প্রথম টি২০-তে ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হলেও বোলাররা প্রতিরোধ গড়ে দারুণভাবে। কিন্তু সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে সেই প্রতিরোধও দেখা গেল না। লাহোরে অসহায় আত্মসমর্পণে টানা দুই ম্যাচ হারার সঙ্গে হাতছাড়া হলো সিরিজও। এখন শেষ ম্যাচে আগামীকাল হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে মাঠে নামবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচের মতো গতকালও বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল আশ্চর্যজনকভাবে ধীরগতির। পাকিস্তানি বোলারদের যেন পড়তেই পারছিল না বাংলাদেশের টপঅর্ডার। কখনো কখনো মনে হচ্ছিল, টি২০ খেলতেই ভুলে গেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। শুরুতে খোলসবন্দি থাকলেও পরের দিকে গিয়ে যা একটু চেষ্টা করছিলেন তামিম। কিন্তু তার ফিফটির পরও বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৩৬ রানের বেশি এগোয়নি। তবে জবাব দিতে নেমে দুই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজ দেখিয়ে দিলেন কীভাবে এ উইকেটে ব্যাট করতে হয়। পাকিস্তান যখন জয়ের বন্দরে নোঙর করে, তখনো তাদের হাতে ৯ উইকেট ও বাকি ২০টি বল।
বাংলাদেশের মামুলি সংগ্রহের জবাবে পাকিস্তানের শুরুটাও ভালো ছিল না। শফিউল ইসলামের বলে টাইমিং গড়বড় করে মিডঅফে ক্যাচ তুলে দেন এহসান আলী। তবে বল হাতে বাংলাদেশের সাফল্য বলতে এটুকুই। বাকি সময়টা হতাশায় পুড়তে হয়েছে মুস্তাফিজদের। আগের দিন শূন্য রানে আউট হওয়াতেই যেন এদিন তেতে ছিলেন বাবর। হাফিজ কিছুটা শ্লথ শুরু করলেও বাবর ছিলেন আক্রমণাত্মক। পরে অবশ্য ঝড় তোলেন হাফিজও। এমনকি ম্যাচ শেষে পেরিয়ে যান বাবরকেও। বাংলাদেশ বোলারদের দারুণভাবে মোকাবেলা করে এ দুজন দলকে জয় এনে দেন মাত্র ১৬.৪ ওভারে। বাবর অপরাজিত থাকেন ৪৪ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৬৬ রানে। ৪৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৬৭ রান করেন হাফিজ। বাংলাদেশের বোলারদের মাঝে ২৭ রান দিয়ে একমাত্র উইকেটটি নেন শফিউল।
এর আগে প্রথম ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মাহমুদউল্লাহ। আগের ম্যাচে খেলা মোহাম্মদ মিঠুনকে সরিয়ে দলে আনা হয় বিপিএল মাতানো মেহেদী হাসানকে। ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশ ভরসা রাখে তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ নাইম শেখের ওপরই। আগের দিন ধীরে খেলার কারণে সমালোচিত হওয়া এ জুটি অবশ্য এদিন বেশিক্ষণ টিকতেই পারল না। শাহীন শাহ আফ্রিদির দুর্দান্ত এক বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নাইম। ব্যাটিং অর্ডার বদলে দুই নম্বরে তুলে আনা হয় অলরাউন্ডার মেহেদীকে। তবে মাহমুদউল্লাহর এই টোটকাও কাজে আসেনি। উইকেটে এসে হাঁসফাঁস করতে থাকা মেহেদী ফিরে যান ১২ বলে ৯ রান করে। মোহাম্মদ হাসনাইনের দারুণ এক বাউন্সে মেহেদী ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক রিজওয়ানের হাতে।
বিপিএলে ধারাবাহিকতা দেখানো লিটন দাসের ওপর এবার চোখ ছিল সবার। ২২ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশও বিপর্যয় থেকে বাঁচতে ভরসা রেখেছিল তার ওপর। কিন্তু তিনিও ফিরে আসেন চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়ে। ৮ রান করার জন্য লিটন খরচ করেন ১৪ বল। তিনি ফেরেন শাদাব খানের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে। তামিম ও আফিফ হোসেনের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। যথারীতি শ্লথ গতিতে হলেও এ দুজন মিলে দলকে নিয়ে যান ৮৬ রানে। এরপর অবশ্য ২০ বলে ২১ রান করা আফিফ ফিরে যান হাসনাইনের বলে হারিস রউফকে ক্যাচ দিয়ে।
আফিফ ফিরে গেলেও দেড় বছর পর টি২০-তে ফিফটির দেখা পান তামিম। এর আগে ২০১৮ সালের আগস্টে সর্বশেষ ফিফটি করেন এ ওপেনার। ফিফটির পর তামিম নিজের ইনিংস টেনে নিয়ে যেতে পারেন ৬৫ রান পর্যন্ত। ৫৩ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় এ রান করেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ করেন মাত্র ১২ রান। বাংলাদেশ থামে ৬ উইকেটে ১৩৬ রানে। ম্যাচসেরা পাকিস্তান দলনায়ক বাবর।
