সাত-সতেরো

বিশেষজ্ঞদের সাম্প্রতিক ভাবনায় সিলেটের রূপান্তর

মো. আব্দুল হামিদ

গত ১১ জানুয়ারি সিলেটের রোজভিউ হোটেলেসিলেট ইনোভেশন ডায়লগশিরোনামে এক বিশেষ সংলাপের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম আয়োজিত অনুষ্ঠানটি উপস্থিত সুধীমণ্ডলীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বেশ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। সংশ্লিষ্ট খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের মতামতের সমন্বয়ে তা যেন হয়ে ওঠে সিলেটের অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতের এক প্রতিচ্ছবি। সেখানে উচ্চারিত বিশেষ দিকগুলো বণিক বার্তার পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করাই আজকের নিবন্ধের উদ্দেশ্য।

আলোচনার শুরুতে অধিকাংশ বক্তার কথায় ছিল এক ধরনের হতাশার সুর। তাদের মতে, সিলেট অঞ্চল দীর্ঘদিন অনেকগুলো খাতে ছিল নেতৃত্বের আসনে। সরকারি নীতিনির্ধারণে যেমন একসময় অতিগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন, ঠিক তেমনিভাবে পঞ্চাশের দশক থেকে বিদেশ যাওয়ার পথপ্রদর্শক ছিলেন অঞ্চলের অধিবাসীরা। দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রেও একসময় তারা ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বিশ্বের অনেক স্থানে বাংলাদেশ বলতে তারা সিলেটকে চিনত, বাংলা বলতে সিলেটি ভাষাকে বুঝত। কিন্তু ক্রমেই সেই ধারাগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বেশকিছু সূচকে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল বর্তমানে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেয়া না গেলে ভবিষ্যতে চিত্র আরো হতাশাজনক হতে পারে। তাই সংলাপের আয়োজন ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী বাস্তবতানির্ভর।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয় সূচনা বক্তৃতায় তার অনেক দুঃখের কথা বলেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি যে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছেন না, সেটাও ব্যাখ্যা করতে সচেষ্ট হন। তার মতে, প্রক্রিয়ায় দুটো বিষয় নগরবাসীকে খুবই ভোগাচ্ছে। সেগুলো হলো, বিভিন্ন প্রকল্পে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং অতীতের বেশকিছু অপরিকল্পিত উদ্যোগের ফলে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা। সিলেট শহরের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বেশকিছু প্রকল্প এরই মধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সেগুলোর ব্যাপারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও নানা জটিলতায় সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া অতীতে এমন কিছু প্রকল্প অপরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যেগুলোর কারণে নগরবাসী প্রায়ই কষ্ট পায়। কিন্তু সেগুলো থেকে উত্তরণের পথ সহসা মিলছে না। উদাহরণস্বরূপ তিনি উপশহর এলাকায় জলাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন। তাছাড়া শহর সম্প্রসারণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না এমন কিছু জটিলতার কারণে। তবে সিলেটকে আকর্ষণীয় এক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান।

রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিলেট এগোতে পারছে কিনা, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন। একসময় দেশের নীতিনির্ধারণে অঞ্চলের মানুষের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকলেও নতুন প্রজন্ম সেই ধারা অব্যাহত রাখতে পারছে না। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতাকে তিনি বিশেষভাবে চিহ্নিত করেন। রেল যোগাযোগে নড়বড়ে অবস্থা, সড়কপথে দুর্ঘটনার প্রবণতা, জেলা সদর থেকে থানা বা দূরবর্তী অঞ্চলগুলোয় রাস্তাঘাটের বেহালের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চলছে ঢিমেতালে। আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে সেগুলো যথাযথ ভূমিকা রাখতে না পারায় তিনি কিছুটা হতাশ। তবে এক্ষেত্রে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য অবদানের তিনি প্রশংসা করেন। অন্যদিকে চা-নিলাম কেন্দ্র শ্রীমঙ্গলে থাকায় কীভাবে তা প্রত্যাশা মোতাবেক ফল দিতে পারছে না, সেটাও ব্যাখ্যা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সিলেট খুব সম্ভাবনাময় এক পর্যটন অঞ্চল। থেকে সত্যিকারের সুফল পেতে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

গ্রামীণফোনের বর্তমান সিইও ইয়াসির আজমান সিলেটকে দেশে-বিদেশে অতিপরিচিত একব্র্যান্ডহিসেবে উল্লেখ করেন। স্বতন্ত্র ইমেজ থেকে কীভাবে সুবিধা তুলে নেয়া যায়, সে বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তাছাড়া সাময়িক এই পিছিয়ে পড়াকেহুমকিহিসেবে না দেখেসুযোগহিসেবে দেখার পরামর্শ দেন। স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদ (গ্যাস, চা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ইত্যাদি) যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলার গুরুত্ব তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিকে তিনি প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জ হোলসিমের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা আসিফ ভূঁইয়া উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোকে টেকসই করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। সিলেট শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তার প্রতিষ্ঠান কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে, সেটা তিনি সংক্ষেপে তুলে ধরেন। -বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে তিনি বর্তমান ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন। তাছাড়া সম্ভাব্য উপাদানগুলো রি-সাইক্লিং রি-ইউজের দিকে সংশ্লিষ্টদের আগ্রহী করে তুলতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।

ইনোভেশনকে সাপোর্ট করার জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে মানিক মাহমুদ (হেড অব সোস্যাল ইনোভেশন অ্যান্ড অপারেশন ক্লাস্টার, এটুআই) বলেন, সিলেটকে একটি স্মার্ট শহরে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী এবং সেগুলো থেকে কীভাবে উত্তরণ হতে পারে, তা নিয়ে এই একটিমাত্র অনুষ্ঠান যথেষ্ট নয়; ধারাবাহিকভাবে এগুলো নিয়ে কথা হওয়া দরকার। যথাযথভাবে সেগুলোকে চিহ্নিত করা গেলে পরের কাজগুলো করা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে যাবে। সরকারের চেষ্টার পাশাপাশি স্থানীয় জাতীয়ভাবে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্যোগে সম্পৃক্ত করার ওপর তিনি জোর দেন। সেবা খাতে দক্ষতা অর্জনে তরুণদের আগ্রহী করা এবং প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেয়ার বিষয়ে কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে তিনি পরামর্শ দেন। বহুপক্ষীয় যৌথ উদ্যোগ ছাড়া সামগ্রিক পরিবর্তন আনা অসম্ভব বলেও তিনি মনে করেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরে সহযোগিতা করতে পারেএমন দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। সিলেট ইকোনমিক জোনকে কার্যকর করার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পরামর্শ দেন। তাছাড়া চলমান প্রকল্পহাই-টেক পার্ক’-কে সাপোর্ট করার মতো তরুণ উদ্যোক্তা কর্মী সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। প্রবাসী উদ্যোক্তা গ্রুপগুলোকে সংশ্লিষ্ট করে জনকল্যাণমূলক যৌথ প্রকল্প উন্নয়নে সুফল মিলবে বলেও তিনি মনে করেন। কল সেন্টার প্রতিষ্ঠার ধারণাটি কয়েক দশক আগে কিছু দেশে ব্যর্থ হলেও নতুনভাবে তা সুযোগ সৃষ্টি করছে বলে তিনি জানান। আগামীর পরিবর্তনগুলো শুধু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করে নয়; বরং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করার বিষয়টি সর্বদা খেয়াল রাখতে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

-বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইবিএর (ঢাবি) ডিরেক্টর প্রফেসর . সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার। ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য, জলবায়ুর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, সামাজিক বৈশিষ্ট্যের মেরুকরণ, সাইবার নির্ভরশীলতা, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ব্যবস্থাপনা ইত্যাদিকে তিনি আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন। বিশ্ব নাগরিক হিসেবে আমরা কোনোভাবেই সেগুলোর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারব না। তাছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের অনেক কিছুই লণ্ডভণ্ড করে দেবে। সস্তা শ্রম বেচে সফল হওয়ার কৌশল খুব দ্রুতই অকার্যকর হয়ে পড়বে। কারণ অটোমেশনের ফলে মানবশ্রমের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পাবে। তাহলে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন, তার জবাব যত দ্রুত সম্ভব আমাদের খুঁজতে হবে। তাছাড়া ২০৩০ সাল নাগাদ পঞ্চম শিল্প বিপ্লবও আমাদের দোরগোড়ায় কড়া নাড়বে। সে দিনগুলোয় মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া টিকে থাকা সত্যিই মুশকিল হবে।

তবে আশার কথা হলো, আগামী কয়েক দশক হবে এশিয়ার। ঘটনাক্রমে আমাদের অবস্থান হলো গ্রোথ সেন্টারের শক্তিশালী দুই প্লেয়ার চীন ভারতের মাঝখানে। ফলে এশিয়ার অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান মার্কেটে সহজেই আমরা ভাগ বসাতে পারি। সেক্ষেত্রে সিলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ভূ-কৌশলগত অবস্থানে বিরাজ করছে। ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, নেপাল ভুটানের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে অঞ্চলটি তার সম্ভাবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারে। ঐতিহাসিক সিল্ক রুট পুনরায় কার্যকর করার যে কথা উচ্চারিত হচ্ছে, তা থেকেও আমাদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেগুলো ধরতে গেলে দরকার যোগ্য নেতৃত্ব এবং তার দক্ষ অনুসারী। সেক্ষেত্রে ইনোভেশন অপরিহার্য এক উপাদান। কম খরচে মানসম্মত পণ্য সেবা দিতে পারাই হবে আগামী দিনে বিজয়ী হওয়ার মূল হাতিয়ার। ২১০০ সালের বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চাই, সে ভাবনা মাথায় রেখে এখন থেকে কাজ শুরু করা দরকার বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সিলেটে ব্যবসায় সমৃদ্ধিরগেম প্ল্যানকেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে অনুষ্ঠানের শেষভাগে এক মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সেখানে প্রচলিত ধারণার ব্যবসায়ের বাইরেও যে অসংখ্যব্যবসায় সুযোগসৃষ্টি হচ্ছে, সেগুলোকে কাজে লাগানোর ওপর জোর দেয়া হয়। ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক . কে এনামুল হকদৃষ্টিভঙ্গির বদল’-কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্র্যাকটিশিয়ানদের মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্ব তিনি বিশেষভাবে ব্যাখ্যা করেন। তাছাড়া নীতিগত সাপোর্টের অভাব কীভাবে বিভিন্ন খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাও তুলে ধরেন। যেমন কিছু খাতে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক দিতে হয় অথচ ফিনিশড প্রডাক্ট আমদানিতে সেটা দেয়া লাগে না! তাহলে স্থানীয় শিল্প বিকশিত হবে কীভাবে? সিলেটেইনোভেশন হাবপ্রতিষ্ঠা সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তাদের সমন্বিত করার বিষয়টিকে তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মতামত দেন।

অন্যান্য আলোচক আরো কিছু বিষয়ের ওপর জোর দেন। সেগুলো হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নিত্যনতুন আইডিয়া আসা জরুরি। কিন্তু আমাদের বহু প্রতিষ্ঠান এখনো বিগত শতাব্দীর ধারণা, টেক্সট শিক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে পড়ে আছে। সরকারি খাতে ইনোভেশনের সুযোগ কম, গতিও খুব ধীর। তাই বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে, সরকারের কাছে পলিসি সাপোর্ট আদায় করতে হবে। সমাজের বৈষম্য হ্রাসে অনগ্রসর ছিন্নমূল গোষ্ঠীকে ধারায় যুক্ত করতে হবে, নইলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। সরকারি অর্থায়নে সম্পন্ন গবেষণাগুলো বাস্তবে কাজে লাগে এমন বিষয়ে হওয়া দরকার।

তাছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় সেটা করতে অর্থেরও দরকার হয় না। যেমন প্রতি বছর যদি সিটি করপোরেশন বিভিন্ন (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়ার্ড, হাসপাতাল ইত্যাদি) ক্যাটাগরিতে একটি করে প্রতিষ্ঠানকে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন পরিবেশবান্ধব বলে ঘোষণা করে, তবে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান নিজ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য সচেষ্ট হবে। এতে পুরো শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মান বাড়বে। অন্যদিকে সিলেটকে প্রমোট করতে গত ৭০০ বছরের ইতিহাসকেন্দ্রিক বছরব্যাপী প্রচারণামূলক উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। হজরত শাহজালালের () আগমনের কাল থেকে পর্যায়ক্রমে সিলেটের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখা বিভিন্ন দিক (ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, উদ্যোগ, আন্দোলন-সংগ্রাম ইত্যাদি) নিয়ে অসংখ্য উৎসবও আয়োজন হতে পারে।

পরিশেষে, পর্যটন হলো এমন এক খাত, যাতে কম বিনিয়োগে, প্রকৃতি পরিবেশকে অক্ষত রেখে দ্রুততম সময়ে ফল পাওয়া সম্ভব। প্রতি বছর দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ ছাড়াই লক্ষাধিক মানুষ অঞ্চলে ভ্রমণ করতে আসছে। অথচ তাদের দেখভালের জন্য সত্যিকার অর্থে কোনো অভিভাবক নেই। প্রশাসনের যারা বিষয়গুলোর দেখভাল করেন, তারা নিজেদের দাপ্তরিক কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ফলে পর্যটন উন্নয়নে আলাদাভাবে পরিকল্পনা করা, লেগে থেকে প্রকল্প বের করে আনা বা সেগুলোর বাস্তবায়ন করার সুযোগ সীমিত। তাই আমার প্রস্তাব হলো, বৃহত্তর সিলেটের পর্যটন উন্নয়নে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা (হতে পারেসিলেট পর্যটন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’) গঠন করা হোক। বছরব্যাপী বিদ্যমান সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্রের উন্নয়ন, প্রমোশন সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সংস্থাটি কাজ করবে।

হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আগামীতে উদ্ভাবনী, সৃজনশীল, গঠনমূলক কাজে নেতৃত্ব দিয়ে সিলেট একটি মডেল অঞ্চল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে তবেই এমন সংলাপ বা আয়োজন হবে অর্থপূর্ণ।

 

মো. আব্দুল হামিদ: শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন