দাবানলে হুমকির মুখে অস্ট্রেলিয়ায় কয়লা খাত

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিদায়ী বছরের শেষার্ধে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের এনার্জি কোলের উত্তোলন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ কমেছে। এছাড়া গত বছরের শেষ প্রান্তিকে একই রাজ্যের হোয়াইটহ্যাভেন কোল লিমিটেড কোম্পানির কয়লা উত্তোলন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৪ শতাংশ কমেছে

 

গত তিন বছর অস্ট্রেলিয়ায় টানা খরা ভাব বজায় ছিল। এর মধ্যে ২০১৯ ছিল দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। প্রতিকূল পরিবেশের জেরে এ সময় দেশটির কৃষি খাত মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ আকার ধারণ করে যে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গম রফতানিকারক দেশটি শেষ পর্যন্ত প্রথমবারের মতো পণ্যটি আমদানিতে বাধ্য হয়। বছরজুড়ে বাড়তি তাপমাত্রার সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে দেখা দেয় তীব্র দাবানল, যা সাম্প্রতিক সময়ে এসে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। নানামুখী উদ্যোগের পরও এখন পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বলছে। দাবানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির কৃষি ও প্রাণ প্রতিবেশ। তবে এর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না দেশটির খনিজ খাতও।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নভিত্তিক মাল্টিন্যাশনাল খনিজ কোম্পানি বিএইচপি গ্রুপ সম্প্রতি জানিয়েছে, ভয়াবহ দাবানল দেশটির কয়লা খাতের জন্য হুমকি তৈরি করেছে। দীর্ঘকালীন দাবানলের প্রভাবে দেশটিজুড়ে ঘন কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেশটির বায়ু মানের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। লোপ পেয়েছে স্বাভাবিক দৃশ্যমানতা। এসব কারণে দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে অবস্থিত কোম্পানিটির আওতাধীন খনিগুলো থেকে জ্বালানিপণ্যটির উত্তোলন ব্যাহত হচ্ছে।

কোম্পানিটি জানায়, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার কয়লা উত্তোলনে নিম্নমুখী প্রবণতা পড়তে শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি আশঙ্কা করছে, যদি বায়ুু মানের এ অবনতি অব্যাহত থাকে, তবে চলতি মাস থেকে জুন অবধি ছয় মাস দেশটির কয়লা উত্তোলন আরো কমে আসতে পারে, যার ব্যাপক প্রভাব পড়বে দেশটির অর্থনীতিতে।

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের শীর্ষ কয়লা রফতানিকারক দেশ। এছাড়া শীর্ষ থার্মাল কোল রফতানিতে ইন্দোনেশিয়ার পর দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। দেশটির অর্থনীতিতে কয়লার অবস্থান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। খনিজপণ্যটির উত্তোলন কমলে এর প্রভাব পড়বে রফতানিতে, যা দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে বড় ধরনের বাধা তৈরি করতে পারে। চলতি অর্থবছর জ্বালানি পণ্যটির রফতানি থেকে ১ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করার প্রত্যাশা রয়েছে দেশটির সরকারের।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে ১৫০ মাইল উত্তরে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের মুসওয়েলব্রুক শহরে অবস্থিত বিএইচপির মালিকানাধীন মাউন্ট আর্থার খনি থেকে কয়লা উত্তোলন নিয়ে বিপত্তি পড়েছে কোম্পানিটি। কোম্পানির একজন মুখপাত্র জানান, দাবানলের কারণে তারা এরই মধ্যে কয়েকটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন, যা তাদের কর্মীদের নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। এছাড়া রাজ্যটির শ্রমিকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কাজ ছেড়ে স্বেচ্ছাসেবক দমকলকর্মী হিসেবে বা গৃহস্থ ও সম্প্রদায় রক্ষার্থে আত্মনিয়োগ করেছেন।

এতে বিদায়ী বছরের শেষার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের এনার্জি কোলের উত্তোলন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ কমেছে। এছাড়া গত বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) একই রাজ্যের হোয়াইটহেভেন কোল লিমিটেড কোম্পানির কয়লা উত্তোলন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৪ শতাংশ কমেছে।

অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলে এখন পর্যন্ত দেশটির এক কোটি হেক্টর বা ২ কোটি ৭০ লাখ একর জমি পুড়ে গেছে। আয়তন হিসেবে এটি পুরো দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা পর্তুগালের চেয়েও বড়। এসব জমির বেশির ভাগই ছিল বন, গরু কিংবা ভেড়ার চারণভূমি। দাবানলে ২৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির প্রায় পাঁচ কোটি পশুপাখি। আগুনে পুড়ে মারা গেছে লক্ষাধিক গবাদি পশু। উৎপাদিত ফসল ক্ষেতেই পুড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি ও পরিবেশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে দেশটিতে টানা তিন বছর খরা বিরাজ করছিল, পরে যা দাবানলের পক্ষে কাজ করেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানী ক্যানবেরা ও বৃহত্তম দুটি শহর সিডনি ও মেলবোর্ন। এরই মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বাজে বায়ু মানের রেকর্ড করেছে রাজ্যগুলো।

সূত্র: ব্লুমবার্গ ও রয়টার্স

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন