ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণ

দুর্বল অর্থনীতি ধামাচাপা দিতে জাতি-বিভেদের নীতি মোদির

বণিক বার্তা ডেস্ক

শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ শীতের রাতেও নয়াদিল্লি পুলিশের প্রধান কার্যালয় ঘিরে রাখছেন বিক্ষোভরত ছাত্র-ছাত্রীরা। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন এবং বুদ্ধিদীপ্ত পোস্টার, ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন। মাঝে মাঝে পাকিস্তানের বিদ্রোহী কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের কবিতা আবৃত্তি করছেন। তাদের অব্যাহত এ বিক্ষোভ কর্মসূচির একটাই উদ্দেশ্য—বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাতিল করা। সিএএ হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকারের মুসলিমবিদ্বেষী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন তার বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীরা। 

দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা অর্থনীতির ভবিষ্যৎ ও আর্থিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে গিয়েও দাঁড়িয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়নে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। পাঁচ বছর আগে ক্ষমতা গ্রহণ করা মোদি সরকারের জন্য এটি সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা দিয়েছে। 

অক্ষয় বাজাজ নামে এক পিএইচডি শিক্ষার্থী বলেন, তাদের (মোদি সরকার) অর্থনৈতিক কর্মসূচি বিপর্যয়কর। কানপুরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (আইআইটি) বিক্ষোভের আয়োজনকারী ২৯ বছর বয়সী এ ছাত্রনেতা বলেন, কোনো চাকরি নেই, প্রবৃদ্ধিতে বড় আকারের পতন হচ্ছে এবং শাকসবজির দাম আকাশচুম্বী হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

৩০ মাস ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তরুণদের বিক্ষোভ চললেও সরকারের বিতর্কিত আইনটি নিয়ে সর্বশেষ যোগ দেয় ভারতে ত্রিশের নিচে থাকা তরুণদের একটি বড় অংশ। চলতি সপ্তাহে বৈরুতের রাজপথেও তরুণদের বিক্ষোভে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস নিক্ষিপ্ত হয়েছে। হংকংয়ের রাজপথ এখনো ছাড়েননি ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে দখল করে রাখা তরুণরা। নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে বিভিন্ন দেশের সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নয় তরুণদের বড় একটি অংশ।

প্রতিবেশী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তিনটি দেশ থেকে পালিয়ে আসা সংখ্যালঘু শরণার্থীদের দ্রুত নাগরিকত্ব দিতে সিএএ পাস ও কার্যকর করে বিজেপি সরকার। মুসলিমদের টার্গেট করে মোদি সরকার এ আইনটি সংশোধন করে বলে অভিযোগ সমালোচকদের। সংবিধানবিরোধী এ পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে রাজপথে নামেন শিক্ষার্থী, শিল্পী, লেখক-বুদ্ধিজীবী ও বলিউডের চলচ্চিত্র কর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ। দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ডিসেম্বরে পুলিশের আগ্রাসী পদক্ষেপ এবং ছাত্রদের মারধর ও ক্যাম্পাসে ভাংচুরের পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে। ভারতের অভিজাত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলেন ছাত্ররা। বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দাবি, এ আইনটি ভারতের সংবিধান লঙ্ঘন করছে, কারণ সেখানে সব ধর্মের মানুষকে সমান মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তাদের আশঙ্কা মুসলমানদের দরিদ্র একটি অংশকে নাগরিকত্ববঞ্চিত করতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) ও সিএএর মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে মোদি সরকার। সরকার সিএএ ও এনআরসি নিয়ে যে শক্তি ব্যয় করছে, তা বাদ দিয়ে দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকাতে এবং ৪৫ বছরের সর্বোচ্চ বেকারত্ব নিরসনে দেয়া উচিত। 

গত মাসে জীবনে প্রথমবারের মতো কোনো বিক্ষোভে অংশ নেয়া মিহির জৈন বলেন, জনগণের ভোগান্তিতে কর্ণপাত না করে এমনতর বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে সরকার। ২৬ বছর বয়সী এ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আরো বলেন, আমরা যদি তাদের এভাবে পরিচালনা করতে দিই, তাহলে ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা কল্পনা করতে পারছি না। 

গত সপ্তাহেও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। মুম্বাই ও নয়াদিল্লিতে অন্তত দুই ডজন মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন