করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে চীনের ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্প

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এরই মধ্যে বিশাল এক জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। তবে সবচেয়ে মারাত্মকভাকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির ভ্রমণ পর্যটন খাত। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া চীনের নতুন বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে চীনের ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ  দেশটির বিভিন্ন অংশে ভ্রমণ করত। উড়োজাহাজ সংস্থা, হোটেল পর্যটন কেন্দ্রগুলোর জন্য মৌসুমটা হওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে ব্যস্ততম মৌসুম। কিন্তু অবাধে ভ্রমণে বড় আকারের বিধিনিষেধ আরোপ এবং চীনা নাগরিকদের বাড়িতেই অবস্থানের নির্দেশনায় বৃহত্সংখ্যক ফ্লাইট হোটেল বুকিং বাতিল হচ্ছে। খবর রয়টার্স।

ভাইরাসটির সংক্রমণে এরই মধ্যে চীনে ৪১ জনের প্রাণহানি হয়েছে এবং বিশজুড়ে হাজার ২০০-এর মতো মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।

অনেক এয়ারলাইনস তাদের গ্রাহকদের পুরো অর্থ ফেরত দিচ্ছে বা অতিরিক্ত অর্থ ব্যতিরেকে পুনরায় বুকিংয়ের সুযোগ দিচ্ছে। এছাড়া প্রধান হোটেল চেইনগুলো ভ্রমণে বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলার চেষ্টা করছে।

বাতিল ফ্লাইটের জন্য গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে চীনের বেসামরিক বিমান প্রশাসনের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির তিনটি প্রধান উড়োজাহাজ সংস্থা চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস চায়না এয়ারের শেয়ারদরে পতন হয়েছে। চলতি সপ্তাহে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের শেয়ারদরে পতন হয়েছে ১৩ শতাংশ।

হংকংয়ের প্রথম এয়ারলাইনস হিসেবে গ্রাহকদের নিজেদের সুবিধামতো উহানে গমন বা নির্গমনের ফ্লাইট বাছাইয়ের সুবিধা দিয়েছে ক্যাথে প্যাসিফিক। একই সঙ্গে ফ্লাইট চলাকালে কেবিন ক্রুদের সার্জিক্যাল মাস্ক পরিধানেরও অনুমতি দিয়েছে তারা।  

চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে চীনের বেশ কয়েকটি অংশে ছড়িয়ে পড়ে ফ্লুর মতো ভাইরাসটি। আন্তর্জাতিকভাবে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসটির সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

উহানে সব হোটেল বুকিং, গাড়ি ভাড়াসেবা অন্যান্য টিকিট বুকিং বাতিলের ফি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে চীনের বৃহত্তম অনলাইন ভ্রমণসেবা প্রতিষ্ঠান ট্রিপ ডটকম। উহানে বা চীনের অন্যান্য অংশে যেসব পর্যটক তাদের হোটেল বুকিং বাতিল করতে চান, তাদের অর্থ ফেরত দিচ্ছে বিভিন্ন হোটেল গ্রুপ। নতুন বছরের ছুটিতে অতিথিরা তাদের হোটেল বুকিং বাতিল করতে চাইলে চীনে তাদের বেশির ভাগ হোটেলে গ্রাহকদের সুবিধা দিচ্ছে হোটেল চেইন ইন্টারকন্টিনেন্টাল গ্রুপ (আইএইচজি) হায়াত। বিভিন্ন ব্র্যান্ড নামে চীন, হংকং, ম্যাকাও তাইওয়ানে ৪৪৩টি হোটেল রয়েছে আইএইচজির। এর মধ্যে উহানেই রয়েছে চারটি হোটেল।

ক্যাসিনো অপারেটরদের মুনাফায়ও বড় আকারের পতন হয়েছে, বিশেষ করে যেগুলো ম্যাকাওয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ম্যাকাও শহরের ক্যাসিনোগুলোর মালিকানা লাস ভেগাসের স্যান্ডস উইন রিসোর্টসের। চীনের সিনেমা শিল্পও বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে। হলিডে মৌসুমকে সামনে রেখে সাতটি মুভি মুক্তি দেয়ার কথা ছিল, যা বাতিল করা হয়েছে।

পর্যটন চীনের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ১১ শতাংশ অবদান খাতের। এছাড়া এখানে কোটি ৮০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।

জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন র্যাংকিংয়ে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে কোটি ২৯ লাখ পর্যটক চীন ভ্রমণ করেছে। এতে ফ্রান্স, স্পেন যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের চতুর্থ পর্যটক আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে দাঁড়িয়েছে এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতিটি। 

ভ্রমণ পর্যটনে বিশাল ধাক্কার ফলে বিলাসবহুল পণ্য ব্র্যান্ডগুলোও আক্রান্ত হচ্ছে। চীনা নাগরিকরা ঘর থেকে বের না হওয়ায় তাদের বিক্রি বড় ধাক্কা খাচ্ছে। বারবেরি, লুই ভিতোঁ হার্মিস ব্র্যান্ডগুলোর মালিক প্রতিষ্ঠান এলভিএমইচের শেয়ারদরে চলতি সপ্তাহে পতন হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন