পর্যালোচনা

নতুন বছরে আমরা কতটা আশাবাদী হতে পারি?

ড. সা’দত হুসাইন

ইংরেজি নতুন বছর হোক কিংবা বাংলা নববর্ষ দিনটা কেন্দ্র করে নানা ধরনের আলাপ-আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। আমার মনে আছে, ২০০০ সালের শুরুতে অর্থাৎ একুশ শতকের সূচনালগ্নের ঠিক আগে অনেকে নিরাপদ স্থান খুঁজতে শুরু করেছিল, কেউ টানেলের মধ্যে চলে গিয়েছিল, কেউ গাছে উঠতে চেয়েছিল। নানা ভবিষ্যদ্বাণী, অনুমান ছড়িয়ে পড়েছিল।

আমি তখন প্রাথমিক শিক্ষা সচিব। বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ, সম্মেলনে বক্তব্য দিয়ে থাকি। সে সময় আমি প্রতিটি জায়গায় একটি কথা বলেছি, বিপর্যয়কর কিছুই হবে না। বিশ শতকের সূর্য ডুবে একুশ শতকের সূর্য উঠবে এবং আমরা আগের মতোই কাজ করে যাব। তা- হয়েছে। অনেকে বিপুল আশাবাদী ছিলেন যে পৃথিবীতে শান্তি আসবে। মানুষ অনেক সুখী-সমৃদ্ধ জীবন যাপন করবে। জীবনমানের ব্যাপক উন্নতি হবে। স্বস্তি অনেক বেশি হবে। কিন্তু দেখা গেছে, এসব কিছুই হয়নি। সময়ের গতি আগের মতোই থেকেছে। কিছু খারাপ জিনিস হয়েছে। আমরা দেখেছি বিভিন্ন দেশে বিরাজ করেছে যুদ্ধাবস্থা। আমাদের যেশান্তির সুফল’ (Peace Dividend) পাওয়ার কথা ছিল সেটি আমরা পাইনি। সব কিছুই প্রায় আগের মতোই চলেছে। সঙ্গে অনেক খারাপ বিষয় যুক্ত হয়েছে। ভালো-খারাপ মিলিয়ে আমরা মোটামুটি বেঁচে আছি।

তাই ২০২০ সালে, নতুন বছরে বড় রকমের নতুন কিছু বাংলাদেশের জন্য আশা করা যায় না। যদি পরাবাস্তবতার কারণে বড় কিছু ঘটে যায়, বড় কোনো উন্নতি হয়, বড় কোনো প্রাপ্তি ঘটে বা বড় কোনো দৈব দুর্যোগ হয়, তবেই বড় কোনো পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু আমরা বিশ্লেষকরা দৈব দুর্যোগ বা দৈব প্রাপ্তিকে গণনায় ধরি না, কারণ এটি স্বাভাবিক প্রবণতার বাইরে।

২০১৯ সাল ২০২০-এর মধ্যে গড়িয়ে পড়েছে। ইংরেজিতে একে বলে সেগু (Segue) সংগীতে একটা স্তর থেকে আর একটা স্তরে খুব স্বাভাবিকভাবে, দৃশ্যমান না হয়ে, কানে লাগে না এমনভাবে শ্রুতিমধুর হয়ে উপরে চলে যাওয়া। ৩১ ডিসেম্বরও জানুয়ারির মধ্যে গড়িয়ে পড়ছে এবং এটা খুব স্বাভাবিকভাবে হয়েছে। এখানে আমি কোনো পার্থক্য দেখিনি। পার্থক্য যেটা হয়েছে, তা হলো অনেক আতশবাজি ফোটানো হয়েছে। গোটা বিশ্বই উৎসবের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। সে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও এমনটি হয়েছে। আমাদের শৈশবে বা কৈশোরে এমনটা ছিল না। কারণ লোকজনের হাতে এত অর্থ ছিল না। এখন তাদের হাতে অর্থ এসেছে। ব্যবসার উদ্দেশ্যে, নানা স্কলারশিপ নিয়ে কিংবা শ্রমজীবী হিসেবে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে আমাদের দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ। ফলে বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে সাধারণ মানুষের হাতে আগের তুলনায় বেশি অর্থ রয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ পালন এখন উৎসবের অংশ হয়ে উঠেছে।

কিন্তু এর বেশি কিছু নয়। নতুন বছর যে বাংলাদেশের জন্য নতুন প্রতিশ্রুতি বা নতুন কিছু নিয়ে আসে তা নয়। আমাদের আর্থিক বছর জুলাই থেকে শুরু হয়ে ৩০ জুন শেষ হয়। আর্থিক বছর যদি জানুয়ারি থেকে শুরু হতো, তাহলে বাজেটের একটা ব্যাপার থাকত। আমাদের চিন্তাধারা, আমাদের প্রক্ষেপণ, আমাদের ভবিষ্যতের প্রত্যাশা, অর্থনৈতিক দিক থেকে যদি ধরা হয়, তাহলে তা বাজেটকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়। বাজেট হলে বোঝা যায় যে মানুষের কর বেড়েছে কি বাড়েনি। মানুষের কষ্ট এবার লাঘব হবে কি হবে না। বাজেট হলে অনেক কিছু হিসাব-নিকাশ করা যায়। সে অনুযায়ী বলা যেত মানুষের অবস্থা কেমন হতে পারে। তবে প্রতি বছরের শুরুতে আমরা আশা করতে পারি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে, জিডিপি বাড়বে। আমরা উন্নয়নের এমন একপর্যায়ে আছি, যেখানে জিডিপি বাড়তেই হবে। আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে শ্রমনির্ভর উৎপাদন অনেক বেশি। শ্রমনির্ভর কর্মকাণ্ডের বৈশিষ্ট্য হলো, এর পুরোটাই মূল্য সংযোজন হিসেবে পরিগণিত হয়। কৃষি উৎপাদনের কিন্তু পুরোটা মূল্য সংযোগ করে না; মানুষের শ্রম, জ্বালানি খরচ ইত্যাদি বাদ যায়। এগুলো বাদ গেলে যা দাঁড়ায়, তাহলো মূল্য সংযোজন। যদি দক্ষতার অভাব থাকে, তাহলে শূন্য মূল্য যোগ হতে পারে। এমনকি নেতিবাচক মূল্য সংযোগও হতে পারে।

সেবা খাতের পুরোটারই মূল্য সংযোজন হয়। আমাদের সেবা খাতের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এখানে ইন্টারমিডিয়েট ইনপুট খুব কম থাকে। সুতরাং আমরা ধরে নিতে পারি আমাদের জিডিপি বাড়বে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মূল্য যোগ হবে। কিন্তু ধরিত্রী নাড়া দেয়ার মতো কিছু ঘটবে না। বলা হচ্ছে, আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি শতাংশের মতো হবে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি এবং এস্তার দুফলো দেখিয়েছেন যে জিডিপির মধ্যে অনেক ফাঁকফোকর থাকে। ফলে জিডিপির ওপর নির্ভর করে আমরা সবকিছু করতে পারি না। ২০২০ সাল ঘিরে বিশ্বে মন্দার একটা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। চীনের প্রবৃদ্ধি কমেছে। ভারতের প্রবৃদ্ধিও অনেক কমেছে। ভারতের সাবেক মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম বলেছেন, ভারতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে দশমিক শতাংশেরও কম হতে পারে। ইউরোপ-আমেরিকার অবস্থাও ভালো নয়। বিশ্বব্যাপী যখন মন্দা হাওয়া বইছে, সেখানে বাংলাদেশ কতটা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে, তাই দেখার বিষয়। নব্বইয়ের দশক পরবর্তী সময়ে আর্থিক সংকটের সময় বাংলাদেশ খুব বেশি খারাপভাবে আক্রান্ত হয়নি। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি তখন অনেক ছোট ছিল। কথা আছে যে, ঘাসের গায়ে বাতাস লাগে না। এখন বাংলাদেশ কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে। সুতরাং এবার বৈশ্বিক মন্দা আমাদের অর্থনীতিতে মোটেও প্রভাব ফেলবে নাএমনটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না। তাছাড়া কেউ যদি বলে, আমরা হঠাৎ করে আকাশ ছুঁয়ে ফেলবসুইডেন, আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত হব, তবে তাও বিশ্বাস করা যায় না।

আমাদের ক্রমান্বয়ে উন্নতি করতে হবে। আমি মনে করি, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার থেকে শতাংশের মধ্যে থাকবে। আমাদের মাথাপিছু আয় এখন হাজার মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। ২০২০ সালে যা হয়তো হাজার ১০০ কিংবা হাজার ২০০ ডলারের মতো হবে। এতে করে আমরা নিম্নমধ্যবিত্ত অবস্থানেই থাকব। কারণ মধ্যবিত্ত পর্যায়ে যেতে হলে হাজার ৫০০ ডলার মাথাপিছু আয় হতে হয়। তাই অর্থনীতির শ্রেণীবিন্যাসে আহামরি কিছু ঘটবে না। আমাদের অবস্থানটাই এমন যে, আমরা হঠাৎ করে খুব বেশি উপরে চলে যেতে পারব না, আবার খুব বেশি খারাপ অবস্থাও হবে না। এখন যে অবস্থায় আছি, তার কাছাকাছি কোথাও থাকব।

তবে আমাদের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। পেছন ফিরে তাকালে আমরা দেখি যে, আমাদের আর্থিক খাত তছনছ হয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি বড় ধরনের সমস্যা বৈকি। ব্যাংকের সুদ যখন কমে যায়, তখন মানুষ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। শেয়ারবাজার বিধ্বস্ত করে ফেলা হয়েছে। স্টক কমতে কমতে তিন বছরেন সবচেয়ে নিম্ন অবস্থানে এসেছে। উৎপাদনের জন্য অর্থ সংগ্রহের একটা বড় পথ বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন কার্যক্রমের জন্য অর্থ গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে তাই আমরা খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছি। আমাদের ব্যাংক লুট হয়েছে, তারল্য সংকট সৃষ্টি করে আমাদেরকে আতঙ্কের মধ্যে রাখা হয়েছে। সঞ্চয়কারীরা বিরাট ভয়ের মধ্যে আছেন যে, কয়েক দিন পর তাদের সঞ্চয়টাও উবে যায় কিনা। এতগুলো খারাপ আর্থিক অবস্থার চিত্র সামনে রেখে আমরা বড় রকমের আশাবাদী হতে পারি না।

অর্থনীতির সূচকগুলোর দিকে আমরা দৃষ্টি প্রদান করব, তবে এর চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমরা জীবনে স্বস্তি, শান্তি সমৃদ্ধি চাই। সে সমৃদ্ধি বলতে বোঝায় জীবনের সমৃদ্ধি। সুশাসন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যাশা থাকবে সুশাসনের মাধ্যমে সরকার তার গ্রহণযোগ্যতা, তার জনপ্রিয়তা বাড়াবে। এটাই মানুষ আশা করে। সরকার যদি এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশের মানুষের জন্য অপেক্ষা করবে চরম দুর্ভোগ। প্রথমত, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি জরুরি। আমাদের সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে সরে আসতে হবে। যদি সরতে না পারি, তাহলে ঘুরেফিরে একই পরিস্থিতির সামনে পড়তে হবে।

বৈদেশিক সম্পর্কের দিকে যদি তাকানো হয়, তাহলে আমাদের যে ভূরাজনীতি, সেক্ষেত্রে আমরা বেশ জটিল অবস্থার মধ্যে রয়েছি। একদিকে রোহিঙ্গা সংকট, অন্যদিকে এনআরসি। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মুখ থেকে কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে সহানুভূতিশীল মন্তব্য আমরা শুনি না। বরং তাদের কথাগুলো এক ধরনের আতঙ্কের সৃষ্টি করে। সরকার কতটা সফলতা নিয়ে ভারতের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে, বিষয়গুলোর সমাধান তার ওপর নির্ভর করে। আমরা যদি দক্ষভাবে আলাপ-আলোচনা-দরকষাকষি করতে না পারি, তবে আমাদের জন্য অধিকতর সমস্যা তৈরি হতে পারে। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে সরকার অনেক কিছু করেছে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলোদয় হচ্ছে না। ২০২০ সালেও হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

বিগত বছরে সরকারের এবং দেশের প্রাপ্তি কী তার মূল্যায়ন জরুরি। নুসরাত হত্যা, রিফাত হত্যা, আবরার হত্যা ঘটনাগুলো দেশের জন্য খুব ক্ষতিকর। প্রতিটি ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রতিভাবান, প্রতিশ্রুতিশীল সম্ভাবনাময় জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। আবরার হত্যার ক্ষেত্রে যারা অপরাধী, তারাও কিন্তু বুয়েটের শিক্ষার্থী, প্রতিভাবান কিশোর। ঘটনায় প্রথম দিকে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকার তার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করেছে বলা যায়। কিন্তু দেশের জন্য যে ক্ষতি হয়েছে, তা কীভাবে পূরণ করা যাবে? নুসরাত, রিফাত, আবরারসহ গত বছর যারা মারা গেছে, ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হয়েছে, ধর্ষণের পর যাদের হত্যা করা হয়েছে, তারা আর ফিরে আসবে না। কাজের নেপথ্যে যারা আছে, তারা কিন্তু দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। সমাজের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। মানুষের জীবনের শান্তি-স্বস্তি লুণ্ঠিত হয়েছে। দুঃখের রেশ হয়তো নতুন বছরেও থাকবে।

সরকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হচ্ছে, তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতিগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে। একদিকে বিরোধী দল, অন্যদিকে জঙ্গি দমনে তারা কৃতিত্ব দেখিয়েছে। তবে সুশাসনের অনেক ঘাটতি দৃশ্যমান। দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে পেঁয়াজের দাম যেমন এতটা বাড়ার কথা ছিল না। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আমাদের সংশ্লিষ্টরা সফল হননি। তারা আনাড়ির মতো আচরণ করেছেন। তারপর আসে রাজাকারের তালিকা প্রণয়নের বিষয়টি। কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া তালিকাটি প্রকাশ করা হলো। পরবর্তী সময়ে তা স্থগিত করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও অস্থিরতা বিরাজমান। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। বিভিন্ন দুর্নীতির কথা সামনে আসছে। তার মানে হচ্ছে, আমরা এসব পদে হয়তো যোগ্য লোককে বসাতে পারিনি।

মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করার জন্য বাংলাদেশের বিদেশী বন্ধুদের যে সম্মাননা পদক প্রদান করা হলো, সেখানে বড় পরিমাণ খাদ ঢুকে গেল। যার বিচার এখনো হয়নি। সুশাসনের পাশাপাশি আমাদের ব্যবস্থাপনাগত ঘাটতিও রয়েছে। স্বল্প সংখ্যক পদ থাকলেও অনেক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। ধান চাষ, আলু চাষ, মাছ চাষ আর পুকুর কাটা শেখার জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন। বাদ যায় না বালিশ কেলেঙ্কারি বা পর্দা কেলেঙ্কারির বিষয়গুলো। বছর সন্তোষজনকভাবে সমস্যাগুলোর পরিসমাপ্তি দেখার জন্য দেশের মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে।

তবে ক্যাসিনো পরিস্থিতিকে ঘিরে যখন শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়, মানুষ কিন্তু তখন অনেক আশাবাদী হয়েছে। আমরা আশা করব ধরনের শুদ্ধি অভিযান চলতে থাকবে। যদি এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়, তাহলে মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হবে। ধরনের কাজ যদি স্তিমিত হয়ে যায়, তাহলে মানুষ আবার হতাশায় ভুগবে।

আমি মনে করি, ২০২০ সাল অন্য বছরগুলোর মতোই স্বাভাবিক যাবে। আমরা অনেক বড় কিছু অর্জন করব এটা মনে করি না। আবার আমরা তলানিতে পৌঁছে যাব এমন কিছু হবে বলেও আমি মনে করি না। স্বাভাবিক গতিতে চললে কিছু অর্জন যোগ হবে। এতে হইচইয়ের কিছু নেই।

২০১৯ সালে অনেক আচমকা দুর্ঘটনা ঘটেছে। সরকার সরাসরি দায়ী না হলেও দায়টা সরকারের ওপর পড়েছে। যেমন চুড়িহাট্টা, এফআর টাওয়ার, গুলশানের ডিসিসি মার্কেট, মালিবাগ মার্কেট, টঙ্গী, কেরানীগঞ্জে আগুনের ঘটনাগুলো উল্লেখযোগ্য। সারা দেশে ধরনের অগ্নিকাণ্ডের কয়েক হাজার ঘটনা ঘটেছে।

সড়কে দুর্ঘটনা কমেনি বরং আরো জটিল হয়েছে। ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত পরিবহন শ্রমিক এবং মালিকরা সময় নিয়েছেন। আমি মনে করি, সরকারকে এখানে শক্ত হতে হবে। প্রয়োজনে ছোটখাটো আইন সংশোধন প্রণয়ন করা যেতে পারে। আমি নতুন সড়ক আইনগুলো পর্যালোচনা করেছি। মনে হয়েছে, আন্দোলনের মুখে অনেকটা তাড়াহুড়ো করে আইন করা হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, প্রয়োজনে কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা যেতে পারে। কেউ মোবাইল ফোনে কথা বললে তাকে অনেক টাকা জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে বা কেউ লাইসেন্স আনতে ভুলে গেছেতার ক্ষেত্রে অনেক বেশি জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। ধরনের কাজে পুলিশের জুলুম বাড়ে। সরকার নীতিনির্ধারকদের এটা সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে মেয়াদ না বাড়িয়ে তা যেন ৩০ জুনের মধ্যেই করা হয়।

সর্বোপরি আর্থিক খাতের অনাচারকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ দুটি সিটি করপোরেশনের ভোট। টেস্ট কেসে সরকারকে ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে। যেমনটা বলা হয়েছে, একটা নির্বাচনে হেরে গেলে আকাশ ভেঙে পড়বে না। ভোটের ওপর মানুষের আস্থা ফেরানো গেলে তা সরকার দেশের জন্য বড় ধরনের অর্জন হবে। এতে করে মানুষের কাছে বার্তা যাবে যে, আমরা কী সুশাসনের পথে যাচ্ছি, না আমরা আগের তিমিরেই চলে যাচ্ছি। তাই এক্ষেত্রে সরকার যদি ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়, তাহলে মানুষের মধ্যে আশা জাগবে। দেশ উপকৃত হবে।

. সাদত হুসাইন: সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব

সরকারি কর্মকমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন