দাবদাহের পরও এলএনজির শীর্ষ রফতানিকারক অস্ট্রেলিয়া

বণিক বার্তা ডেস্ক

তিন বছর টানা খরা ভাব বজায় থাকায় পর বিদায়ী বছরের শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত উষ্ণ। বছরজুড়ে বাড়তি তাপমাত্রার সঙ্গে গত সেপ্টেম্বর থেকে দেশটিতে দেখা দেয় তীব্র দাবানল, যা সাম্প্রতিক সময়ে এসে মারাত্মক আকার ধারণ করে। দাবানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির কৃষি প্রাণ-প্রতিবেশ। রেহাই পাচ্ছে না খনিজ খাতও। গত বছর বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গম রফতানিকরাক থেকে প্রথমবারের মতো পণ্যটি আমদানিতে বাধ্য হয় অস্ট্রেলিয়া। কয়লা উত্তোলনে এরই মধ্যে নিম্নমুখী প্রবণতা পড়তে শুরু করেছে। তবে সব সংকটের মধ্যেও দেশটির জন্য মিলেছে সুখবর। বিদায়ী বছরে প্রথমবারের মতো বার্ষিক ভিত্তিতে বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) রফতানিকারকে পরিণত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। খবর রয়টার্স অয়েলপ্রাইসডটকম।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক জ্বালানিবিষয়ক কনসালটেন্সি এনার্জিকুইস্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালজুড়ে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে কোটি ৭৫ লাখ টন এলএনজি রফতানি হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় যা ১১ দশমিক শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে তা পণ্যটির শীর্ষ রফতানিকারক দেশ কাতারের চেয়ে বেশি।

এলএনজি বাণিজ্যে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে অনেক দিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। অব্যাহত প্রচেষ্টার জেরে এর আগে জ্বালানি পণ্যটির মাসভিত্তিক রফতানিতে কয়েকবার শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে দেশটি। তবে বার্ষিক ভিত্তিতে শীর্ষ রফতানিকারক হিসেবে এটাই দেশটির প্রথম অর্জন।

এনার্জিকুইস্টের প্রধান নির্বাহী গ্রামি বেথুনে জানান, এর আগেও অস্ট্রেলিয়া এলএনজি রফতানিতে কাতারকে টপকে গেছে। তবে তা ছিল মাসভিত্তিক রফতানি। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো দেশটি বার্ষিক ভিত্তিতে এলএনজি রফতানির বৈশ্বিক তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে।

এনার্জিকুইস্টের বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে কাতারের এলএনজি উৎপাদনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে বিদায়ী বছরে দেশটি সব মিলয়ে কোটি ৫০ লাখ টন এলএনজি উৎপাদন করতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ লাখ টন কম।

গ্রামি বেথুনে জানান, মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার বার্ষিক এলএনজি উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে কোটি ৮০ লাখ টনে, যেখানে কাতারের রয়েছে কোটি ৭০ লাখ টন। খাতে অস্ট্রেলিয়ার সক্ষমতা এখন অবধি ক্রমেই বাড়ছে বলে জানান তিনি।

প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্কলন অনুযায়ী, গত বছর এলএনজি রফতানি থেকে অস্ট্রেলিয়ার আয় দাঁড়াতে পারে হাজার ৯০০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার। আগের বছরে খাতে দেশটির আয় ছিল  হাজার ৩৩০ কোটি ডলার। যেখানে এক দশক আগে অর্থাৎ ২০১০ সালে পণ্যটি রফতানি বাবদ দেশটির আয় ছিল মাত্র ৯৪০ কোটি মার্কিন ডলার। সে হিসাবে এলএনজি রফতানিতে এক বছর এক দশকের ব্যবধানে দেশটির আয় যথাক্রমে ৫৭০ কোটি হাজার ৯৬০ কোটি ডলার বেড়েছে।

দেশটির ফেডারেল রিসোর্স মন্ত্রী ম্যাট ক্যানাভান জানান, এলএনজি রফতানি খাত অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে। এছাড়া খাতটির ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে খাতে প্রচুর কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলে এখন পর্যন্ত দেশটির এক কোটি হেক্টর বা কোটি ৭০ লাখ একর জমি পুড়ে গেছে। এসব জমির বেশির ভাগই ছিল বন, গরু কিংবা ভেড়ার চারণভূমি। দাবানলে ২৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আগুনে পুড়ে মারা গেছে লক্ষাধিক গবাদিপশু। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির প্রায় পাঁচ কোটি পশু-পাখি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন