ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

রঙিন আয়োজনে দেড় যুগ পূর্তি

ফিচার প্রতিবেদক

কেউ ব্যস্ত নিজের বিভাগের বৈচিত্র্য অন্য বিভাগের শিক্ষার্থী অতিথিদের কাছে তুলে ধরতে, কাউকে দেখা যায় মঞ্চে নাচ-গান পরিবেশন করতে, আবার কেউ অভিনয় দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করছেন। এমনই নানা রঙে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় যুগ পূর্তি উদযাপন করেছেন। অনুষ্ঠানের দিনগুলো রঙিন করে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে আয়োজনের কমতি করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও।

অষ্টাদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উৎসবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল শিক্ষার্থী, অভিভাবক আমন্ত্রিত অতিথিদের মিলনমেলায়। প্রতি বছর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উৎসব একদিনে অনুষ্ঠিত হলেও এবারই প্রথম ছিল চার দিনব্যাপী আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদের অধীনে চারদিন ধরে উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিনের আয়োজনে উৎসবে মেতে উঠেছিলেন প্রকৌশল অনুষদের শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় দিন ছিল অ্যালাইড হেলথ সায়েন্স অনুষদ এবং মানবিক সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের যৌথ আয়োজন। তৃতীয় দিন ছিল ব্যবসায় উদ্যোক্তাবৃত্তি অনুষদের শিক্ষার্থীদের উৎসব, আর চতুর্থ সমাপনী দিনে ছিল বিজ্ঞান তথ্যপ্রযুক্তি অনুষদের আয়োজন। প্রতিদিনের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান . মো. সবুর খান। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক . ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক . এসএম মাহবুব উল হক মজুমদার, স্থায়ী ক্যাম্পাসের ডিন অধ্যাপক . মোস্তফা কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছায়াঘেরা, পাখির কলকাকলিতে মুখরিত পরিবেশে ১৫০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসেই ২২ থেকে ২৫ জানুয়ারি চার দিনব্যাপীঅষ্টাদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসবঅনুষ্ঠিত হয়। উৎসবের প্রথম দিন ২২ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীমুজিব বর্ষউদযাপনের অংশ হিসেবে ১০০টি ঘুড়ি উড়িয়ে উৎসব উদযাপনের উদ্বোধন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।

দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশবরেণ্য সাংবাদিক প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ। তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তব্য তুলে ধরেন বিজিএমইর সভাপতি মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক . রুবানা হক। এছাড়া তিনি আনিসুল হক ভবনের উদ্বোধন করেন। সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের বোন জেসমিন ওয়াফা।

শেষ দিনে সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যেই ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর পদভারে উচ্ছ্বাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে। সবার মাঝে ছিল সাজসাজ রব। শিক্ষার্থীদের মূল আকর্ষণ ছিল সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্মাণশৈলীতে নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবন। সারা দিন ভবন ঘিরে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলের অন্ত ছিল না। চলে অবিরাম ফটোসেশন। ক্যাম্পাসের সম্মুখভাগ, প্রশস্ত সিঁড়ি, যে যেখানে পেরেছেন, ক্যাম্পাসকে একান্ত নিজের করে ক্যামেরা বা মোবাইলে ছবি তুলে নিয়েছেন। কেউ কেউ আবার শুরু করেছিলেন বাস্কেট বল খেলা, কেউ আবার ছিলেন দাবাকোর্টে ব্যস্ত। কর্তৃপক্ষ যেমন নানা আয়োজনের কোনো কমতি রাখেনি, তেমনই শিক্ষার্থীরাও তাদের প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে দেরি করেননি। নলেজ ভ্যালিতে চলে জম্পেশ আড্ডা। মাঠের একপাশে স্টলগুলোয় সারা দিন চলেছে বিভিন্ন বিভাগের পিঠা প্রদর্শনী, রক্তদান কর্মসূচিসহ নানা আয়োজন।

চারদিনের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল ঘুড়ি উৎসব, রক্তদান কর্মসূচি, মোটরবাইক শোডাউন, বাস শোভাযাত্রা, আলোচনা অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণ, বনভোজন, পিঠা উৎসব, প্রকল্প প্রদর্শনী, সেলিব্রিটি শো, খেলাধুলা, ফান ইভেন্টস, র্যাফল ড্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস সেজেছিল বর্ণিল সাজে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২০১১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক আবাসিক সুবিধাসহ শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কোলাহলমুক্ত ছায়া-সুনিবিড় শান্ত সবুজ পরিবেশ, আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত খেলার মাঠ, মিলনায়তন, আবাসিক হল, সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম, বাস্কেটবল গ্রাউন্ড, টেনিস কোর্টসহ একাডেমিক প্রশাসনিক ভবন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের গান আর সুরের মূর্ছনা শিক্ষার্থীদের দারুণভাবে মাতিয়ে তোলে। একে একে অনেক গান পরিবেশনের পর বিকালের সূর্য তার লাল আভা ছড়াতে থাকে। ক্রমে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই বেজে ওঠে বিদায়ের সুর। ভাঙে মিলনমেলা। ক্লান্ত পাখিরাও ফিরতে শুরু করে আপন নীড়ে। শিক্ষার্থীরা একে একে অপেক্ষমাণ বাসগুলোতে করে আপন গন্তব্যে ফিরে যান। আবার এক বছর পর এমনই আরো একটি সফল আয়োজনের প্রত্যাশায় সবাই বাড়ি ফিরেছেন। ১৫ হাজার শিক্ষার্থী পুরো আয়োজনকে রঙিন করে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখবেন অনেকদিন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন