চিড়িয়াখানার হাড্ডিসার সিংহের যত্নে এগিয়ে এলো সাধারণ মানুষ

বণিক বার্তা অনলাইন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে সুদানের রাজধানী খার্তুমের একটি পার্কে থাকা হাড্ডিসার সিংহের ছবি। এই ছবি দেখে এরই মধ্যে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এক দল পশুচিকিৎসক ও সাধারণ মানুষ। একটি সিংহী মারা গেলেও বাকিদের রক্ষা করেছে পশুপ্রেমী মানুষেরা। চাপের মুখে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত ১৮ জানুয়ারি ছেলেকে নিয়ে প্রথমবারের মতো খার্তুমের একটি পার্কে বেড়াতে যান কম্পিউটার প্রকৌশলী ওসমান সালিহ। সেখানকার সিংহের অবস্থা তাকে খুবই মর্মাহত করে। তিনি বলেন, পার্কের এক কোণায় ছোট একটি চিড়িয়াখানা দেখলাম। সেখানে চারটি সিংহ আর একটি সিংহীকে এমন করূণ অবস্থায় দেখে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। তাদের খাঁচাগুলো ছিল নোংরা এবং দুর্গন্ধে ভরা। কোনো খাবারও ছিল না তাদের সামনে। এমনকি সামনে পাত্রতে রাখা পানিও খুব নোংরা। কঙ্কালসার সিংহগুলো নড়াচড়া করতেও পারছিল না।

তিনি পার্কের রক্ষণাবেক্ষণকারীদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, খাবার কেনার পর্যাপ্ত টাকা তাদের কাছে নেই। কোনোমতে টাকার ব্যবস্থা করতে পারলেও পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় খাবার সময়মতো পৌঁছায় না। এই কথা শুনে ওসমান তৎক্ষণাত খাবারের ব্যবস্থা করতে চাইলেন। কিন্তু বিভিন্ন দপ্তরের অনুমোদনের অজুহাত দেখিয়ে তাকে তা করতে নিরুৎসাহিত করেন তারা। রাগে ক্ষোভে সিংহদের ওই অবস্থার একটি ভিডিও ও কিছু ছবি তিনি ফেসবুক ও টুইটারে আপলোড করেন। তাতে অভাবনীয় সাড়া পড়ে। বিপুল সংখ্যক মানুষ সেই ভিডিও দেখে এবং ক্ষোভ জানানোর পাশাপাশি সাহায্য করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রচুর মানুষ সেই পার্ক পরিদর্শনেও যায়।

পরদিন সকালেই ওসমান পার্ক কর্মকর্তা এবং প্রাণী সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। ওইদিন প্রায় একশ মানুষ চিড়িয়াখানায় জড়ো হয়। একটি পশুচিকিৎসক দলও সেদিন সিংহগুলোর যত্ন নিতে এসেছিল। তারা জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ওষুধের একটি তালিকা তৈরি করে এবং স্বেচ্ছাসেবীদের অনুদানে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়। অথচ মুদ্রাস্ফীতির কারণে সুদানের মানুষ নিজেদের জন্যই যথেষ্ট খাবার কিনতে পারে না।

গত ২০ জানুয়ারি ওসমান সালিহ সোস্যাল মিডিয়াতে লেখেন, অসুস্থ একটি সিংহীটিকে ক্লিনিকে নেয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। বাকি তিনটি সিংহীকে ওষুধ দেয়ায় এখন কিছুটা ভালো আছে। সিংহটাও ঠিক আছে।

ওসমান এখন প্রতিদিন চিড়িয়াখানায় সিংহগুলোর খোঁজখবর নিতে যান। তিনি আশা করেন, এই আন্দোলনের ফলে বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে সুদানের কর্তৃপক্ষ বাধ্য হবে। বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করে এরকম কয়েকটি বিদেশী এনজিওর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন তিনি। তারাও সহযোগিতা করছে বলে জানান ওসমান।

সুদানের বন্যপ্রাণী গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক খালিদ ওসমান হুায়াতাল্লা বলেন, এই দেশে বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। এখানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা কখনোই এ কাজটিকে অগ্রাধিকার দেয় না। কর্তৃপক্ষের আবহেলার কারণেও অনেক বন্যপ্রাণী বিপন্নপ্রায়।

সূত্র: ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর

ভিডিও দেখুন...

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন