ব্রহ্মপুত্র এখন মরা গরুর নদ (ভিডিও)

বাদশাহ্ সৈকত কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন হয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। ইউনিয়নে গেলেই দেখা যায়, নদের বিভিন্ন ডুবোচরে আটকা পড়ে আছে শতাধিক মরা গরু। পচা দুর্গন্ধে চলাফেরা করতে হয় নাক-মুখ চেপে। স্থানীয়রা বলছেন, যাত্রাপুর ইউনিয়ন এখন গরু চোরাচালানের অন্যতম প্রধান রুট হয়ে উঠেছে। অবৈধভাবে নদ দিয়ে ভারত থেকে পাচারের সময় অসংখ্য গরু পানিতে ডুবে ঠাণ্ডায় মারা পড়ছে। চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্যে ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র পরিণত হয়েছে মরা গরুর নদে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ভারত থেকে বৈধপথে গরু রফতানি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। কারণে সীমান্তরক্ষীদের ফাঁকি দিতে ভারত থেকে কলাগাছ বা খড়ের ভেলার সঙ্গে -১০টি করে গরু একসঙ্গে বেঁধে ভাসিয়ে দেয়া হয় ব্রহ্মপুত্র নদে। পানিতে ভাসতে ভাসতে এসব গরু ঢুকে পড়ে বাংলাদেশে। বৈধপথে রফতানি বন্ধ থাকায় ঘন কুয়াশার আড়ালে এভাবে কুড়িগ্রাম সীমান্তে ভারত থেকে গরু পাচার হচ্ছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে যেসব গরু উদ্ধার করা যায় না এবং ঠাণ্ডায় বা পানিতে ডুবে মারা যায়, সেগুলো নদে ফেলে যায় চোরাকারবারিরা।

সরেজমিনে যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর যাত্রাপুর, চিরা খাওয়া, ঝুনকার চর, অষ্টআশির চর, রলাকাটার চরসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদের দুই পাড়ের ডুবোচরের কোনটিতে ৪০টি, কোনটিতে ২০টি, আবার কোনোটিতে ১০টি করে মৃত গরু পড়ে আছে। স্থানীয়রা জানান, এক মাস ধরেই নদের বিভিন্ন স্থানে মরা গরু ভাসতে দেখা গেছে। এগুলো কেউ নিয়েও যায় না। এতে মরা গরু পচে দূষিত হচ্ছে নদের পানি।


চর যাত্রাপুরের বাসিন্দা মাঝি মো. কোবাদ মোল্লা জানান, চর যাত্রাপুরের ডুবোচরে চার-পাঁচদিন ধরে নয়টি মরা গরু আটকা পড়ে আছে। উজানের চরে আরো অসংখ্য মরা গরু আটকে আছে।

একই এলাকার বাসিন্দা মাঝি মো. শাহ্ আলম মিয়া জানান, আগে কাঁটাতারের উপর দিয়ে চাঙে করে গরু আনা হতো। এখন কড়া পাহারা গুলির ভয়ে ভারতে উজান থেকে গরুর পা বেঁধে রাতে নদে ভাসিয়ে দেয়া হয়। যেসব গরু বাংলাদেশের চোরাকারবারিরা উদ্ধার করতে পারে, সেগুলো তারা নিয়ে যায়। বাকিগুলো নদের পানিতে ঠাণ্ডায় মারা যায়। মরা গরু পচে নদের পানিও দূষিত হয়ে গেছে।

চর ভগবতীপুরের জলিল মোল্লা জানান, তার বাড়ির পাশের দুটি ডুবোচরে অর্ধশত মরা গরু পড়ে আছে। প্রতিদিনই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। মরা গরু পচে পানি যেমন দূষিত হচ্ছে, তেমনি দুর্গন্ধে বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না। আগে নদের পানি সবাই ব্যবহার করত। এখন পাড়ে আসা যায় না।

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার জানান, ইউনিয়নের অন্তত ১০-১২টি ডুবোচরে শত শত গরু আটকা পড়ে আছে। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কুড়িগ্রাম-২২ ব্যাটালিয়নের পরিচালক মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কড়া নজরদারির মাঝেও নদীপথে চোরাকারবারিরা গরু আনার সময় অনেক গরু মারা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সচেতন রয়েছি।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জানান, গরু পাচার এবং মরা গরু ভেসে থাকার বিষয়টি শুনেছি। ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ভিডিওতে দেখুন ...

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন