ওপেক ও ওপেক প্লাস জোটের বাইরে
যুক্তরাষ্ট্রের পর একক দেশ হিসেবে দ্বিতীয় শীর্ষ জ্বালানি তেল উৎপাদক দেশ ব্রাজিল।
যে কারণে দেশটিকে কাছে টানতে দীর্ঘদিনের প্রয়াস ছিল জ্বালানি তেল রফতানিকারক
দেশগুলোর জোট ওপেকের। বিশেষ করে জোটটির কার্যত নেতা সৌদি আরব ব্রাজিলকে জোটে পেতে
মরিয়া। এমনকি এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্রাজিলকে প্রস্তাবও দিয়েছে দেশটি। তবে
এতদিন এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও ব্রাজিল এখন ওপেকে যোগ দেয়ার বিষয়ে আলোচনায়
বসতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী বেন্তো আল বুকেরকুয়ে। চলতি
বছরের মাঝামাঝি সময়ে এ বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি। খবর
রয়টার্স।
সম্প্রতি জ্বালানিমন্ত্রী বেন্তো আল
বুকেরকুয়ে জানান, এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি জি২০ দেশগুলোর জ্বালানিমন্ত্রীদের বৈঠকে
যোগ দিতে সৌদি আরবে সফর করবেন। এ সময় ওপেকে যোগ দেয়ার বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে
আলোচনা হবে। তবে চলতি বছর আর ব্রাজিলের ওপেক জোটে যোগ দেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই
বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত অক্টোবরে ব্রাজিলের
প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো ওপেক জোটে যোগ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার উদ্যোগের কথা
জানিয়েছিলেন। কিন্তু এ সময় দেশটির খাতসংশ্লিষ্টরা এ প্রস্তাবকে মোটেই ভালোভাবে
নেননি। কারণ তারা মনে করেন,
ব্রাজিল ওপেকে যোগ দিলে দেশটিকে জোটের সঙ্গে
উত্তোলন হ্রাস চুক্তিতে যেতে হবে,
যা কার্যত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে
দেশটির হিস্যা কমিয়ে আনবে।
তবে কি ওপেক জোটে যোগ দিলে ব্রাজিল
তাদের জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমিয়ে আনবে—রয়টার্সের এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি জ্বালানিমন্ত্রী বেন্তো আল বুকেরকুয়ে। তবে
তিনি বলেন, এটা (উত্তোলন হ্রাস) সমঝোতার বিষয়। আমাদের আগে আলোচনায় যেতে হবে।
এদিকে চলতি বছর জ্বালানি তেলের
উত্তোলন ও রফতানিতে ব্রাজিল যে আরো আধিপত্য বাড়াবে, সেটিরও ইঙ্গিত দিয়েছেন বেন্তো আল
বুকেরকুয়ে। প্রাক্কলন অনুযায়ী,
চলতি বছর দেশটির দৈনিক গড় উত্তোলন ৩৫ লাখ
ব্যারেলে দাঁড়াতে পারে, যেখানে গত বছর দেশটির গড় উত্তোলন ছিল ৩১ লাখ ব্যারেল। একই সঙ্গে চলতি
বছর দেশটি থেকে জ্বালানি তেলের রফতানিও বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে ব্রাজিল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ সময়ে দেশটি থেকে দৈনিক গড় ১৪ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল রফতানি করা
হবে। যেখানে গত বছর দেশটি থেকে দৈনিক গড় রফতানি ছিল ১১ লাখ ব্যারেল। পাশাপাশি
দেশটি জ্বালানি তেলের নতুন নতুন কূপ খনন ও অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়াবে বলেও ইঙ্গিত
দিয়েছেন ব্রাজিলের জ্বালানিমন্ত্রী।
বর্তমানে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের
বাজার মোটামুটি ব্রাজিলের অনুকূলে রয়েছে বলে মনে করেন বেন্তো আল বুকেরকুয়ে। তার
ভাষায়, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ন্যায্য দাম রয়েছে। তবে ব্রাজিলের এমন ধারণার
সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক ওপেক জোটের পরিকল্পনা।
কারণ জ্বালানি তেলের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ঠেকাতে এবং বাজার চাঙ্গা করতে ওপেকবহির্ভূত কয়েকটি দেশ নিয়ে ওপেক প্লাস জোট গঠন করা হয়। যার কার্যত নেতৃত্বে রয়েছে যথাক্রমে সৌদি আরব ও রাশিয়া। এ জোটের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী গত বছর থেকে জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমিয়ে আসছে জোটটি। আর চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত জোটভুক্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে দৈনিক মোট ১৭ লাখ ব্যারেল কম জ্বালানি তেল উত্তোলন করবে। এর মধ্যে ওপেককে কমাতে হবে ১২ লাখ ব্যারেল। তবে জোটের সরবরাহের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, নরওয়েসহ অন্যান্য দেশের বাড়তি সরবরাহের কারণে জোটটির উদ্দেশ্য পূরণ কার্যত এখনো আলোর মুখ দেখেনি। আর এ কারণে ব্রাজিলের মতো শীর্ষ দেশকে কাছে টানতে চায় ওপেক জোট।
কারণ খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মার্কিন
শেল উৎপাদন ও রফতানি যে হারে বাড়ছে,
তাতে ওপেকের একার পক্ষে আর জ্বালানি তেলের বাজার
নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এজন্য ব্রাজিলের মতো উৎপাদন ও রফতানিকারক দেশ সদস্য হলে
ওপেকের জন্য বেশ সুবিধাই হবে। কারণ এ জোটে যোগ দিলে একক দেশ হিসেবে সৌদি আরব ও
ইরাকের পর ব্রাজিল হবে ওপেকের তৃতীয় শীর্ষ উৎপাদক দেশ।