আলোকপাত

জাতীয় ভূমি ব্যবহারে টেকসই পদ্ধতি প্রয়োগ প্রসঙ্গে

ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, ড. মোহাম্মদ সুজাউদ্দীন, রিয়াসাদ বিন মাহবুব, সুপা রহমান, নাহিয়ান আহমেদ

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক দিক থেকে যে বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্রুত বেড়ে ওঠা দেশগুলোর ভেতর অন্যতম, এটা নানা বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে অনেকবারই উঠে এসেছে। আর তাই অনেকের মতো আমরাও বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী হতে পারি যে দ্রুতই আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হব। কিন্তু সঙ্গে নানা সমস্যাও যে রয়েছে, সেটাও ভুলে গেলে চলবে না। বাংলাদেশ এ মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ, যার জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি এবং যতই অর্থনীতি নিয়ে আমরা ভবিষ্যতের মধুর ভাবনা ভাবি না কেন, এর ভূমি সম্পদটা ঠিক সেই তুলনায় পাল্লা দিতে পারবে বলে মনে হয় না। অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে কর্তৃপক্ষ মনোযোগ দিচ্ছে বটে কিন্তু সামগ্রিকভাবে পরিবেশের দিকে নজরটা সেভাবে পড়েনি। যদি প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনার দিকটা ধরা হয় তাহলে দেখা যাবে যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে নির্বিচারে বন কেটে কৃষিজমি আর অবকাঠামো স্থাপনের দিকটারই ঐতিহাসিকভাবে চর্চা চলেছে। পারিসংখ্যানিক উপাত্তের অনুপস্থিতি ও অপ্রতুলতার কারণে ভূমি ব্যবহারের এই বল্গাছাড়া পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের ওপর ঠিক কতখানি ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়েছে, তার বিজ্ঞানসম্মতভাবে কোনো সঠিক মাপজোখ করা যাচ্ছে না এবং সে কারণে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রতিকারের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়াও হয়ে পড়েছে কঠিন।

বিশ্বজুড়ে অভাবনীয় উন্নতি, যেটা আমাদের চোখে পড়ছে, তার পেছনে প্রাকৃতিক সম্পদের এই যথেচ্ছ ব্যবহার মানুষের সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম। এ মুহূর্তে আমরা যে সময়ে আছি, অনেকে এর নামকরণ করেছেন নরযুগ’ (Anthropocene), কারণ মানুষেরই হাতে গড়া সবকিছুরই যেন জয়জয়কার পৃথিবীজুড়ে। নরযুগ সেই ভূতাত্ত্বিক সময়কে বোঝানো হচ্ছে, যে সময়টায় গোটা পৃথিবীতে বাতাস, পানি, মাটি ও প্রাণীর ওপর মানুষের কারণে সবচেয়ে বিরূপ প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। তাই স্থলভূমির ঠিক কী পরিবর্তন মানুষ করছে এবং তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়াই বা কী হবে, সেটা বুঝতে গেলে বিজ্ঞানসম্মত একটা প্রক্রিয়া থাকা খুবই জরুরি। এর নামই হচ্ছে মোট প্রাথমিক উপাদনশীলতার মানুষি অংশভাগ বা হিউম্যান অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন অব নিট প্রাইমারি প্রডাক্টিভিটি (এইচএএনপিপি)’ উদ্ভিদ শ্বাস নেয়া আর বিপাকের পর যেটুকু কার্বন জমা করে, তার নাম হলো মোট প্রাথমিক উপাদনশীলতা বা নিট প্রাইমারি প্রডাক্টিভিটি (এনপিপি) মাপতে গেলে সব ধরনের ভূমির ওপর এনপিপির পরিমাপও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে, এইচএএনপিপি যেখানে যত বেশি হবে, সেটা বোঝাবে সেখানে ভূমিক্ষয়ের হার তত বেশি। অন্যদিকে এইচএএনপিপি যত কম হবে, সেটা ভূমির মোটের ওপর ভালো অবস্থা বোঝাবে। এইচএএনপিপির বিশ্লেষণ খুব একটা সোজাসাপ্টা বিষয় না হলেও এর নানা প্রায়োগিক দিক রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের জাতীয় নীতিতে পরিবর্তন আনছে। নানা রকম ব্যবহারিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সে দেশগুলো ভূমি ব্যবহারের টেকসই পরিবর্তন এনে এইচএএনপিপির মান কমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। জাতীয় ভূমি ব্যবহারে টেকসই পরিবর্তন আনার জন্য বাংলাদেশ এখনো এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা শুরু করেনি। আর তাই ভূমি ব্যবহারের সমস্যা আমাদের থেকেই যাচ্ছে। এ সমস্যা মাথায় রেখে আমরা ৪০০ বছরের বাংলাদেশের এইচএএনপিপি পরিমাপ করেছি এবং কিছুদিন আগে এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র ল্যান্ড ইউজ পলিসি নামের গবেষণা প্রবন্ধে প্রকাশিত হয়েছে।

শাখা-প্রশাখা নিয়ে বাংলাদেশ প্রায় ৭০০ নদী আর উপনদীর একটি নদীমাতৃক দেশ। গবেষণায় দেখা গেছে যে ১ হাজার ৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে এইচএএনপিপির ভৌগোলিক বিস্তার এ দেশের প্রধান জলাশয়ের তীরে কৃষির উত্থান এবং বিস্তারের সমান্তরাল। সবচেয়ে বেশি এইচএএনপিপি-সমৃদ্ধ এলাকাগুলো প্রধান জলাশয়, যেমন নদীগুলোর লাগোয়া এলাকাতেই। পর্যবেক্ষণে আরো দেখা গেছে যে ১ হাজার ৭০০ সাল থেকে প্রধান জলাশয়গুলোর কাছাকাছি এলাকাগুলোর এইচএএনপিপি ক্রমে বাড়ছে এবং এ প্রক্রিয়া একুশ শতকজুড়ে, ২১০০ সাল পর্যন্ত চলমান থাকবে। এ গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৭০০ সালের স্থানিক এইচএএনপিপি ২৭৫ দশমিক ৯৪ gC/m2 থেকে বেড়ে ১৯৯২ সালে ৫৯৪ দশমিক ৩৮ gC/m2  হয়েছে। আবার ১৯৬১ সালের স্থাননিরপেক্ষ এইচএএনপিপি ১ হাজার ১৬৯ দশমিক ৩৭ gC/m2 থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩১৮ দশমিক ১৪ gC/m2-এ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রাপ্ত এসব তথ্যের ওপর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাচ্ছে যে ২১০০ সাল নাগাদ এইচএএনপিপি বেড়ে ১ হাজার ৪৫৮ দশমিক ২০ gC/m2-এ দাঁড়াবে। স্থানিক এইচএএনপিপির (১৭০০-১৮০০) বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, পুরো বাংলাদেশ একসময় প্রাকৃতিক বনভূমিতে ভরপুর ছিল। ক্রান্তীয় বলয়ে এ দেশের অবস্থান, এর উর্বর ভূমি এবং যথেষ্ট পরিমাণে বৃষ্টিপাত এর মূল কারণ। এ গবেষণা থেকে আমরা সুস্পষ্ট প্রমাণ পাচ্ছি যে এ অঞ্চলজুড়ে প্রাকৃতিকভাবে সুবিস্তৃত একসময়কার সুবিশাল বনভূমি ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হয়ে এখন একটি অতি ক্ষুদ্র, প্রায় জীর্ণশীর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে আমরা সিলেট অঞ্চলের বনভূমির কথা বলতে পারি। পুরো সিলেট অঞ্চল একসময় বনভূমিতে পরিপূর্ণ ছিল এবং সেই বনভূমি পাশের দেশগুলো অবধি ছড়িয়ে ছিল। একই কথা বাংলাদেশের মানচিত্রের রাজধানীকেন্দ্রিক অঞ্চল এবং এর আশপাশে অবস্থিত শালবন নিয়েও বলা যায়। প্রাকৃতিকভাবে এ অঞ্চলে গজিয়ে ওঠা শাল গাছ তথা শালবন আজ প্রায় বিপন্ন। বসতের ও চাষাবাদের জন্য বন উজাড় করা ছাড়াও সম্প্রতি শিল্পকাজের জন্যও শালবনের ব্যবহার অপরিণামদর্শী নীতির করুণ উদাহরণ।

সামগ্রিক বিশ্লেষণে বাংলাদেশের সার্বিক এইচএএনপিপির মান অনেক বেশি হলেও গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে আমরা আশার আলো দেখতে পারছি। পার্বত্য চট্টগ্রামজুড়ে এইচএএনপিপির মান তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আদিবাসীদের প্রচলিত অভ্যাস ও বনভূমি পরিচর্যা এবং সংরক্ষণে তাদের প্রচলিত যৌথ নীতির কারণে এ অঞ্চলজুড়ে আমরা সুবিস্তৃত একটা বনভূমি দেখতে পারছি। গবেষণা থেকে পাওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এইচএএনপিপির মান বাংলাদেশের প্রাপ্ত মানের সঙ্গে আমরা তুলনা করেছি। সবচেয়ে লক্ষণীয় ও আশঙ্কাজনক যে ছবি এ তুলনা থেকে উঠে আসছে সেটা হলো, বাংলাদেশে প্রাপ্ত এইচএএনপিপির মান গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত অন্য যেকোনো দেশের (ভারত, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ইতালি, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, রোমানিয়া, আলবেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফিলিপাইন) চেয়ে বেশি। বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল অথবা উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে আমরা দেখতে পাই, এইচএএনপিপির মাপকাঠিতে বাংলাদেশ প্রথমে অবস্থান করছে। এ থেকে এ দেশের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের যে চরম অবনতি ঘটেছে, এ দুঃখজনক ব্যাপারটাই জ্বলজ্বলে হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে সারা বাংলাদেশে এইচএএনপিপির মান কমানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এ মান না বাড়ে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের উচিত লক্ষ রাখা এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশের এই বিশেষ দিকটার দিকে খেয়াল করা এখন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে কী মাত্রায় এনপিপি ছড়ানো রয়েছে, তা আমাদের গবেষণার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে, যা এইচএএনপিপির মান কমানোর জন্য জেলাভিত্তিক পৃথক নীতি এবং কর্মসূচি গ্রহণ করতে সাহায্য করবে। দেশের জিডিপির সঙ্গে এইচএএনপিপির সম্পর্কও আমরা দেখার চেষ্টা করেছি এবং এর মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে বাংলাদেশে বছরে এক কিলোটন কার্বন এইচএএনপিপি কমানোর জন্য প্রায় ৮ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ জিডিপি ক্ষতি হয়। বাংলাদেশ এই আর্থিক মানটা একটি নির্দেশক মান হিসেবে ধরে নিয়ে কার্বন ফিন্যান্স প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ বছরে ৯২৬ দশমিক ৬৭৫ gC/m2  এইচএএনপিপি কমাতে পারবে এবং দেশজুড়ে ২৫ শতাংশ বনভূমি অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রা এখন রয়েছে, তা অর্জন করতে পারবে। গবেষণায় উঠে আসা এ তথ্যগুলো ব্যবহার করে এবং নিয়মতিভাবে এইচএএনপিপি পরিমাপ করে বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ও সূচক নির্ধারণ করতে পারে। যেহেতু বনায়ন ও বনভূমি সংরক্ষণ এইচএএনপিপির মান কমানোর প্রধান উপায়, সেহেতু বাংলাদেশ সরকার দেশজুড়ে এইচএএনপিপি কমানোর জন্য কার্বন ট্রেডিং, REDD+ (Reduce Emissions from Deforestation and forest Degradation) ইত্যাদি আর্থিক বিনিয়োগ চাওয়ার সময় এ গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল পথনির্দেশক হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলো  এনপিপি ও এইচএএনপিপিকে কার্যকরী একটা নির্দেশক হিসেবে বিবেচনা করে কার্বন ট্রেডিং-সংক্রান্ত তাদের বিনিয়োগও একটি কার্যকরী প্রক্রিয়ায় তদারক করতে পারে। বাংলাদেশের এই দেশভিত্তিক এইচএএনপিপির পরিমাপ বৈশ্বিক এইচএএনপিপির পরিমাপকে আরো ঘষামাজা করে উন্নত করতে সাহায্য করবে। এতে টেকসই প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক নীতি নির্ধারণ করে জৈব উপাদনশীল ভূমির সঙ্গে সম্পৃক্ত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন সম্ভব। ভূমি ব্যবহারের ওপর মানুষের চাপ কতটা, তাও এর মাধ্যমে জানাবোঝা যায়।

বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য নীতিমালা ও কর্মসূচিগুলো এমনভাবে প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যাতে জুম চাষ, উদ্যানবিদ্যা, তামাক চাষ ও বনভূমি ধ্বংসকারী যতসব প্রক্রিয়া আছে, সেসব নিয়ন্ত্রণে রেখে পরিবেশবান্ধব জীবনধারণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এতে এইচএএনপিপির মানই শুধু স্থিতিশীল থাকবে না, সঙ্গে সঙ্গে এনপিপির মান বাড়ানোর জন্য বনভূমি সংরক্ষণের প্রক্রিয়াটিও গতি পাবে। অন্যদিকে সুন্দরবনের খুব কাছের সাম্প্রতিক শিল্পোন্নয়নের বিষয়টিও তীক্ষ নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন, যাতে এইচএএনপিপিএর মান কমানো না গেলেও এখন যেটুকু আছে, সেটা থেকে বেড়ে না যায়। সিলেট অঞ্চলজুড়ে আমরা বনভূমি দেখতে পেলেও এখানকার এইচএএনপিপির মান যথেষ্ট বেশি। একসময় এই পুরো অঞ্চল বনভূমিতে সবুজ থাকলেও চা-বাগান ও নগরায়ণের অপ্রতিহত বিস্তারের কারণে এ এলাকার ভূমি ব্যবহারে প্রচুর পরিবর্তন এসেছে। এ অঞ্চলের এইচএএনপিপির মান কমানোর জন্য সামাজিক বনায়ন এবং বসতবাড়ির আঙিনায় ক্ষুদ্র পরিসরে বনায়ন বেগবান করার জন্য জনসাধারণকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করতে হবে।

বাংলাদেশের বনভূমিসংক্রান্ত নীতিতে ২০২০ সালের মধ্যে এ দেশের বনভূমির পরিমাণ দেশের আয়তনের ২০ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা আছে। আমাদের এ গবেষণা ২০৩০ সালের মধ্যে বনভূমির পরিমাণ দেশের আয়তনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশে উন্নীত করার ব্যাপারে জোর দিয়েছে। এ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে বলা যায়, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নীতি ও পরিকল্পনা সঠিক পথেই এগোচ্ছে, তবে ইতিহাস লক্ষ করলে বলা যায় যে এসব নীতি বাস্তবায়নের বিষয়টি নিয়ত তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে, যাতে নিয়মনীতিগুলো শুধু কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ হয়ে না থাকে। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় খাদ্য উপাদন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয় মূলত টিকে থাকার চাহিদা পূরণ করার জন্য। ফলে এসব দেশে খাদ্য উপাদন বা জমির ব্যবহার কমানোর জন্য খুব কঠোর কোনো নীতি গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।

অন্যদিকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে টেকসই উন্নয়নের জন্য এইচএএনপিপির মান কমানোর দিকটা অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। এই উভয় সংকট থেকে বের হওয়ার জন্য অপব্যয় কমানোর মাধ্যমে ভূমি ব্যবহার ও খাদ্য উপাদন এমনভাবে করতে হবে যেন উপাদন সবচেয়ে বেশি হয়। পাশাপাশি স্বল্প ভূমি পদচিহ্ন এবং পরিবেশগতভাবে টেকসই নতুন ধরনের বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তি, যেমন উলম্ব কৃষিকাজ, ঘরোয়া কৃষি, শহুরে চাষবাস, জলভিত্তিক চাষাবাদ, ভাসমান কৃষি ইত্যাদির প্রয়োগ করতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এইচএএনপিপির মান কমানোর প্রচেষ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস্তুসংস্থানিক পদচিহ্ন বেড়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত বাস্তুসংস্থানিক পদচিহ্ন হয়তো ক্রমান্বয়ে স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছবে। কিন্তু নীতি ও প্রযুক্তিতে এমনভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে, যেন একটি সূচকে কোনো পরিবর্তন আনলে সেটি অন্যটির ওপর কোনো প্রভাব না ফেলে।

 

. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা এবং পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক

. মোহাম্মদ সুজাউদ্দীন: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক

রিয়াসাদ বিন মাহবুব: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী

সুপা রহমান: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী

নাহিয়ান আহমেদ: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন