বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত শেষ টি২০

হতাশায় শেষ প্রথম পর্ব

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এক যুগ পর পাকিস্তান সফরের প্রথম পর্ব হতাশায় শেষ করল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই টি২০ হেরে আগেই সিরিজ হাতছাড়া হয়েছিল। গতকাল শেষ ম্যাচে সুযোগ ছিল হোয়াইটওয়াশ এড়িয়ে সান্ত্বনার জয়টা আদায় করে নেয়ার। পাশাপাশি আগের দুই ম্যাচে দলে সুযোগ না পাওয়া ক্রিকেটারদের বাজিয়েও দেখতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু বৃষ্টির বাগড়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। তাই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলকে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতেই। অন্যদিকে - সিরিজ জিতে টি২০ র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান ধরে রাখল পাকিস্তান।

বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ শুরু থেকেই প্রত্যয়ী ছিলেন। তার ওপর র্যাংকিংয়ের শীর্ষ দল হলেও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আশানুরূপ ছিল না। তাই পাকিস্তান সফরে ভালো কিছুর আশায় বুক বেঁধেছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু মাঠে গড়ানো দুই ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কারণে লড়াইটুকুও করতে পারেনি বাংলাদেশ।

সাকিব আল হাসান মুশফিকুর রহিমের মতো দুই নির্ভরযোগ্য তারকা না থাকায় শুরু থেকেই অভিজ্ঞতার অভাবে ভুগছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশকে আশা জাগাচ্ছিল বঙ্গবন্ধু বিপিএলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স। যেখানে স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটাররা ধারাবাহিকতা দেখান। তবে বিপিএল পারফরম্যান্সের ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। বিশেষ করে, ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। লিটন-আফিফদের পারফরম্যান্স দেখে ঢাকায় থাকা বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি প্রশ্ন তুলেছেন মানসিকতা নিয়েও। তার সমালোচনা যে ভিত্তিহীন নয়, সে প্রমাণ পাওয়া যাবে পারফরম্যান্সের দিকে তাকালে। আগ্রাসী ব্যাটিং দূরে থাক, খোলস ছেড়েই বেরোতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা।

প্রথম ম্যাচে ৪৫ দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানি বোলাররা ডট নিয়েছেন ৪৭টি। টি২০ ক্রিকেট বিবেচনা করলে এতগুলো ডট রীতিমতো অপরাধের পর্যায়েই পড়ে। দুই ম্যাচে পুরো ৪০ ওভার ব্যাট করে বাংলাদেশ ছয় মেরেছে মাত্র ছয়টি। দুই ম্যাচ মিলিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম। ৫২ গড়ে করেছেন ১০৪ রান। কিন্তু ওপেনার হিসেবে নেমে তামিমের স্ট্রাইক রেট বেশ হতাশাজনক (১১৯.৫৪) প্রথম ম্যাচে তামিমের সঙ্গে জুটি গড়েন নাঈম শেখ। কিন্তু দুজনের ধীরগতির ব্যাটিং নষ্ট করে দেয় ম্যাচের মোমেন্টাম। যে কারণে পরের দিকে ব্যাটসম্যানরা যখন ব্যাট করতে নামেন, তখন শুরু থেকে আক্রমণে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু তাতেও আসেনি ইতিবাচক ফল। দুই ম্যাচের কোনোটিতেই বাংলাদেশের ইনিংস দেড়শও ছাড়ায়নি। 

দুই ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের শরীরী ভাষাও ছিল বেশ হতাশাজনক। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন ছিল, যার সমালোচনা পাকিস্তানি সাবেকরাও করেছেন। পাশাপাশি পাকিস্তানের বোলিং লাইনও ছিল ছন্দে। কিন্তু প্রতিপক্ষের বোলারদের মোকাবেলায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরআউট অব দ্য বক্সকোনো প্রচেষ্টা ছিল না। উল্টো টপঅর্ডাররা নিজেদের গুটিয়ে রেখে পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলেছেন।

সিরিজ থেকে যদি প্রাপ্তি কিছু থাকে, সেটি হচ্ছে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিং। ১৪১ রানের পুঁজিতেও বোলাররা শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচটি টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিশেষ করে, শফিউল ইসলাম, আল আমিন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব চাপের মুখে ফেলে দিয়েছিল স্বাগতিকদের। তবে বোলিংয়ে হতাশ করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। দুই ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন একটি। পাশাপাশি বেশ খরুচেও ছিলেন তিনি। বিপিএল দিয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেয়া মুস্তাফিজ প্রথম ম্যাচে ওভারে দিয়েছেন ৪০ রান এবং পরের ম্যাচে ওভার দেন ২৯ রান।

সিরিজ থেকে কোনো অর্জন দেখছেন না অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের খুব বেশি কিছু প্রাপ্তি নেই। যদি অর্জনের কথা বলি, কেবল তামিমের কথা বলতে পারি। উইকেটের চরিত্র বুঝে ব্যাটিং করেছে।ব্যাটিংয়ের সমালোচনা করে অধিনায়ক আরো বলেন, ‘ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমরা একেবারেই ভালো করতে পারিনি। উইকেট ব্যাটিং সহায়ক ছিল না, কিন্তু আমাদের আরো বেশি রান করা উচিত ছিল। বোলাররা ভালো করেছে, তারা প্রথম ম্যাচে ভালো বোলিং করেছে। কিন্তু আমাদের ব্যাটিংয়ে আরো উন্নতি করতে হবে।

সিরিজ শেষে গতকালই বাংলাদেশ দল দেশে ফিরেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন