সখিনা বিবি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র

ভবন নির্মাণের চার বছরেও শুরু হয়নি স্বাস্থ্যসেবা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ

হাওড়াঞ্চলের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ভৈষারপাড় এলাকায় নির্মাণ করা হয় সখিনা বিবি মা শিশুকল্যাণ কেন্দ্র। ভবন নির্মাণের চার বছর পেরিয়ে গেলেও জনবল সংকটের কারণে শুরু হয়নি কার্যক্রম। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সুরমার উত্তরপাড়ের লক্ষাধিক মানুষ। দ্রুত মা শিশুকল্যাণ কেন্দ্র চালুর দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকা সুরমা ইউনিয়নের ভৈষারপাড়, কৃষ্ণনগর, নলুয়া, বেরীগাঁও, বাঘবেড়, বেলাবরহাটী, বালিকান্দি, হালুয়ারগাঁও, রহমতপুর, সৈয়দপুর গ্রামসহ জাহাঙ্গীরনগর রঙ্গারচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ভৈষারপাড় এলাকায় ২০১৫ সালে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ শতাংশ জমিতে সখিনা বিবি মা শিশুকল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও চিকিৎসক নিয়োগ না থাকায় এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হচ্ছে না। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওই অঞ্চলের মানুষ।

পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা যায়, সখিনা বিবি মা শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের জন্য গত ডিসেম্বরে ১০টি পদ সৃজন করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন মেডিকেল অফিসার, দুজন পরিদর্শক, দুজন আয়া পিয়ন রয়েছেন। তবে জনবল সংকটের কারণে এসব পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি।

ভৈষারপাড় এলাকার বাসিন্দা হাফেজা খাতুন বলেন, আশা করেছিলাম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি চালু হলে চিকিৎসা নিয়ে আমাদের দুর্ভোগ কমে যাবে। কিন্তু ভবন নির্মাণের চার বছর পেরিয়ে গেলেও কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় আমরা হতাশ।

বাঘমারা এলাকার বাসিন্দা নয়ন আহমদ বলেন, ‘ভৈষারপাড়ের মা শিশুকল্যাণ কেন্দ্র চালু হলে সীমান্তের তিনটি ইউনিয়নের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে। চিকিৎসার জন্য শহরের আসা-যাওয়ার ভোগান্তি কমে আসবে। যেকোনো রোগের জন্য ছুটে যেতে হয় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে। কেন্দ্রটি চালু করা হলে আমাদের ভোগান্তি কমে যাবে।

সুনামগঞ্জ উত্তর সুরমা উন্নয়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. আব্দুর রব বলেন, সুরমা নদীর উত্তর পাড়ে ভৈষারপাড়ের অবস্থান। এটি তিনটি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন নির্মাণের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও কার্যক্রম চালু না হওয়ায় অবহেলিত এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, আমি এলাকার লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনেক চেষ্টা করে মা শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটি নির্মাণের ব্যবস্থা করেছিলাম। এটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও চিকিৎসকের অভাবে চালু করছে না কর্তৃপক্ষ। এটা দুঃখজনক। কেন্দ্র চালু হলে রোগীদের চিকিৎসাসেবায় শহরে আসা-যাওয়ার ভোগান্তি কমে আসবে।

তিনি বলেন, কার্যক্রম চালু হলে মা শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটি ২০ শয্যাবিশিষ্ট করার পরিকল্পনা আছে। তখন রোগীদের থাকার কোনো সমস্যা হবে না।

সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বিশ্বজিত কৃষ্ণ চক্রবর্তী বণিক বার্তাকে বলেন, ২০১৮ সালের এপ্রিলে সখিনা বিবি মা শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে অস্থায়ীভাবে সহকারী নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট দুজন আয়া দিয়ে নামেমাত্র চালু করা হয়েছে। দুই ভবনবিশিষ্ট মা শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে শয্যা রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে চালু আছে দুটি, নেই কেবিন। পানির ব্যবস্থা আছে কিন্তু পাইপলাইনে সমস্যা। পল্লী বিদ্যুৎ আছে কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ অকেজো। তবে জনবল নিয়োগ দেয়া হলে এসব সংকট কেটে যাবে।

সুনামগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বণিক বার্তাকে বলেন, সদর উপজেলার ভৈষারপাড় এলাকায় সখিনা বিবি মা শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের জন্য ১০টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকারিভাবে জনবল নিয়োগ দেয়া হলে খুব দ্রুত সব সমস্যার সমাধান হবে। বর্তমানে অস্থায়ীভাবে একজন সহকারী নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট দেয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যা সমাধান করতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন