শিল্পীরা গতানুগতিক কাজ না করলে ভালো গল্প তৈরি হবে

নাজিয়া হক অর্ষা। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মিডিয়া জগতে পা রাখেন। মেধা অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে মিডিয়ায় শক্তপোক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন অভিনেত্রী। সম্প্রতি টকিজের সঙ্গে কথা হয় অর্ষার। জানালেন তার বর্তমান কাজ, নাটক, চলচ্চিত্রসহ খুঁটিনাটি নানা বিষয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইসা জান্নাত

শুরুতেই মুহূর্তের ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাই।

প্রতিদিন দুটি ধারাবাহিকে কাজ করছি। সম্প্রতি সকাল আহমেদের ভদ্রপাড়া রোমান রুমির ফাইভ স্টার মেস ধারাবাহিকের কাজ শেষ করেছি। ফাইভ স্টার ধারাবাহিকটি এখনো অনএয়ারে যায়নি। এর মাঝে এনটিভিতে প্রচারিত ঘুমন্ত শহর ধারাবাহিকের শুটিং শেষ করা হয়েছে। নাটকের পাশাপাশি হারেস বুমেরাংদুটি ওয়েব সিরিজে কাজ করেছি।

সম্প্রতি আপনি একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। কাজটি সম্পর্কে জানতে চাই।

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটির নাম হাইওয়ে। শান স্বপন পরিচালিত ভ্রমণকাহিনীনির্ভর ছবি। ছবিতে তিনটি চরিত্র রয়েছে। আমি, আমার স্বামী আমাদের একজন বন্ধু। তিনজনই তিন রকম চরিত্রের। আমরা সবাই ভ্রমণে বের হই। ছবির গল্পও শেষ হয় একটা ব্রিজে গিয়ে। মূলত তিনজন মানুষের রহস্যজনক এক জার্নিকে ঘিরেই ছবির গল্প এগিয়ে যায়। ছবিটি এখন বিভিন্ন উৎসবে অংশগ্রহণ করছে।

বর্তমানে টেলিভিশনের পাশাপাশি নাটক দেখার অনেক প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

বিকল্প মাধ্যমগুলো আমি ইতিবাচকভাবে দেখি। যুগের সঙ্গে মাধ্যম পরিবর্তন হবে এটা স্বাভাবিক। যত অপশন তৈরি হবে, মানুষের পছন্দানুযায়ী বিষয়বস্তু বেছে নেয়ার তত সুযোগ ঘটবে। আমার কাছে প্রেজেন্টেশনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। মাধ্যমগুলোর সঙ্গে সহজেই যুক্ত হতে পারছি কিনা, প্রয়োজনীয় কনটেন্ট পাচ্ছি কিনাএগুলো আমার কাছে গুরুত্বের মনে হয়।

এছাড়া ইউটিউব বা ফেসবুকের মাধ্যমে এখন সহজেই দর্শকের প্রতিক্রিয়া জানা যায়। কাজেই আমরা আমাদের কাজের প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারছি। মাধ্যমগুলোয় বিজ্ঞাপনের ঝামেলা নেই। ছোটবেলা থেকে আমরা টেলিভিশন দেখে বড় হয়েছি। তাই মাঝেমধ্যে টেলিভিশনে নাটক, চলচ্চিত্র দেখাটাও মিস করি।

এখনকার নাটকের মান নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে আপনি বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ভালো মন্দদুই ধরনের কাজই হচ্ছে। তবে ভালো কাজের সংখ্যাটা একটু কমে গেছে। বাজেট স্বল্পতা, সময়ানুবর্তিতা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ঘাটতি রকম বেশকিছু জটিলতা রয়েছে। তার পরও গতানুগতিক কাহিনীর বাইরে ভিন্নধর্মী গল্পের নাটকও তৈরি হচ্ছে।

আপনি বললেন, ভালো নাটকের সংখ্যা কমে গেছে, সংখ্যা বৃদ্ধিতে অভিনয়শিল্পীদের দিক থেকে কী করণীয় বলে আপনি মনে করেন?

এগুলো এক ধরনের টিম ওয়ার্ক। তবে শিল্পীদের নিজস্ব জায়গা থেকেনাবলতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিল্পী যদি গতানুগতিক কাজ করতে অনিচ্ছা পোষণ করেন, তাহলে ভিন্ন ধারার গল্প তৈরি হবে। সেসঙ্গে ভালো কাজেরও সুযোগ ঘটবে। সবাই মিলে যদি আমরা এটার চর্চা করি, তাহলে একটা পরিবর্তন আসবে। শিল্পীদের দিক থেকে এটা করণীয় বলে আমার মনে হয়।

যেকোনো সামাজিক ইস্যুতে শিল্পীদের সংঘবদ্ধতার জায়গাটি কেমন বলে আপনার মনে হয়?

সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে শিল্পীদের মধ্যে সংঘবদ্ধতা আছে। আমরা বেশ কয়েকটি আন্দোলন করেছি। সেখানে শিল্পী, নির্মাতা সবাই ছিলেন।নিরাপদ সড়ক চাইআন্দোলনের সময়ও শিল্পীরা সবাই একত্রিত হয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম। সম্প্রতি সময় মেনে চলা, শিল্পীদের পারিশ্রমিক রকম বেশকিছু বিষয় নিয়ে আমরা কয়েকটি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গেছি। এসব আন্দোলনে পুরনো, নতুন সব প্রজন্মের শিল্পীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল।

এখন নতুন যারা নাটকে অভিনয় করতে আসছেন, তাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?

আমি অনেক নতুন শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছি। আমার অভিজ্ঞতা দারুণ। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। নবীনরা অনেক বেশি বুদ্ধিমান। তাদের জানার পরিধি আমাদের থেকে বেশি। বরং তাদের সঙ্গেই আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হয়।

চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে কিছু ভেবেছেন কি?

দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছি। কাজ করব কিনা, এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আমার মনে হয় চলচ্চিত্রে কাজ করলে ঠিকঠাকভাবে করা উচিত। ভালো গল্পের অপেক্ষায় আছি। তবে আমার কাছে চলচ্চিত্রের থেকে ওয়েব সিরিজের গল্পগুলো বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়।

অভিনয় নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।

ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি না। তবে একটি একাডেমিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ইচ্ছে আছে। যে প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে শিক্ষার্থীরা অভিনয় শেখার জন্য ভর্তি হতে পারবে। বাইরের অনেক দেশে রকম সুযোগ রয়েছে।

যদি কখনো অভিনয় থেকে সরে আসতে হয়, তখন কী করবেন?

আমার ঘুরতে ভালো লাগে। সম্ভব হলে একটি মুভিং রেস্টুরেন্ট দেব। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে খাবার সরবরাহ করব। তাহলে আমার একসঙ্গে দুটি কাজ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন