জেগার লেকুথ

জটিল ঘড়ির জগতের বিস্ময়কর এক নাম

ফিচার ডেস্ক

বিলাসবহুল ঘড়ির জগতের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর একটি জেগার লেকুথ, সংক্ষেপে জেএলসি। ১৮৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সুইস ব্র্যান্ড ক্ল্যাসিক টাইমপিস তৈরির জন্য পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে ব্র্যান্ডটি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ওয়াচ ক্যালিবার তৈরির জন্য বিখ্যাত। জেএলসি জটিল প্রযুক্তির ইউনিক টাইমপিস তৈরি করে থাকে। তারা বারবার বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দেয় কেন তাদেরগ্র্যান্ড মেইসনবলা হয়। তাদের উদ্ভাবনে রয়েছে রহস্যময় বিশেষ সংস্করণ মাস্টার গ্র্যান্ড ট্র্যাডিশন গাইরোট্যুরবিলন ওয়েস্টমিনস্টার পার্পিচুয়ালসহ আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জটিল ঘড়ি।

সূক্ষ্ম ঘড়ি তৈরির ক্ষেত্রে বিস্মৃত কিন্তু তুলনামূলক সাম্প্রতিক একটি ধাঁধা রয়েছে। ২০০৯ সালে ঘড়ির রাউন্ড তৈরির সময় ধাঁধাটি সামনে এসেছিল। ধাঁধাটি হলো, হাত দিয়ে ঘড়ির ডায়াল ঘুরিয়ে আনতে কত ট্যুরবিলন লাগে? উত্তরটা যেকোনো কিছুই হতে পারে, তবে সোজা নয়। আর এটি আরো কয়েকটি ফলোআপ প্রশ্ন তৈরি করেছিল। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ নোট সামনে আসে, ট্যুরবিলনকে আপনি যদিবিক্রির গল্পহিসেবে ভাবেন, তাহলে বিষয়টি সহজতর হয়। মেকানিক্যাল ওয়াচমেকিংয়ের গল্পটি বিক্রি করার একটি উপায়! এটাকে মজাদার গল্প বলা যেতে পারে।

কিন্তু যে উদ্দেশ্যেই ট্যুরবিলন তৈরি করা হোক না কেন এটা যে জটিল থেকে জটিলতর একটি প্রক্রিয়া, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আর এজন্য ট্যুরবিলনের দামও আকাশছোঁয়া। সুইস ওয়াচমেকিংয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে আবির্ভাব হয়েছিল ট্যুরবিলনের। প্রকৃতপক্ষে সময়কে নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করতে ট্যুরবিলনের জুড়ি নেই। ২০০৯ সালে জেগার লেকুথ রিভার্সো গাইরোট্যুরবিলন টু নিয়ে বাজারে হাজির হয়, ঘড়িটির স্বতন্ত্র কালানুক্রমিক বৈশিষ্ট্য করনোমিটারি কনটেস্টে প্রতিযোগীদের পরাজিত করে শীর্ষে স্থান করে নেয়।

ঘটনা একটা বিষয় সামনে এনে দিয়েছে, যেকোনো ট্যুরবিলন হাতঘড়ির যথার্থতা বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এরপর বছরের পর বছর ধরে নির্দিষ্ট স্বয়ংক্রিয় ট্যুরবিলন সময়ের নির্ভরযোগ্যতা নির্ভুলতার জন্য একটি শিল্প হয়ে উঠেছে। এখানে মূল বক্তব্যটি হলো, ট্যুরবিলন ব্র্যান্ড দর্শন ঘড়ি নির্মাতাদের জন্য মঙ্গলজনক এক সৃষ্টি। এটা জেগার লেকুথের বেলায়ও একইভাবে সত্য।


হাতঘড়ি নিয়ে বিলাসবহুল পণ্যের অনলাইন সংবাদমাধ্যম লাক্সোর সম্পাদক রুকদি ছোটজিন্দা বলেছেন, প্রায় ১২ হাজার ৫০টি ক্যালিবারের মধ্যে ৪০০টির বেশি পেটেন্টসহ জেগার লেকুথ নিঃসন্দেহে সুইজারল্যান্ডের ভ্যালি ডে জক্সের বিখ্যাত ঘড়ি নির্মাতা। সংস্থাটি প্রযুক্তিগত দক্ষতা নান্দনিকতার মধ্যে নির্ভুল ভারসাম্য তৈরি করেছে। ব্র্যান্ডটি যে নান্দনিকতার গুণাবলি তুলে ধরেছে, তা ক্ল্যাসিকাল ডায়ালেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঘড়ির জাদুকরী ডায়ালের পেছনে যে ব্যবসায়ের গোপনীয়তা রয়েছে, সেটাও প্রকাশ পায়।

নির্ভুলতা

মাস্টার গ্র্যান্ড ট্র্যাডিশন গাইরোট্যুরবিলন ওয়েস্টমিনস্টার পার্পিচুয়াল ঘড়িটির গাইরোট্যুরবিলন এবং ম্যাকানিজম দেখলে যে কারোর মধ্যে জানার আগ্রহ তৈরি হবে যে এটা কীভাবে কাজ করে। ঘড়ির ক্যালিবার ১৮৪ হলো ঘড়ির ক্ষমতা। ম্যানুয়াল ঘোরার মুভমেন্টটি অসাধারণভাবে সুনির্দিষ্ট। এটা প্রতিদিন মাত্র সেকেন্ড কমে যায় বা বৃদ্ধি পায়। যদিও সিওএসসির মান অনুযায়ী, যান্ত্রিক গতিবিধি মাইনাস সেকেন্ড থেকে প্লাস সেকেন্ড পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। এদিক থেকে জেগার লেকুথ গাইরোট্যুরবিলন গল্পের শুরু থেকেই নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিয়েছে, এটাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ২০০৪ সাল থেকে মাস্টার গাইরোট্যুরবিলন থেকে প্রতিটি ট্যুরবিলন ঘড়ি নির্ভুলতার জন্য বিখ্যাত। সময় রক্ষার মান ধরে রাখার জন্যই ২০০৯ সালে তারা করনোমিটার প্রাইজ জেতে।

জেগার লেকুথের ব্যবসায়ের বড় একটি হাতিয়ার হলো নির্ভুলতা বা যথার্থতা। জেএলসির সিইও ক্যাথরিন রিনিয়ার বলেন, যথার্থতা ইতিহাসের মূল বিষয়... এবং এটাই জেগার লেকুথের ব্যবসা। এটা সর্বদা উদ্ভাবন নির্ভুলতা অনুসন্ধানের মধ্যে একটি ভারসাম্য ছিল। ঘড়ি তৈরির জগতে আমাদের প্রবেশ কেবল ঘড়ির উপাদানগুলোকে উন্নত করা এবং কাজগুলো প্রতিটি ক্যালিবার পিন থেকে শুরু করা।


মধ্যরাতের ধ্বনি

যথার্থতার পাশাপাশি ঘড়িটিতে আরেকটি জটিল বিষয় যুক্ত রয়েছে, তাহলো ধ্বনি। প্রতি ঘণ্টা মিনিটে ঘড়িটি শব্দ করে জানান দেয়। এটা খুব সূক্ষ্ম হওয়ায় নিঃশব্দ রাতে ছাড়া বোঝা যায় না। এজন্য এটাকে মধ্যরাতের ধ্বনি বলা হয়। যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রিমনিটর গাইরোট্যুরবিলনকে অবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে রাখে। ক্যালিবার ১৮৪-এর বৈদ্যুতিক রিজার্ভ রয়েছে ৫২ ঘণ্টা। আর প্রতি মিনিটে মেইনস্প্রিংয়ের দ্বারা রিমনিটরটিকে রিচার্জ করা হয়। ব্যবস্থা ঘড়ির ঘণ্টা বাজানোর প্রক্রিয়াটিকে আরো সুনির্দিষ্ট করে তোলে। এমনকি যখন মিনিট রিপিটারটি মিনিটের মধ্যে সক্রিয় করা থাকে, তখনো এটি সময়কে সঠিক মিনিটে নামিয়ে আনে। সাধারণত মিনিট রিপিটারটি এক টোন, দুই টোন এবং এক টোন প্যাটার্নে যথাক্রমে ঘণ্টা, কোয়ার্টার এবং মিনিট বোঝায়। এটি সরল ডিং, ডিং-ডং ডিং স্টাইলে শব্দ করে থাকে। এছাড়া মিনিট রিপিটারটি সক্রিয় করার সময় চারটি বাক্যাংশের সুর শোনা যায়।

জেগার লেকুথের সিইও সাংবাদিকদের স্মরণ করিয়ে দেন, গ্র্যান্ড মেইসন ওয়াচমেকিং বইয়ের প্রতিটি জটিলতা এবং কৌশল তারা রপ্ত করে ফেলেছে। তাদের হাজারের বেশি কর্মী এখন ইচ্ছামতো যান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য যুক্ত করতে পারেন।

আকার

আরো চ্যালেঞ্জিং প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম হাতঘড়ি তৈরির কল্পনা করা সত্যিই কঠিন, বিশেষ করে হাতঘড়ির ক্ষুদ্র জায়গার মধ্যে। জেগার লেকুথের গাইরো গাইরো ঘড়ির আয়তনের মধ্যে প্রযুক্তির বিস্ময় চমক সৃষ্টি করেছিল। সর্বশেষ পঞ্চম গাইরোট্যুরবিলন ঘড়িটির আকার ৪৩ মিলিমিটারের সঙ্গে ১৪ মিমি পুরু। তবে এটি গাইরোট্যুরবিলন -এর থেকে মিমি পাতলা। জাইরোস্কোরিক ট্যুরবিলনের আকার প্রায় ১৫ শতাংশ হ্রাস করে গাইরোট্যুরবিলন -এর নান্দনিকতা সৃষ্টিতে নির্মাতারা বিস্ময়কর ভূমিকা পালন করেছেন। ট্যুরবিলনকে আরো ছোট করার অর্থ হলো, ঘড়িটিকে আরো চ্যালেঞ্জিং প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম করে তোলা।

 

সূত্র: লুক্সো ডটকম

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন