‘শিল্পীরা বৈষয়িক হলে আর শিল্পী থাকেন না’

দর্শকপ্রিয়তার বিচারে শীর্ষ অভিনেতাদের অন্যতম চঞ্চল চৌধুরী ছোট পর্দায় দীর্ঘ সময় ধরে অভিনয় করছেন তিনি। চলচ্চিত্রেও তার রয়েছে সমান পারদর্শিতা। নিজের ব্যস্ততা, নাটক-চলচ্চিত্রের নানা সংকট, উত্তরণের উপায়সহ নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি টকিজের সঙ্গে কথা বলেছেন চঞ্চল চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইসা জান্নাত

বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাই।

এখন ঈদের কাজ শুরু করব। সম্প্রতি গোলাম সোহরাব দোদুল পরিচালিত সাত খণ্ডের একটি নাটকের শুটিং করছি। এটি ঈদে দেখানো হবে। আসলে মাঝখানে আমি কিছু সময় বিরতি নিয়েছিলাম। কারণ কোনো চলচ্চিত্রে কাজ করার পর সেই চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসতে কিছুটা সময় লাগে।

 

দীর্ঘদিন ধরে ভালো গল্পের চলচ্চিত্র নাটকের সংকটের কথা বলা হচ্ছে। সংকট নিরসনে করণীয় কী বলে আপনি মনে করেন?

সমষ্টিগত যেকোনো কাজের সংকট থেকে উত্তরণ কঠিন। এগুলো টিম ওয়ার্ক। নির্মাতা, প্রডাকশন হাউজ, শিল্পী-কলাকুশলীসবার সম্পৃক্ততা আছে। ভালো গল্প, মেকিং, কাস্টিং দরকার। যাতে দর্শকরা পছন্দ করেন। প্রত্যেকের ভালোবেসে সততার সঙ্গে কাজ করা দরকার। ভালো কাজের লক্ষ্য নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই মিলে যদি তা করতে পারি, তাহলে ভালো কাজ হওয়া সম্ভব।

 

কাজের মান ভালো না হওয়ার পেছনে শিল্পীদের দায়বদ্ধতা কতটুকু

এক্ষেত্রে শিল্পীদের দায়বদ্ধতা অনেক। কাজের মান ভালো করার জন্য আমরা তেমন কিছু করছি না। গতানুগতিক বা নিম্নমানের কাজ এলে একজন শিল্পীকে তা করতে হবে এমনটা নয়। কিন্তু অনেকেই করছেন। এটা একটা সমস্যা। চিত্রনাট্য এবং শিল্পমানসম্পন্ন কাজ ছাড়া একজন শিল্পীর অভিনয় করা উচিত নয়। মূলধারার শিল্পীদের মান বিচার করে কাজ করতে হবে। শিল্পীদের নিজ নিজ জায়গা থেকে এটা করা দরকার। একইভাবে চ্যানেল কর্তৃপক্ষেরও কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। প্রচার উপযোগী কাজ না হলে চ্যানেল তা প্রচারে অপরাগতা জানালে আশা করি নিম্নমানের কাজ নির্মাণের পরিমাণ কম হবে।

 

অনলাইন প্লাটফর্মের কারণে নিজেদের কাজ সম্পর্কে দ্রুত দর্শকদের প্রতিক্রিয়া জানতে পারছেন...

অবশ্যই। তবে এসব প্লাটফর্মের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বাধীনতার অপব্যবহারও করা হচ্ছে। ইউটিউব, ফেসবুকে নাটক কিংবা চলচ্চিত্রের কমেন্টে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ অসচেতনতার পরিচয় দিচ্ছে। ব্যক্তিগত অপছন্দের দায় প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকেই নিম্ন ভাষা-রুচি ব্যবহার করছেন। এটা ক্ষতিকর। সবার সামনে কতটুকু বলা যায়, কতটুকু বলার অধিকার আছেএসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এসব প্লাটফর্মের সঠিক ব্যবহার করতে হবে আমাদের।

 

দর্শকদের ধরনের অসচেতনতা ভালো মানের কাজের ওপর প্রভাব ফেলছে কি?

অনেকে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বেশি লাইক, কমেন্ট, ভিউ, অর্থের আশায় ইউটিউব কিংবা অন্য প্লাটফর্মে নিম্নমানের কনটেন্ট দিচ্ছে। এসব কাজে অনেকেই সমর্থন জানাচ্ছে। এগুলো ভালো কাজের ওপর প্রভাব ফেলে। দেখা যায়, মানসম্পন্ন কাজের ভিউ খুব বেশি হয় না। নাটকের ভেতরেও এখন ধরনের কনটেন্ট দিয়ে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চলছে। প্রতিটি শিল্পকেই তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া উচিত। সেই জায়গাটা নষ্ট করে দিলে দর্শকদের রুচি শিল্প নষ্ট হয়ে যাবে। কাজেই বিকল্প মাধ্যমগুলোর ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

 


সময়ে নির্মিত নাটক, চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে কেমন?

নাটক, চলচ্চিত্র সমাজের দর্পণ। সমাজের বিভিন্ন সংগতি-অসংগতির কথা এগুলোর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। এখনকার অধিকাংশ নাটক, চলচ্চিত্রে সামাজিক বক্তব্য থাকে না। বরং একটা প্রজন্মকে বিপথগামী করা হচ্ছে। নাটক, চলচ্চিত্রে শিক্ষণীয় বিষয় থাকা দরকার। অন্তত কিছু শিখতে না পারলেও দর্শকরা যেন অনুৎসাহিত না হয় বিষয়টিকে মাথায় রেখে গল্প লেখা উচিত।

 

জীবনের শেষ দিকে এসে শিল্পীরা নাজুক অবস্থায় পড়ছেন। বিষয়টি নিয়ে কিছু বলুন...

এটা একজন শিল্পীর জীবনাচরণের ওপর নির্ভর করে বলে মনে করি। শিল্পীরা দিনমজুরের মতো। যেসব শিল্পী শুধু শিল্পচর্চার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন, অন্য কোনো বৈষয়িক বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকেন না, তাদের অবস্থা খারাপ হবে, এটা স্বাভাবিক। তবে সব শিল্পীর ক্ষেত্রে এটা ঘটে না। অনেকেই আছেন শিল্পকে পুঁজি করে বৈষয়িক সুবিধা লাভ করেন। আসলে শিল্পীরা বৈষয়িক হলে তারা আর শিল্পী থাকেন না।

 

আপনি শিক্ষকতা পেশার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন...

ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভে (ইউডা) চারুকলা বিভাগে শিক্ষকতা করেছি। আমার প্রিয় শ্রদ্ধার পেশা এটি। পেশার মাধ্যমে সমাজের জন্য অনেক দায়িত্ব পালন করা যায়। অভিনয়ের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষকতা করা কষ্টকর হয়ে ওঠে। কারণে সরে আসতে হয়েছে। তবে আমার মনের মধ্যে শিক্ষকতা পেশা রয়েছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন