আরনু জুট মিল

এক কারখানাই পাল্টে দিয়েছে সীমান্ত এলাকার চিত্র

হালিম আল রাজী হিলি

সাত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত মেসার্স আরনু জুট মিল পাল্টে দিয়েছে দিনাজপুরের হিলির অর্থনৈতিক চিত্র। বৈধভাবে আয়-রোজগারের সুযোগ পেয়ে চোরাচালানি ছেড়ে এ মিলে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে। উদ্যোক্তারা বলছেন, সীমান্তের কাছে হওয়ার সুবাদে শুধু কর্মসংস্থান নয়, পাটপণ্য রফতানিতেও কারখানাটি সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। বর্তমানে মিলটি প্রতি মাসে ৫ লাখ ডলার মূল্যের পাটপণ্য রফতানি করছে।

জানা গেছে, শেখ আ. শাফি নামের একজন হিলির পৌরসভাসংলগ্ন বড়ডাঙ্গাপাড়া নামক এলাকায় ২০১৩ সালে গড়ে তোলেন মেসার্স আরনু জুট মিল। শুরুতে এ কারখানায় ৪০০ শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়। কলেবর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ কারখানার শ্রমিক সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত পণ্য বিপণনে যুক্ত আছে আরো দুই শতাধিক মানুষ। এটি বর্তমানে হিলির একমাত্র সচল কারখানা। সব মিলিয়ে এ কারখানা এক হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, যাদের অধিকাংশই একসময় চোরাচালানিতে যুক্ত ছিলেন। তাদের কেউ আবার ধরা পড়ে জেলও খেটেছেন।

আরনু জুট মিলের নারী শ্রমিক রুবিনা খানম ও শেফালি বেগম জানান, সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় হিলির নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকে চোরাচালানিতে যুক্ত হয়ে পড়ে। তেমন কোনো কল-কারখানা নেই যে, সেখানে কেউ গিয়ে কাজ করবে। তবে এ জুট মিলে আমাদের মতো অনেক নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। নয়তো আয়-রোজগারের জন্য ঢাকায় যাওয়া বা অন্য পেশায় যুক্ত হওয়া ছাড়া উপায় থাকত না। এখন বাড়ির কাছে জুট মিল হওয়ায় পরিবারের সঙ্গেই থাকতে পারছি। একই সঙ্গে পরিবারেও সচ্ছলতা এসেছে।

লুত্ফর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম নামের দুই শ্রমিক বলেন, একসময় কাজ না পেয়ে চোরাচালানিতে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। বিজিবির হাতে ধরা পড়ে জেলও খেটেছি। তখন থেকে মনেপ্রাণে চেয়েছি, যেন অন্য কোনো কাজে যুক্ত হতে পারি। এ জুট মিল আমাদের মতো আরো অনেক চোরাকারবারির জীবন পাল্টে দিয়েছে। এ ধরনের কারখানা যত বেশি হবে, চোরাচালান তত কমে আসবে।

মেসার্স আরনু জুট মিলের সহব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শেখ আ. শাফির ছেলে শেখ আসিফ আহম্মেদ বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকা হিলিতে মানুষের তেমন কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। সেই কথা বিবেচনা করে ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমার বাবা হিলি স্থলবন্দরের অদূরে কারখানাটি প্রতিষ্ঠান করেন। সাত বছরে মিলের যত পরিধি বেড়েছে, তত নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এ কারখানায় আট শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন।

তিনি বলেন, হিলিতে মিল প্রতিষ্ঠা করা সহজ কাজ ছিল না। আবার এর আরেকটি সুবিধাও আছে। সীমান্তবর্তী হওয়ায় এবং স্থলবন্দর থাকায় আমরা উৎপাদিত পণ্য সহজে ভারতে রফতানি করতে পারি। এ কারণে আরনু জুট মিলের মতো একটি শতভাগ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। প্রতিদিন এ কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে অন্তত ৪৭৫ মণ পাট ব্যবহার হয়। আমরা প্রতি মাসে ৫ লাখ ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করি।

তার মতে, দেশে পাটপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি ও বাজারে স্থিতিশীলতা আনা গেলে সরকারি-বেসরকারি সব জুট মিলে গতিশীলতা আসবে। এতে কৃষক থেকে উদ্যোক্তা সবাই লাভবান হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন