দুই দিনব্যাপী বিডিএফ সম্মেলন শুরু

উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যকর অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হোক

ইফেক্টিভ পার্টনারশিপ ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টবাটেকসই উন্নয়নে কার্যকর অংশীদারিত্বশিরোনামে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিডিএফ) সম্মেলন শুরু হয়েছে গতকাল। বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম ২০২০ এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডেভেলপমেন্ট ফোরামে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। একই সঙ্গে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার রূপরেখা এসডিজি অর্জনে সরকারের পদক্ষেপগুলো উন্নয়ন সহযোগী তথা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কাছে তুলে ধরা হবে। তাছাড়া -যাবৎকালের অর্জিত প্রবৃদ্ধি এখন প্রকট সমালোচনার মুখোমুখি। প্রবৃদ্ধি শুধু বৈষম্য বাড়ায়নি, অধিকন্তু পরিবেশ ধ্বংস করে চলেছে। দেখার বিষয়, উন্নয়ন ফোরাম গতানুগতিক প্রবৃদ্ধির পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা নতুন কোনো দিকনির্দেশনা নিয়ে সামনে দাঁড়ায় কিনা। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন শতাংশের বেশি হারে বাড়ছে, নব্বইয়ের দশকের তুলনায় দারিদ্র্যের হার এখন প্রায় অর্ধেক। প্রত্যাশিত আয়ু, সাক্ষরতার হার মাথাপিছু খাদ্যের নিরিখে অগ্রগতি কম নয়। বাংলাদেশ যেন অর্জিত সাফল্য ধরে রেখে উদীয়মান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে, সেটাই প্রত্যাশা। মনে রাখতে হবে বিগত দিনে যে ধরনের অভ্যন্তরীণ বহিঃস্থ আর্থসামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে, তার বিপরীতে বর্তমান সমাজ বিশ্ব পুরোপুরি না হলেও আংশিক বদলে গেছে। সুতরাং প্রথাগত ধ্যান-ধারণা পরিত্যাগ করে নবধারামূলক চিন্তাভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এখনই উত্কৃষ্ট সময়।

বাংলাদেশ বর্তমানে জাতীয় আয়ের দশমিক শতাংশ বৈদেশিক ঋণ অনুদান গ্রহণ করে। আর ঋণ অনুদান দেশের মোট আমদানির দশমিক শতাংশ। চিত্র থেকে বলা যেতে পারে, দেশ এখন আর বৈদেশিক সহায়তানির্ভর নয়। সামগ্রিক অর্থনীতি যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে আগামীতে বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক সহায়তা নয়, দরকার বৈদেশিক অংশীদারিত্ব। মধ্যম আয়ের দেশ থেকে আরো উপরের দিকে যেতে হলে উন্নয়ন কৌশল নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশের উন্নয়ন কৌশল জিইয়ে রেখে উন্নত হওয়া যাবে না। সন্দেহ নেই, মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় টিকে থাকতে হলে সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের ভবিষ্যৎ ভূমিকা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, সামাজিক অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো, স্থিতিশীল সুশাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধ অভিযোজনের মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো মোকাবেলা করার প্রস্তুতি এখনই নিতে হবে। বাংলাদেশকে বৈদেশিক ঋণসহায়তার পরিবর্তে অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে। সেজন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বাণিজ্য বিনিয়োগ এবং কূটনীতিতে সমন্বয় সাধন করতে হবে। এসব কাজে বেসরকারি খাতের বিপুল অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এক্ষেত্রে গুরুত্ব পাবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। সাধারণ বিডিএফ সম্মেলনে উন্নয়ন সহযোগীরা বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা লাভ করে নিজ নিজ কার্যালয়ে গিয়ে আলোচনাসাপেক্ষে সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। এবারের সম্মেলনে তাদের সহায়তা আরো বাড়বে এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা পাবে বলে সবার প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের স্তরে পৌঁছলেও দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মসূচির মৌলিক মানবাধিকার পূরণের পর্যায়ে রয়ে গেছে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা প্রতিশ্রুতির বিপরীতে অর্থছাড়ের পরিমাণ সংগতিপূর্ণ নয়। তাই বিদ্যমান সহায়তা কৌশল ছাড়ের বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানমুখী উন্নয়ন কীভাবে করা যাবে, তার একটি আলোচনা বিডিএফে হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া উন্নত অবকাঠামো তৈরি করা, বিশেষ করে জ্বালানি খাতে, বেসরকারি খাতের উন্নয়নের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে একীভূত হওয়ার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতকে শক্তিশালী এবং তার জন্য -সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। স্থিতিশীল সুশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে জবাবদিহি দরিদ্রবান্ধব নীতি গ্রহণ, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং রাজস্ব নীতির সংস্কার করা প্রয়োজন। নইলে সহায়তার অর্থের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।

মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আর ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে এর অবস্থান ৩২তম। ২০৩০ ২০৫০ সাল নাগাদ জিডিপি ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্বের যথাক্রমে ২৮ ২৩তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্থান করে নিতে সক্ষমতা অর্জন করতে চায় বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আন্তর্জাতিক সহযোগী দেশ, সংস্থাগুলোসহ ব্যক্তি খাতের নিবিড় অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। বিশ্বের বুকে

একটি গতিশীল অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার প্রত্যয় উপকরণ বাংলাদেশের রয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যৌথ কর্মপন্থা নির্ধারণ প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন