প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ঋণ সংকট কমাতে হবে ভারতকে

বণিক বার্তা ডেস্ক

দুর্বল অবকাঠামো, অভ্যন্তরীণ চাহিদার সংকট, বিনিয়োগের অভাবসহ নানা সমস্যায় ধুঁকছে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। তবে ঋণ সংকট কমানো গেলে দেশটির শ্লথ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাঙ্গা করা সম্ভব হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

এদিকে ভারতের চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৬ দশমিক ১ থেকে কমিয়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নির্ধারণ করেছে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফসি) দুর্দশা ও ঋণ প্রবৃদ্ধি কমায় দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রত্যাশার তুলনায় হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমএফ।  উল্লেখ্য, এনবিএফসি সংক্ষেপে ছায়া ব্যাংক নামে পরিচিত। 

ঋণ সংকট দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সমস্যাটির দ্রুত সমাধান দরকার বলে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সমস্যাটি জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন মুম্বাইভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক সিংহী অ্যাডভাইজরসের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহেশ সিংহী। তিনি বলেন, ঋণ সংকটের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা ভাবতে হবে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে তীব্র কর্মসংস্থান সংকট তৈরি হবে। এছাড়া ভোক্তা চাহিদা সংকুচিত ও বিনিয়োগ কমবে বলেও জানান তিনি।   

এনবিএফসির দুরবস্থার কারণে দেশটিতে ঋণ সংকট মাথাচাড়া দিয়েছে। খাতটির বৃহত্তম কোম্পানি আইএলঅ্যান্ডএফএস ২০১৮ সালে ঋণখেলাপি হওয়ার মাধ্যমে দেশটিতে এ সমস্যার সূত্রপাত হয়। আইএলঅ্যান্ডএফএসের দেউলিয়াত্বের ঘটনা লেহম্যান ব্রাদার্স হোল্ডিংসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ১৫৮ বছরের পুরনো মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংকটি ২০০৮ সালে দেউলিয়াত্ব সুরক্ষার জন্য আবেদন করে। আর এ সময়ই শুরু হয় বৈশ্বিক আর্থিক সংকট, যা ১৯২৯ সালের গ্রেট ডিপ্রেশনের চেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

আইএলঅ্যান্ডএফএস দেউলিয়া হয়ে পড়ায় নড়েচড়ে বসে ভারতের বিনিয়োগকারী ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ অবস্থায় ক্যাপিটাল মার্কেটগুলো এসব প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ায় ক্ষীণ হয়ে আসে অর্থনীতিটির নগদ অর্থের প্রবাহ। তবে ব্যাংকিং খাতের নিজস্ব চ্যালেঞ্জের কারণেই ভারতের ঋণ সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তবে মন্দ ঋণ ক্রমেই বাড়ায় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ছায়া ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেন কমিয়ে আনে বলে জানান তারা। 

এদিকে ব্যালান্স শিট ঠিক রাখতে এবং সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য গত কয়েক বছরে ভারত সরকার নিজেদের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় কয়েক কোটি ডলার প্রণোদনা দেয়। আগামীতে যথেষ্ট বিবেচনার ভিত্তিতে ঋণদান ও মন্দ ঋণ কমাতে খাতটিতে এতটা বিপুল পরিমাণে প্রণোদনা দেয় দেশটির সরকার। 

দেশটির চলমান অর্থনৈতিক শ্লথ অবস্থায় ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অতিসতর্ক হয়ে পড়ায় বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ পাওয়া আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দেশটির চলমান অর্থনৈতিক শ্লথ অবস্থা আরো গভীর হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছায়া ব্যাংক বা করপোরেট খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ায় দেশটির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে ব্যবসা করা ক্রমেই জটিল ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে বলে জানান সিংহী। 

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতা পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। এটি দেশটির ঘনীভূত তারল্য সংকট সমাধানে সরকারের রূপরেখা উপস্থাপনের মোক্ষম সুযোগ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। দ্য ন্যাশনাল অবলম্বনে


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন