সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী প্রেরণে
প্রচলিত মুসানেড অনলাইন সিস্টেমে হয়রানিতে পড়ছেন কর্মীরা। ভোগান্তি পোহাতে হয় রিক্রুটিং
এজেন্সিগুলোকেও। তাত্ক্ষণিক যোগাযোগের সুযোগ না থাকার পাশাপাশি অনলাইনভিত্তিক তথ্য
নিয়মিত হালনাগাদ না করায় এসব ভোগান্তি সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক
কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব
ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির
(বায়রা)
পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। বায়রা
সভাপতি বেনজীর আহমদ এমপি স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫
সালে সৌদি আরবে গৃহকর্মী প্রেরণ করার জন্য মেসার্স টাকামলের মাধ্যমে বাংলাদেশে
মুসানেড অনলাইন সিস্টেমের প্রচলন করা হয়। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো শ্রমিক
প্রেরণকারী দেশে এ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়নি। প্রচলনের সময়ে মুসানেড অনলাইন
সিস্টেমের নানা সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে বিভিন্ন সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল।
সে সময় এসব সভা-সেমিনারে পদ্ধতিটির বেশকিছু সুবিধার কথা দাবি করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো ছিল, প্রতি দুজন নারী কর্মীর বিপরীতে একজন পুরুষ কর্মীর কোটা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ, শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যকার যেকোনো সমস্যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান, নারী গৃহকর্মী প্রেরণকারী রিক্রুটিং এজেন্টকে অনধিক তিনটি সৌদি এজেন্সির সঙ্গে চুক্তির সুযোগ ইত্যাদি।
প্রচলনের সময় দাবি করা হলেও এখন
পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে করা কোনো অভিযোগের সুরাহা হয়নি বলে
জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবেদনে পদ্ধতিটির কয়েকটি অসুবিধার
কথা উঠে আসে। এর মধ্যে রয়েছে মুসানেড সিস্টেমের অনলাইন টিমের সঙ্গে টেলিফোনে
যোগাযোগের কোনো সুযোগ নেই। এজেন্টদের অভিযোগ জানাতে হয় একটি ই-মেইল আইডির
মাধ্যমে। যদিও তার কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। অথচ পদ্ধতিটি চালুর সময় দাবি করা
হয়েছিল, এই একটি ই-মেইলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া এ সিস্টেমের কোনো প্রতিনিধি
বাংলাদেশে নেই। এমনকি এতে এক সপ্তাহেও কোনো ডাটা আপডেট হয় না।
বায়রা জানিয়েছে, ২০১৫
সালের শেষদিকে মুসানেড অনলাইন সিস্টেম ব্রেকডাউনের কারণে গৃহকর্মীদের সব তথ্য
হারিয়ে যায়। পরে ওইসব তথ্যের মাত্র ৪০ শতাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। বাকি ৬০ শতাংশ তথ্য
আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফলে হাজার হাজার পুরুষ গৃহকর্মী কোটার সুযোগ হাতছাড়া
হয়ে গেছে।
এছাড়া যৌক্তিক কারণেও বাংলাদেশের
এজেন্সির পক্ষে সৌদি এজেন্সিকে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ মুসানেডে নেই। অথচ সৌদি
এজেন্সির পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হলে বাংলাদেশী এজেন্সিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের
সুযোগ না দিয়েই তাত্ক্ষণিকভাবে পরিবর্তন করা হয়। মুসানেড অনলাইন সিস্টেম কেবল সৌদি
পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণ করছে বলে অভিযোগ বায়রার।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এসব
সমস্যার কারণে শ্রমিক প্রেরণকারী কোনো দেশেই মুসানেড অনলাইন সিস্টেম কার্যকর হয়নি।
কেবল বাংলাদেশেই এটি একটি অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। এমনকি ঢাকার সৌদি দূতাবাসও
মুসানেড অনলাইন সিস্টেম অনুসরণ করে না। মুসানেড ছাড়াই ভিসা ইস্যু করে থাকে
দূতাবাসটি।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে
বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে বিদেশে যাওয়া নারীদের প্রায় ৮০ শতাংশেরই গন্তব্য
সৌদি আরব। নির্যাতনের অভিযোগে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে
দিলে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরব। এরপর থেকে গত জুলাই পর্যন্ত
প্রায় তিন লাখ নারী কর্মী গেছেন দেশটিতে। কিন্তু সেখানে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় গত
বছর থেকে নারী কর্মীদের গমনের হার কমতে থাকে। অনেকে ফিরেও এসেছেন।