১৩ শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে চীন

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছেই। এরই মধ্যে দেশটির বেশকিছু শহরে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সময় শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত ১৩টি শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন ২৬ জন। খবর এএফপি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্তত ছয়টি দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লেও বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা থেকে বিরত রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) চীন যেসব এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, সেসব অঞ্চলের মোট অধিবাসীর সংখ্যা কানাডার জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। এরই মধ্যে চীনের বিভিন্ন এলাকায় চান্দ্রবর্ষের নতুন বছর উদযাপনের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। সাময়িকভাবে বন্ধ করা দেয়া হয়েছে বেইজিংয়ের নিষিদ্ধ শহর, সাংহাইয়ের ডিজনিল্যান্ড ও মহাপ্রাচীরের কিছু অংশ। এসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যাতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে না পড়ে।

গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে প্রথম ভাইরাসটি ছড়ায়। চীনের এ শহর শিল্প ও পরিবহনের কেন্দ্র হিসেবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শহরটিতে বসবাস করে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ। চীনে এখন নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার জন্য উৎসবমুখর থাকার কথা। কিন্তু ভাইরাসের উপদ্রবে উহান এখন শ্মশানের মতো নীরব। রাস্তাঘাটে লোকজন নেই, বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দোকানপাট।

দেশটির কোটি কোটি নাগরিক এ নববর্ষ উদযাপনে ভ্রমণের মধ্যে থাকলেও সরকার উহানে প্রবেশ ও বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন। একই সঙ্গে শহরের অধিবাসীদের ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।

চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের প্রধান গাও ফু দেশটির নাগরিকদের এবারের নববর্ষের জমায়েতে অংশ না নিতে এবং সংকটজনক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত ঘরে অবস্থান করতে অনুরোধ করেছেন।

এক ট্যাক্সিচালক বলেন, এ বছর আমাদের নববর্ষ বেশ ভয়ের মধ্য দিয়ে কাটছে। ভাইরাসের কারণে লোকজন ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। তবে শহরটিকে বিচ্ছিন্ন করা হলেও সেখানে খাবার সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ অনেকেই নববর্ষ উপলক্ষে ঘরে প্রচুর খাবার মজুদ করেছেন।

মূলত নতুন এ ভাইরাস ২০০২-০৩ সালে ছড়িয়ে পড়া সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রমের (সার্স) কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। ওই ভাইরাসের সংক্রমণে চীনের মূল ভূখণ্ড ও হংকংয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়।

এদিকে চীনের হাসপাতালগুলোয় দেখা গেছে, উদ্বিগ্ন রোগী ও মানুষের উপচে পড়া ভিড়। পুরো শরীর প্রতিরক্ষামূলক পোশাকে ঢেকে তাদের পরীক্ষা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। একটি তাপমাত্রা পরিমাপক কেন্দ্রে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকর্মীরা মুখোশ ও প্রতিরক্ষামূলক চশমা পরে থার্মোমিটার দিয়ে রোগীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন।

উহানের বাইরে আরো ১২টি ছোট শহর এ অঘোষিত জরুরি অবস্থার মধ্যে পড়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো হুয়াংগ্যাং। শহরটির অধিবাসীর সংখ্যা ৭৫ লাখ।

এদিকে চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে আট শতাধিক মানুষ। এদের মধ্যে ১৭৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া আরো ১ হাজার ৭২ জন সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে সার্স সংক্রমণের সময়ের তুলনায় এবার নেয়া পদক্ষেপের জন্য বেশ প্রশংসা করা হচ্ছে বেইজিংয়ের। কারণ সার্সের সময় রোগটি শনাক্ত করতেই কয়েক মাস কেটে গিয়েছিল। আর এতে পরিস্থিতি বেশ খারাপের দিকে চলে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন