অ্যাভাস্টের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ ও বিক্রির অভিযোগ

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক ব্যবহূত পাঁচ জনপ্রিয় অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের একটি অ্যাভাস্ট। অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ এবং বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার প্রকাশিত পিসিম্যাগ এবং মাদারবোর্ড নামে দুই প্রতিষ্ঠানের চাঞ্চল্যকর এক অনুসন্ধানী তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বিশ্বব্যাপী অ্যাভাস্ট অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্রাউজার প্লাগইনের মাধ্যমে সংগ্রহ এবং পরবর্তী সময়ে মাইক্রোসফট গুগলসহ আরো অনেক করপোরেট জায়ান্টের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। খবর পিসি ওয়ার্ল্ড সিনেট।

বিশ্বব্যাপী ৪৩ কোটি ৫০ লাখ উইন্ডোজ পার্সোনাল কম্পিউটার (পিসি), ম্যাক মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহূত হচ্ছে অ্যাভাস্ট অ্যান্টিভাইরাস। বিনা মূল্যের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে অ্যাভাস্টে মানুষ আস্থা

রাখে বেশি। সহজবোধ্য ইন্টারফেজ নতুন ফিচারের কারণে মানুষ সব ধরনের ডিভাইসের নিরাপত্তায় অ্যাভাস্ট অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করছে।

পিসিম্যাপ মাদারবোর্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ এবং বিক্রির কাজ অত্যন্ত গোপনে করেছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরেও তথ্য বিক্রি এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নাম গোপন রাখা হয়েছে। অ্যাভাস্ট তাদের সহযোগী সেবা এভিজি মিলে তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছে। পরবর্তী সময়ে জাম্পশট নামে একটি প্রতিষ্ঠান সংগৃহীত তথ্য পুনঃপ্যাকেজিংয়ের কাজ করেছে, যা বিভিন্ন জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। অ্যাভাস্টের কাছ থেকে তথ্য কিনেছে এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে গুগল, মাইক্রোসফট, ইয়েল্প, ম্যাকেঞ্জি, পেপসি, সেফোরা, হোম ডিপোট, ইনটুইট এবং বিভিন্ন খাতের আরো অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান অ্যাভাস্টকে একাধিক মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে।

বিবৃতিতে অ্যাভাস্ট জানিয়েছে, জাম্বশট এক্সটেনশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ব্রাউজিং তথ্য সংগ্রহের কাজ বন্ধ করেছে।

অন্যদিকে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, শুধু ব্যবহারকারীদের ব্রাউজিং-সংশ্লিষ্ট তথ্যই নয়; কে কতবার পর্নো সাইট ভিজিট করেছেন কোন সাইট ভিজিট করেছেন সেসব তথ্যও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করেছে অ্যাভাস্ট। অর্থাৎ ব্যবহারকারীদের সার্চ অভ্যাস এবং কোন ভিডিও কতবার দেখেছেন তার সবই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাভাস্ট এখনো তাদের বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করছে এবং সুবিধা অনুযায়ী ব্যবসায় কাজে লাগাচ্ছে।

বৈশ্বিক প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ বিক্রির অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে গুগল ফেসবুকের বিরুদ্ধেও ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। গুগলের কথাই ধরুন। কোথায় নেই গুগল! এখন গুগল কিংবা গুগলের কোনো পণ্য বা সেবা ছাড়া একটি দিন পার করার কথা কল্পনা করাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। গুগল ম্যাপ থেকে শুরু করে ইউটিউবে উঠতে-বসতে আমরা সার্চ জায়ান্টটির কোনো না কোনো সেবা বা পণ্য ব্যবহার করছি। ফেসবুকের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি অনেকটা সে রকমই।

গুগল কিংবা ফেসবুক আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা প্রভাব ফেলছে, তার প্রমাণ মিলবে পরিসংখ্যানেও। গুগলে প্রতি মিনিটে ৩৮ লাখের বেশিবার নানা বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। প্রতি মিনিটে ইউটিউবে ৪৫ লাখ ভিডিও দেখা হয়। ফেসবুকে প্রতি মিনিটে ১০ লাখ বার লগইন করা হয়। বিশাল ব্যবহারকারীর সংখ্যাই জানান দিচ্ছে, মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা দিন দিন সহজ থেকে সহজতর হয়ে পড়ছে প্রযুক্তি জায়ান্টদের জন্য।

বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহের কাজ সংঘটিত হয় কীভাবে? যখন একজন ব্যবহারকারী কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কোনো সেবার জন্য নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলছেন বা লগইন করছেন, তখনই ওই প্রতিষ্ঠানের তথ্যভাণ্ডারে তার ব্যক্তিগত সব তথ্য জমা হয়ে যাচ্ছে। অ্যাভাস্ট ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এমন কৌশলেই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তা গবেষকদের ভাষ্যে, এর বাইরেও তথ্য সংগ্রহের আরো একটিপরোক্ষপদ্ধতি রয়েছে, যেটি কিনা অনেকে জানেনই না। পিসি বা মোবাইল ডিভাইসের ব্যাকগ্রাউন্ডে সচল থাকা অ্যাপস কিংবা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও তথ্য হাতিয়ে নেয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করছে অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। দুই উপায়ে মানুষের বাস্তব জীবনের তথ্যও চলে যাচ্ছে গুগলের হাতে। পরবর্তী সময়ে সুবিধামতো এসব তথ্য নিজেদের ব্যবসার কাজে কিংবা আর্থিক সুবিধা নিতে তৃতীয় পক্ষের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন