যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের
কারণে চীনে অভ্যন্তরীণ চাহিদায় দেখা দেয় শ্লথগতি। ফলে দেশটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়
জাপানের রফতানি, যা টানা দ্বিতীয় বছরের মতো জাপানকে বাণিজ্য ঘাটতিতে ফেলেছে। এছাড়া
যুক্তরাষ্ট্রমুখী গাড়ি, নির্মাণ ও মাইনিং যন্ত্রপাতির রফতানি কমে যাওয়ায় গত ডিসেম্বরে জাপানের
রফতানি হ্রাস পেয়েছে ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। বৃহস্পতিবার জাপানের অর্থ মন্ত্রণালয় (এমওএফ) প্রকাশিত
উপাত্তে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর এপি ও রয়টার্স।
২০১৯ সালে জাপানের রফতানি ৫ দশমিক ৬০
শতাংশ কমে ৭৬ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ইয়েনে বা ৭০ হাজার ১৬০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া
আমদানি ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ইয়েন বা ৭১ হাজার কোটি
ডলারে। এতে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ইয়েন বা ১ হাজার ৪০০
কোটি ডলার।
২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর
যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি ১ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং আমদানি ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ হ্রাসে
জাপানের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৬ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ইয়েন বা ৬ হাজার কোটি ডলারে
দাঁড়িয়েছে। কম্পিউটার, নির্মাণ ও বস্ত্র খাতের যন্ত্রপাতি রফতানি বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রে
মেশিনারি রফতানি ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে
জাপানের রফতানি পণ্যের ৪০ শতাংশই গাড়ি, যা
গত বছর রফতানি কম হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য
অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রে গত ডিসেম্বরে রফতানি বছরওয়ারি হ্রাস পেয়েছে ১৪ দশমিক ৯০
শতাংশ।
শ্লথগতির বৈশ্বিক রফতানির পাশাপাশি
জাপানের বৈশ্বিক আমদানিও হ্রাস পেয়েছে। চীনে জাপানের রফতানি কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটির সঙ্গে জাপানের বাণিজ্য ঘাটতি ৩ দশমিক ৭৬
ট্রিলিয়ন ইয়েন বা ৩ হাজার ৪৩১ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এশিয়ার অন্যান্য অংশেও এ ধারা
বহাল ছিল। গত ডিসেম্বরে এশিয়া অঞ্চলে জাপানের মোট রফতানি কমেছে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।
তবে গত ডিসেম্বরে রফতানি কমলেও ২০১৯ সালের পূর্ববর্তী মাসগুলোর তুলনায় ওই মাসে
রফতানি হ্রাসের এ হার কম ছিল। গত মাসে বিশ্বের তৃতীয় এ অর্থনীতিটির রফতানি কমেছে ৬
দশমিক ৩০ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। চিপ নির্মাণসামগ্রী, গাড়ি
ও প্লাস্টিক রফতানির ওপর ভর করে গত ডিসেম্বরে জাপানের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার
চীনে রফতানি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ। গত ১০ মাসের মধ্যে এটি ছিল প্রথম
সম্প্রসারণ।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল
ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ টম লিয়ারমাউথ এক প্রতিবেদনে বলেন, ভবিষ্যতের
দিকে তাকিয়ে আমরা মনে করি, অনেকেই যেমন আশা করছেন রফতানি ঘুরে দাঁড়ানোর তেমন সম্ভাবনা নেই। ফলে
প্রধান প্রধান বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে জাপানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নমিত থাকবে। তিনি
আরো পর্যবেক্ষণ করেন, গত ১ অক্টোবর জাপানের বিক্রয় কর ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার
সিদ্ধান্তও ভোক্তা চাহিদা ও বেসরকারি বিনিয়োগে প্রভাব ফেলেছে।
জাপানের মোট রফতানির এক-চতুর্থাংশের
প্রতিনিধিত্বকারী গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন রফতানি ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি রফতানি ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ সালে পূর্ববর্তী
বছরের তুলনায় গ্যাস, তেল ও অন্যান্য জ্বালানি আমদানি হ্রাস পেয়েছে ১২ শতাংশ।
বিশ্লেষক ও নীতিনির্ধারকরা মনে
করছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন
হলে এবং নির্ধারিত সময়ে ব্রেক্সিট কার্যকরের ইঙ্গিতে বৈশ্বিক বাণিজ্য উদ্বেগ হ্রাস
পাবে। এটা জাপানের অর্থনীতিতে প্রভাব রাখবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু সর্বশেষ
উপাত্তে দেখা গেছে, দেশটির অর্থনৈতিক সংকোচনের গতি কিছুটা প্রশমিত হলেও অর্থনীতির ঘুরে
দাঁড়াতে আরো লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে।
ব্যাংক অব জাপানের (বিওজে) নীতিনির্ধারকরা
বলছেন, দুর্বল রফতানি ও ম্যানুফ্যাকচারিং তত্পরতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শক্তিশালী
অভ্যন্তরীণ চাহিদায় তৈরি করতে হবে। গত বুধবার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস
বাড়িয়েছে বিওজে। একই সঙ্গে তারা চলমান ঝুঁকি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে এখনই
বড় ধরনের প্রণোদনা প্রকল্পে রাশ টেনে ধরার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন না
নীতিনির্ধারকরা।
বিওজের গভর্নর হারুহিকো কুরোদা
বৃহস্পতিবার জানান, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনা এবং ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা হ্রাস পাওয়ায় বৈশ্বিক
অর্থনৈতিক ঝুঁকি কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। তবে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের বাণিজ্য সম্পর্ক
নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।