আলগীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

মাঠের পাশে মুরগির খামার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর বারদী ইউনিয়নের আলগীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে ব্রয়লার মুরগির খামার। প্রতিদিন খামারে ২০০০ মুরগির সৃষ্ট উচ্ছিষ্ট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশের এলাকায়। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন অনুযায়ী বসতবাড়ি ও বিদ্যালয়ের পাশে মুরগির খামার স্থাপনের নিয়ম নেই। কিন্তু আলগীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে গড়ে তোলা এ খামারের কারণে বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। খামারটি অপসারণে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে আলগীর চর কমিউনিটি স্কুল নামে যাত্রা করে বিদ্যালয়টি। পরবর্তী সময়ে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। এর পর থেকে আলগীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচালিত হয় এ বিদ্যালয়। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ২৫০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। শিক্ষক রয়েছেন ছয়জন। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে  প্রভাবশালী হযরত আলী ওরফে হযরত ডাকাত ও তার মেয়ের জামাই আমিন একটি মুরগির খামার গড়ে তোলেন। বর্তমানে প্রায় দুই হাজার ব্রয়লার মুরগি রয়েছে খামারে। প্রতিদিন খামারের উচ্ছিষ্টের দুর্গন্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। এ খামারের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তাই খামারটি দ্রুত অপসারণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, আলগীর চর গ্রামের হযরত আলী ওরফে হযরত ডাকাত প্রভাবশালী। ক্ষমতার জোরে তারা বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে খামার গড়ে তুলেছেন। খামারটি অপসারণ করতে বলা হলে মারধর ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়। এজন্য প্রাণভয়ে গ্রামবাসীও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারেন না।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, খামারের দুর্গন্ধের কারণে ক্লাসে বসা যায় না। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে সমাবেশের সময় মাঠে থাকতে কষ্ট হয়। অনেক শিক্ষার্থী দুর্গন্ধের কারণে বমিও করে।

আলগীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাজেরা বেগম বলেন, মুরগির খামারের বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না। তবে কমিটি যদি বিষয়টি দেখে তাহলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে।

তিনি বলেন, খামারটির কারণে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে শিশু শিক্ষার্থীরা। খামারের দুর্গন্ধে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এজন্য অনেক অভিভাবক তাদের শিশুদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করাচ্ছেন। আর যারা এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারাও অনিয়মিত হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে আলগীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাজিমউদ্দিন রতনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ খামারের মালিক আমিন বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের জমিতে খামার গড়ে তুলেছি। খামারের দুর্গন্ধ স্কুল পর্যন্ত যায় না।

বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল হক বলেন, খামার স্থাপনের খবর পেয়ে আমি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করি। খামারের কারণে বিদ্যালয় ও আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।

সোনারগাঁ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র দাস বণিক বার্তাকে বলেন, বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। আমি স্কুল কমিটির লোকজনকে নিজে ফোন করে লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্য বলেছি। লিখিত অভিযোগ দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রকিবুর রহমান খান বলেন, দ্রুত মুরগির খামারটি অপসারণ করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন