চীন ভ্রমণ বাতিল করছেন পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস আতঙ্কের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পর্যটন খাতে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশীদের চীন ভ্রমণে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে চীন ভ্রমণ বাতিল করতে শুরু করেছেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চান্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে প্রতি বছরই এ সময়ে পর্যটকমুখর থাকে চীনের হোটেল আর পর্যটন কেন্দ্রগুলো। নববর্ষ উদযাপন করতে বাংলাদেশ থেকেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পর্যটক যান চীনে। কিন্তু এ বছরের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। করোনাভাইরাস আতঙ্কে ফ্লাইট, হোটেল বুকিং বাতিল করছেন পর্যটকরা। এতে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এয়ারলাইনস ও দেশীয় ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো।

ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান বিজকন হলিডেজের সিইও তসলিম আমিন শোভন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা চীন ভ্রমণে যান, তাদের বেশির ভাগই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সেখানে যান। কয়েক বছর ধরে পর্যটক ও ছাত্র হিসেবেও অনেক বাংলাদেশী দেশটিতে যাচ্ছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাস আতঙ্কে পর্যটকরা তো ভ্রমণ বাতিল করছেনই, ব্যবসায়ীরাও দেশটিতে যেতে চাইছেন না।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ও চীনের মধ্যে প্রতিদিন চারটি ফ্লাইট যাওয়া-আসা করে। দেশীয় বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলা এবং চীনের চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস ও চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস ঢাকা থেকে চীনে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। স্বাভাবিক সময়ে এসব ফ্লাইটের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ যাত্রী বাংলাদেশ থেকে চীনে যান। কিন্তু এখন সে সংখ্যা প্রতিদিনই কমছে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে চীনগামী ফ্লাইটে গড়ে ৭০ শতাংশ অকুপেন্সি থাকছে। তবে ভবিষ্যতে হয়তো যাত্রী কমতে পারে। কারণ পর্যটকরা সাধারণত অনেক দিন আগে থেকেই বেড়ানোর পরিকল্পনা করেন। হোটেল বুকিং ও এয়ারলাইনসের টিকিটও আগে থেকে কাটেন। সে হিসেবে ভাইরাস আতঙ্কে এখন হয়তো পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা চীনে যেতে চাইবেন না, যার প্রভাব কিছুদিন পর বোঝা যাবে।

তিনি জানান, তাদের চীন-বাংলাদেশ ফ্লাইট স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। তবে সরকার থেকে বন্ধের নির্দেশ দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে চীন ভ্রমণকে নিরুৎসাহিত করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এখনো এ ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। তবে জ্বর ও সর্দি-কাশি হলে হাসপাতালে যেতে হবে। আপাতত চীনে অপ্রয়োজনীয় কাজে না যাওয়ার জন্য বাংলাদেশীদের অনুরোধ করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, এ ভাইরাস খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে। এটি যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারে, সেজন্য দেশের সব বন্দরে বার্তা পাঠানো হয়েছে। সেখানে স্ক্যানার যন্ত্র বসানো হয়েছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড করা হয়েছে। এছাড়া সব জেলা হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড করার জন্য সিভিল সার্জনকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেখানে চীনারা থাকেন, সেখানে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। চীন থেকে আসা নাগরিকদের দুই স্তরে মনিটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন