নিউইয়র্কে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন কার্যালয় ও দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগের সাবেক পরিচালক। ইউএনডিপিতে যোগদানের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগ ও কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। অতিথি অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যাল্ড ইউনিভার্সিটিতে। বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের উপদেষ্টা, আইএলও, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। বণিক বার্তার সঙ্গে প্রবৃদ্ধি, অসমতা, উন্নয়ন শর্ত, রাষ্ট্র ও মানুষের সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুহিনা ফেরদৌস
গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
শুরুতে আমি কিছু ইতিবাচক বিষয়ের মূল্যায়ন করব, যার সবগুলোকে আমাদের স্বীকৃতি দেয়া দরকার। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রের মূল্যায়ন করব, যেখানে সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে যেমন বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির হার অত্যন্ত ভালো; আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশ থেকে এগিয়ে আছি। সঙ্গে যোগ করতে পারি, বাংলাদেশে যে ধরনের কর্মকাণ্ড চলছে, সেখানে এক ধরনের সৃজনশীলতা রয়েছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ যে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে যুক্ত, সেখানে আমরা এক ধরনের সৃষ্টিশীলতা দেখতে পাচ্ছি। প্রযুক্তিগত কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সঞ্চালনা অনেক বেড়ে গেছে। আমি সবসময় বলি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ডে নারীদের ভূমিকা ইতিবাচকভাবে বেড়েছে। সবটা মিলিয়ে আমরা বলতে পারি, আমাদের প্রাপ্তি অনেক, অর্জন অনেক; যা অস্বীকারের কোনো প্রয়োজন নেই।
প্রাপ্তি ও অর্জন থাকলেও যেকোনো অর্থনীতিতে কিছু প্রতিবন্ধকতা থেকেই যায়, যার কিছু কারণ বাহ্যিক। কিছু আমাদের অন্তর্নিহিত অর্থনৈতিক সমস্যা। যেমন বহির্বিশ্বে যদি কোনো ভঙ্গুরতা সৃষ্টি হয় বা বাণিজ্য চক্রে অসুবিধা দেখা দেয়, তবে বাংলাদেশ আক্রান্ত হবে। অতীতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যখন বিশ্বব্যাপী ধস নেমেছিল তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ তেমন বিঘ্নিত হয়নি। অন্যান্য দেশে যেটা অনেক বেশি হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে যে ভঙ্গুরতা আছে, তার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। বলা হচ্ছে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা সুখবর। আমরা অর্থনীতির নিম্নাবস্থা থেকে গত ৪৯ বছরে ক্রমে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকি থাকবে। বর্তমানে আমরা যে হারে ও যেভাবে বৈদেশিক সাহায্য পাচ্ছি, তা পাব না। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক বেশি বিধি-নিষেধের সম্মুখীন হব। বিশেষত আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক শিল্পে আমরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি, তা হয়তো পাব না। এজন্য আমাদের প্রচেষ্টা ও কৌশল কেমন হবে—এটি নিয়ে ভাবা জরুরি। কারণ কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদের এ উত্তরণ পর্বের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন যেমন একটি আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় সমস্যা। আমি মনে করি না, জলবায়ু সমস্যা শুধু পরিবেশের সমস্যা। নিশ্চয়ই এটা পরিবেশের সমস্যা কিন্তু তার অর্থনৈতিক ও আর্থিক নানা রকমের প্রভাব বিদ্যমান। আমরা প্রত্যেকে জানি যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষক, কৃষি, কৃষিপণ্য ও আয়ের ওপর প্রভাব পড়বে। আমরা এখনই দেখতে পাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব, গত ১০ বা ২০ বছর আগে যা ছিল না। যেমন গত বছর ডেঙ্গুর যে প্রকোপ দেখেছি, তা কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে আমরা দেখিনি।
পাশাপাশি আমি আরো বলতে চাই, শুধু রাজনৈতিক দিক থেকে গণতান্ত্রিক পরিবেশের প্রয়োজন হয় তা নয়, অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ডের জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশের দরকার। অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ডে জবাবদিহিতা ও দৃশ্যমানতা থাকার জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ অত্যন্ত প্রয়োজন। অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ডকে সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য জনবিতর্ক হওয়া প্রয়োজন। নীতির ব্যাপারে জনবিতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আশা-আকাঙ্ক্ষার ব্যাপারে জনবিতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কারণ বিতর্ক না হলে আমরা কী চাই এবং আমরা কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছব, তা বের করতে পারব না। আমি মনে করি, আমাদের গণতান্ত্রিক যে ক্ষেত্রটি আছে, সেখানে সুস্থ, সংবেদনশীল ও বস্তুনিষ্ঠ একটা আলাপ-আলোচনা হতে পারে। সংক্ষেপে বললে, আমাদের ইতিবাচক দিক অনেক আছে, অর্জনের অনেক দিক আছে, যার ওপর নির্ভর করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব। সেসঙ্গে আমাদের প্রতিবন্ধকতার দিকগুলোও মনে রাখতে হবে।
গোষ্ঠীকেন্দ্রিক উন্নয়ন, সহিংসতা ও নারী নিগ্রহের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ কী বলে মনে করেন?
আমরা উন্নয়নটাকে যদি সীমাবদ্ধ প্রেক্ষিত কিংবা শুধু অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত থেকে দেখি, তবে ভুল করা হবে। যেমন আমরা সবাই বলছি যে অসমতা বাড়ছে, যা স্বীকৃত সত্য। যেকোনো সূচক ব্যবহার করি না কেন, আমরা বলি যে অসমতা বাড়ছে। তবে দারিদ্র্য কমে যাচ্ছে। অসমতা বৃদ্ধির অর্থনৈতিক প্রভাব আছে। আমরা প্রত্যেকেই জানি, অসমতা বৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি ও বণ্টনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। তাছাড়া অসমতা বৃদ্ধির একটা সামাজিক প্রেক্ষিতও আছে। অসম সমাজে প্রথমেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। কারণ নিচের দিকে যারা আছে, অসমতার শিকার যারা হচ্ছে, তাদের কণ্ঠ, বক্তব্য ও অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। অবস্থানের দিক দিয়ে অনেক নিচের স্তরের মানুষের অংশগ্রহণের কোনো রকম সুযোগ থাকে না। অসমতা তাদের মানবিক মর্যাদা নষ্ট করে।
সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে যে প্রশ্নটি আপনি করেছেন, তার উত্তরে আমি মনে করি সামাজিক সমস্যাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেখা দরকার। তরুণ সমাজকে নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, যেমন তরুণ সমাজে কর্মনিয়োজন নেই, তারা সুযোগের ক্ষেত্রে নানা রকমভাবে বঞ্চিত হচ্ছে, যার একটা অর্থনৈতিক দিক আছে। আমরা তরুণদের সৃজনশীলতাকে ব্যবহার করছি না। এর একটি সামাজিক দিকও রয়েছে। আর সামাজিক দিকটি হচ্ছে, এতে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। ফলে সহিংসতা বাড়বে। এবার আমি যদি প্রশ্নটির দিকে আসি, তাহলে সহিংসতাকে একটি বড় প্রেক্ষাপট থেকে দেখতে চেষ্টা করব। আমি মনে করি, আজকের বাংলাদেশে সহিংসতা আমাদের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসহিষ্ণুতা আমাদের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। সহিংসতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। যেকোনো বিরোধের সমাধানের নানা পথ আছে। আলোচনা বা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার মাধ্যমে অথবা বিতর্কের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে। আমরা অস্ত্রায়ণের একটা সংস্কৃতি গড়ে তুলছি। গোটা জাতির মধ্যে সহিংসতা ঢুকে গেছে। এরই একটা মাত্রিকতা হিসেবে আমরা নারীর প্রতি সহিংসতা দেখতে পাচ্ছি। নারীর প্রতি সহিংসতা ঘরের অভ্যন্তরে হচ্ছে, ঘরের বাইরেও হচ্ছে। সহিংসতার মাত্রা এত বেশি যে অনেক সময় এর কোনো ব্যাখ্যা আমরা খুঁজে পাই না। আমি যদি ধর্ষণকে সহিংসতার একটি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করি, তাহলে আজকের বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণ যে পর্যায় পৌঁছেছে, এর ব্যাখ্যা কী হবে? অনেকে নানা রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। অনেকে বলছেন, মাদকের প্রভাবের কারণে বেড়েছে। অনেকে বলছেন, সমাজের মধ্যে অবাধ মেলামেশার অনুপস্থিতি থেকে এটা হতে পারে। কিন্তু তার পরও বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণ যে পরিমাণে ঘটছে, এর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ছাড়া অন্য কোনো ব্যাখ্যা আছে বলে আমার মনে হয় না।
উন্নয়নটা কেন সার্বিক ও মানবিক হচ্ছে না?
উন্নয়নের দুটো মাত্রিকতা আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। এক. অর্থনৈতিক উন্নয়ন মানুষের জীবনযাত্রার মানকে কতখানি উন্নত করছে। জীবনযাত্রার মান কিন্তু শুধু মাথাপিছু আয়, খাদ্য ও আশ্রয় নয়। জীবনযাত্রার মান মানে রাজনৈতিক ব্যাপারে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সে অংশ নিতে পারছে কিনা। জীবনযাত্রার মান অর্থ গৃহ, রাস্তা এবং অন্য জায়গায় নিরাপত্তা আছে কিনা। সেদিক থেকে বলতে পারি, আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে। তবে মানবিক উন্নয়ন হচ্ছে না। উন্নয়নের দ্বিতীয় মানে, আমরা পরস্পরকে শাণিত করব। পরস্পরকে উন্নত করব। সমাজের মধ্যে মানুষে মানুষে যে সম্পর্ক, তার একটা ব্যবসায়িক, অন্যটা আত্মিক সম্পর্ক। আজকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে সত্য কিন্তু মানুষের প্রতি মানুষের মানবিক মর্যাদা, মমত্ববোধ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে—অন্দরে, পরিবারে, ঘরের বাইরে—এটা ভেবে দেখার দরকার আছে। এটা শুধু যে নীতির প্রশ্ন, তা কিন্তু নয়; এটা উন্নয়নের প্রশ্ন। কারণ চূড়ান্ত বিচারে মানুষের যদি জীবনধারণের মান উন্নত না হয়, মানবিক মর্যাদা, মূল্যবোধ উন্নত না হয়, তাহলে সে উন্নয়ন তো যথার্থ উন্নয়ন নয়।
ভারতের সাবেক মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম বিভিন্ন প্রমাণের ভিত্তিতে যুক্তি দেখিয়েছেন যে দেশটির প্রকৃত প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে ৩ দশমিক ৫ শতাংশেরও কম হতে পারে। বাংলাদেশে এমন বাস্তবতা তৈরি হতে পারে কিনা?
বিষয়টি নির্ভর করে কী ধরনের কাঠামোর মধ্যে পরিমাপ করা হচ্ছে তার ওপর। যেমন প্রান্তিক বছর কোনটা। প্রথম কোন বছরকে ভিত্তি বছর হিসেবে নিয়েছি। ২০১৫ সালে যদি জাতীয় আয় অনেক বেশি প্রাক্কলিত হয়, তাহলে এ বছরের সঙ্গে যদি ২০১৮ বা ২০১৯ সালের তুলনামূলক বিচার করা যায়, দেখা যাবে প্রবৃদ্ধি এত বেশি নয়। আবার ২০১৫-এর বদলে ২০১৪ সালকে যদি আমরা ভিত্তি বছর হিসেবে নিই এবং সেখানে যদি আয় কম থাকে, তাহলে দেখা যাবে প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি বা বৃদ্ধিটা কোথায়।
প্রবৃদ্ধি ৪ না ৬ শতাংশ, এটা নিয়ে অনেক সময় আমরা বিতর্ক দেখতে পাই। অর্থনৈতিক দিক থেকে যা গুরুত্বপূর্ণ। আমি বলছি না যে এর গুরুত্ব কিছু কম। কিন্তু প্রবৃদ্ধির প্রভাব কোথায় পড়ছে, আমার কাছে এটা বড় কথা। যেমন ৯ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হওয়ার পর জাতীয় আয় যতখানি বৃদ্ধি পেল, তার ৮০ শতাংশ যদি একটা বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে থেকে যায় কিংবা সমাজের উপরের ১০ শতাংশ মানুষের হাতে থেকে যায়, তাহলে আমরা বলতে পারি সুষম বণ্টন হলো না। যখন সুষম বণ্টন হবে না বা যে মানুষগুলো জাতীয় আয়ের সুফল ভোগ করবে না, তারা কিন্তু দরিদ্রই থেকে যাবে। নিশ্চয়ই আমাদের প্রবৃদ্ধি দরকার। তবে প্রবৃদ্ধি হওয়ার পরে এর বণ্টন কীভাবে হচ্ছে, তা আমার কাছে অনেক বড় প্রশ্ন। দ্বিতীয়ত, সরকারি খাতে যে আয় হচ্ছে, সে অর্থ কোথায় যাচ্ছে? সে অর্থের সুফল শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতগুলো পাচ্ছে কিনা? অর্থাত্ সামাজিক খাতে সে অর্থ ব্যয় হচ্ছে কিনা? বিশেষ করে মৌলিক সামাজিক খাতে যদি অর্থ ব্যয় না হয়, তাহলে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি অর্জন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমি দেখেছি প্রবৃদ্ধি কত শতাংশ, তা নিয়ে অনেক অর্থনীতিবিদ এমনকি অর্থমন্ত্রীরা পর্যন্ত নানা বিতর্কে জড়িয়ে যান। প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে হলে তা ভালো। কিন্তু আমার কাছে আরো বড় প্রশ্ন হচ্ছে, প্রবৃদ্ধির বণ্টন কেমন হচ্ছে? প্রবৃদ্ধির ফলে সরকারের যে আয় ও সম্পদ বাড়ছে, তা কোথায় ব্যয় হচ্ছে!
রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা তৈরি হচ্ছে কেন?
এর একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে। কারণ চিরকাল আমরা বলেছি উন্নয়নের মানে হচ্ছে মাথাপিছু আয়ের বিস্তার। মাথাপিছু আয় যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে উন্নয়ন হচ্ছে। মাথাপিছু আয় যদি না বাড়ে তাহলে উন্নয়ন নয়। আমরা যদি মাথাপিছু আয়ের হিসাব করি, তাহলে সে অনুপাতের উপরে আছে জাতীয় আয়, নিচে জনসংখ্যা। যেহেতু আমরা মাথাপিছু আয়কে ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যগত দিক থেকে উন্নয়নের মানদণ্ড ধরে হিসাব করি, সেজন্য সাধারণভাবে মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধির ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রবৃদ্ধি বেশি হলে সাধারণত উন্নয়নবিশারদ ও নীতিনির্ধারকরা বলেন, উন্নয়ন হচ্ছে। আমার মনে হয়, এ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে কতটা উন্নয়ন হচ্ছে, স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কতটা উন্নয়ন হচ্ছে, জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে কতটা উন্নয়ন হচ্ছে, নাগরিকদের নিরাপত্তা কতখানি—এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। লাতিন আমেরিকার বহু দেশে দেখা গেছে ৬ থেকে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যেমন ভেনিজুয়েলায় একসময় হয়েছে কিন্তু সেখানে নাগরিক নিরাপত্তা বলে বহু জায়গায় বহু কিছু ছিল না। আমার মনে হয়, একে আমরা উন্নয়ন বলব কিনা, মানবিক দিক থেকে তা ভাবা দরকার।
মূল্যস্ফীতি, সরকারের বাজেট ও জাতীয় আয়ের ওপর বিশ্বব্যাংকের বেঁধে দেয়া মানদণ্ড কতটা সঠিক ছিল?
বিশ্বব্যাংক কিংবা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যেটা করেছিল, তা ছিল কাঠামোগত সাযুজ্য। অর্থনীতির মূল কতগুলো জায়গা, যেমন মুদ্রাস্ফীতির হার কিংবা সরকারের বাজেট জাতীয় আয়ের কত অংশ, এগুলোকে তারা কতগুলো মানদণ্ডের মধ্যে বেঁধে দিয়েছিল। যেমন কোনো অবস্থাতেই মুদ্রাস্ফীতি ২ বা ৩ শতাংশের বেশি হতে পারবে না এবং কোনো অবস্থাতেই সরকারের বাজেট ঘাটতি জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না ইত্যাদি। এভাবে বাজেট ও অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বহু ক্ষেত্রে মানুষের জীবনকে তারা ওলটপালট করে দিয়েছিল, যা আমরা আশির দশকে আফ্রিকায় দেখেছি। এছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, যেমন থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এমনকি বাংলাদেশেও তার প্রভাব আমরা দেখেছি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির পক্ষ থেকে বলা হয়, মাথাপিছু আয় মানেই উন্নয়ন নয়। উন্নয়নের জন্য মাথাপিছু আয় আবশ্যিক, তবে পর্যাপ্ত শর্ত নয়। আমরা যেটা বলতে চেয়েছি, মানব উন্নয়ন মানে হচ্ছে প্রতিদিন আমরা যে ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি—যেমন অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক—বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিস্তার হচ্ছে উন্নয়ন। অর্থাত্ জীবনকে প্রভাবিত করার জন্য মানুষ তার সিদ্ধান্ত বা পছন্দটি যদি সঠিকভাবে নিতে পারে, তার নামই উন্নয়ন। এ পরিপ্রেক্ষিতে একটি সূচক তৈরি করা হয়। সে সূচকের মধ্যে মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু, শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তির হার, জীবনযাত্রার মান রয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যে তত্ত্ব থেকে সূচকের জন্ম, সে তত্ত্বকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। কোনো অংকই কোনো ধারণার শতভাগ পরিমাপক নয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, মানব উন্নয়ন সূচকেরও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু মানব উন্নয়ন সূচক মাথাপিছু আয়ের থেকে পরিব্যাপ্তভাবে উন্নয়নকে দেখতে চেষ্টা করে। তাই আজ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ওই সূচকের ফলে উন্নয়ন বিতর্কের মূল গতিধারায় পরিবর্তন হয়েছে।
কিছুদিন আগের একটা উদাহরণ দিতে পারি। যেমন মিসরের কায়রো যতটা উন্নত, অন্যান্য অঞ্চল ততটা নয়। মিসরে ১৭টি প্রদেশ আছে, দেশটির শাসকরা মিলিত হয়ে ঠিক করলেন, দেশটিতে অনুুন্নত যে জায়গা আছে, সেসব জায়গায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় বাড়িয়ে দেয়া হবে। মানব উন্নয়ন সূচক উন্নয়ন বিতর্কে আসার ফলে বিভিন্ন জায়গার নীতির ওপরও প্রভাব ফেলছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী-পুরুষের সমতার ব্যাপারে মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন যেসব কথা বলেছে, সেগুলোর নানা রকম প্রতিফলন আমরা নানা দেশের নীতিমালায় দেখতে পারছি। আমি খুব গর্বিত যে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলাম এবং পাঁচ বছর ধরে যে মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনটি তৈরি হয়, তার নেতৃত্ব আমি দিয়েছি।
সূচকের মাধ্যমে সবকিছু পরিমাপ কতটা সঠিক?
অনেকেই বলেন, কোনো কিছুকে সংখ্যার মধ্যে না আনা গেলে বোঝা যাবে না। বিশেষত যারা অংকবিদ, তারা সবসময় সবকিছুকে একটা সংখ্যায় নিয়ে আসেন। কিন্তু পৃথিবীর বহু সত্য তো সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। শিশুর প্রতি মায়ের যে ভালোবাসা, তার কোনো সমীকরণ নেই। তা সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যাবে না। তবে যারা নীতিনির্ধারণ করেন, তারা সবসময় একটা সংখ্যা চান। এটা নীতির ক্ষেত্রে দরকার। সে সময় আংকিক ব্যাপারগুলো তাদের কাছে অনেক বেশি হূদয়গ্রাহী। তাছাড়া সংখ্যা হলে প্রতিযোগিতাটা বোঝা যায়। আমি যদি বলি, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ সামাজিক খাতে ভালো করছে। এটা দিয়ে কিন্তু স্পষ্ট করে বোঝা যায় না। এবার যদি বলি, বাংলাদেশে প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২ বছর আর ভারতে ৬৬ বছরে। কিংবা পাঁচ বছর অনূর্ধ্ব শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৩৪ শতাংশ, ভারতে ৪৫ শতাংশ। তাহলে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে কতটা ভালো করছে।
বিষয়টিকে যদি অংক বা সংখ্যায় নিয়ে আসি তাহলে উন্নয়নটা বুঝতে ও কতখানি উন্নয়ন হচ্ছে বা হচ্ছে না, সে সম্পর্কে জনগণকে একটা ধারণা দিতে সুবিধা হয়। তার মানে এই নয় যে সবকিছু সূচকের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। সূচকের মধ্যে নিয়ে আসার একটা সুবিধা হলো, তিনটা বা চারটা মাত্রিকতাকে একটি মাত্রিকতায় নিয়ে আসা। এটা আমাদের সার্বিক জিনিস বুঝতে সাহায্য করে। অসুবিধাটা হলো, সূচকের বাইরেও তো উন্নয়নের নানা রকমের মাত্রিকতা আছে। যেমন মানব উন্নয়ন সূচকে রয়েছে প্রত্যাশিত গড় আয়ু, শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি ও মাথাপিছু আয়। এটা দিয়ে যদি আমরা বিভিন্ন দেশের মধ্যে তুলনা করি, তাহলে বুঝব যে উন্নয়নের বহুমাত্রিকতা এখানে নেই। যেমন কর্মনিয়োজন, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার এখানে নেই। আমি সবসময় বলি, উন্নয়নের যত রকমের পরিমাপক, তা উন্নয়ন পরিমাপের জন্য একটা ঘর আর সূচকটি হচ্ছে একটা দরজা মাত্র। এখন এ দরজায় এসে যদি আপনি থেমে যান, ঘরের মধ্যে প্রবেশ না করেন, তাহলে আপনার উন্নয়ন গৃহে কী হচ্ছে, সেটা কিন্তু বুঝতে পারবেন না। আপনি যদি সূচক পেরিয়ে ঘরে পৌঁছেন, তাহলে বুঝতে পারবেন উন্নয়ন কতখানি হচ্ছে।
সূচক রাজনৈতিক দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাজনৈতিক নেতারা সবসময় বলেন, আমরা তালিকার ১৪২ কিংবা ১৪৩ নম্বরে আছি। কিন্তু যে কথাটি তারা বলেন না তা হচ্ছে, যদি তালিকায় মোট দেশের সংখ্যা বাড়ে তাহলে ১৪২ বা ১৪৩ নম্বর সংখ্যাটি কিন্তু পরিবর্তন হয়ে যাবে। এসব কারণে সূচকটা খুব জননন্দিত ও হূদয়গ্রাহী। কিন্তু যারা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেন, উন্নয়ন নিয়ে কথাবার্তা বলেন, তারা সামগ্রিক অবস্থাটা বোঝার জন্য সূচকটা নেবেন ঠিকই কিন্তু সে সূচকের পরে বিভাজিত যেসব পরিমাপ আছে, সেগুলোর দিকে নজর দেবেন। এতে কী হচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারব। ধরা যাক, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলার। কিন্তু রংপুরের মাথাপিছু আয় আর চট্টগ্রামের মাথাপিছু আয় এক নয়। আবার রংপুরের প্রত্যাশিত গড় আয়ু আর খুলনার প্রত্যাশিত গড় আয়ু এক নয়। বাংলাদেশে বহু উন্নত গ্রাম আছে, আবার অনেক গ্রাম আছে অনুন্নত। সুতরাং গড় মাথাপিছু আয়কে আমরা যদি বিভাজিত করে প্রতিটি অঞ্চলের গড় আয় বের করি, তখন বুঝতে পারব বঞ্চনাটা কোথায়। নীতিমালা কোথায় দিতে হবে। সম্পদ কোন দিকে প্রবাহিত করতে হবে। আমি মনে করি, সূচক কোনো কোনো অর্থে বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে।
উন্নয়নের শর্ত ও পর্যায়ের মধ্যে বাংলাদেশ কতটা ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছে?
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই বাংলাদেশের যে প্রাপ্তি, তার জন্য আমরা গর্ব অনুভব করতে পারি। পাশাপাশি যদি আমি সামাজিক সমস্যায় আসি, তাহলে দেখতে পাই অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমরা যতটা দীপ্তমান, সমাজ অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যা অনেক। সামাজিক দিক থেকে অনেক সমস্যা এসেছে, সেগুলো উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এগুলো উন্নয়নকে প্রতিহত ও ব্যাহত করতে পারে। সামাজিক অস্থিরতার কথা আমরা বলছি। অসমতা শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, অসমতা সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাও বটে। অসমতা বাড়তে বাড়তে এমন একটা জায়গায় পৌঁছে, যখন জনগণ সেটার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এটা বিভিন্ন দেশে হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। আপনি আগে সহিংসতার কথা উল্লেখ করেছেন। সহিংসতা তো যেকোনো জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। অর্থনৈতিক উন্নয়ন করার পর যদি নিরাপত্তাটা না থাকে, তাহলে কীভাবে হবে? আমরা পরিবেশ দূষণের কথা বলছি। এটা যে শুধু জলবায়ু পরিবর্তন তা তো নয়; শব্দদূষণ হচ্ছে, বায়ুদূষণ হচ্ছে। ফলে জনজীবনে বিপর্যস্ত অবস্থা আমরা দেখতে পারছি, যা উন্নয়নকে ব্যাহত করছে। প্রথম কথা হচ্ছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের যে অর্জন, তার সঙ্গে কিন্তু সমাজ অগ্রগতি তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। তার সঙ্গে যদি রাজনৈতিক উন্নয়নকে ধরি, সেক্ষেত্রে বলব রাজনৈতিক উন্নয়নে আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। একটা সমাজে যদি সার্বিক উন্নয়ন হয়, তবে এর মধ্যে একটা ভারসাম্য থাকতে হবে। সব ক্ষেত্রে সমান হতে হবে তা আমি বলছি না। কিন্তু প্রবণতা যেন ইতিবাচক হয়।
অর্থনীতির মধ্যে যেসব আর্থিক বিষয় আছে—যেমন আয়, সুদের হার, মূল্যস্ফীতি—সেগুলো অতিদ্রুত বদলায় কিন্তু সামাজিক যেসব সূচক আছে—যেমন প্রত্যাশিত গড় আয়ু, সাক্ষরতার হার—এগুলো অত দ্রুত বদলায় না। সুতরাং সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য মানে এই নয় যে সবগুলো সমান গতিতে যাবে। তবে যেন ইতিবাচক হয়। সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা যেন বলতে পারি, দশ বছর আগে যেখানে ছিলাম, তার চেয়ে এগিয়েছি। অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেমন উলম্ফন হয়েছে, সেভাবে হয়তো হবে না। বাংলাদেশের সার্বিক আর্থসামাজিক অবস্থায় একটা ভারসাম্যহীনতা বিরাজ করছে।
সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে মানবসম্পদের কোন জায়গায় গুরুত্ব দেয়া উচিত?
এটা একটা বড় প্রশ্ন। শিক্ষাই তো মানবসম্পদের আসল ভিত্তি। যদিও আমাদের এখানে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে বায়ুর প্রসারের মতো। উত্তরায় শুনেছি ১১টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। চারপাশে বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় ইত্যাদির ছড়াছড়ি। বেশির ভাগ শিশু হয়তো প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের পর্যায় শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেছে। কিন্তু মৌলিক প্রশ্নটা হচ্ছে, তারা শিখছেটা কী? শিক্ষার মানটা কী? শুধু শিক্ষার প্রসার ঘটলে হবে না। শিক্ষার শুধু পরিমাণগত দিক দেখলে হবে না। শিক্ষার গুণগত ব্যাপারটি দেখতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে কিন্তু সবাই অভিযোগ করছে যে মান
কমে যাচ্ছে। শিক্ষার মান কমে যাওয়া মানে, আপনি যে মানবসম্পদ তৈরি করছেন, সেটা আসলে সম্পদ নয়। আমরা সনদ পাচ্ছি কিন্তু সম্পদ তৈরি করতে পারছি না। বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা এবং ভবিষ্যত্ অর্থনীতির জন্য মানবসম্পদের যে ধরনের দক্ষতা দরকার, বিশেষ করে অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত যে পরিবর্তন হচ্ছে, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্য উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরিতে আমাদের বিরাট একটা ঘাটতি রয়ে গেছে; যা ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে। আমরা যদি জনসম্পদ না বাড়াতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের সমস্যা হবে। কেননা উন্নয়নের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। আজ আমরা প্রাথমিক শিল্পে রয়েছি, ক্রমান্বয়ে হয়তো মাধ্যমিক ও পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তিগত শিল্পে যাব। সেখানে গেলে আমাদের হয়তো বিনিয়োগ হবে, অর্থও থাকবে। কিন্তু যে মানুষেরা এটা সামলে নিয়ে যাবে, সেখানে যদি ঘাটতি থেকে যায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যা দেখা দেবে। (চলবে)
আলোকচিত্রী: সৌম্য সরকার
সাক্ষাৎকারটি দেখুন ...