়ন করি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের সময় সেটা কাজে লেগেছিল।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্যডেল্টা প্ল্যান-২১০০প্রণয়ন করে সেটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন জলবায়ুর প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করি, তখন অনেক প্রতিশ্রুতি (উন্নত দেশের) পাই। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর সেভাবে কেউ পূরণ করে না। এজন্য জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। নিজেদের টাকা দিয়েই ফান্ড গড়েছি। তাতে সামান্য কিছু সহযোগিতা আমরা পেয়ে থাকি। তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিভিন্ন ছোট দ্বীপরাষ্ট্র, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তাদের সবারই এ সহযোগিতাটা দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগের ক্ষেত্রে মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য ড্রেজিং করে নদীগুলোর নাব্যতা বাড়াতে হবে। তাহলে বন্যার হাত থেকে দেশের মানুষকে আমরা মুক্ত করতে এবংল্যান্ড রিক্লেমেশনকরতে পারব। সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নদীপথ, রেলপথ, সড়কপথ আকাশপথসব ক্ষেত্রেই যেন যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো ত্বরান্বিত হয়, সেজন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছি।

এবারের বিডিএফ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), জাইকা, ইউএসএইড, ইউকে এইড, ভারত, চীনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন। গতকাল সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ সেফার, জাইকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনিচি ইয়ামাদা এবং এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট শিজিন চেন এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো বক্তব্য রাখেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন