পাঁড় ভক্তের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় উত্তেজনাপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ

বণিক বার্তা অনলাইন

২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপে ঘরের মাটিতে চিলি-ব্রাজিল ম্যাচ গড়িয়েছিল পেনাল্টি শুটআউটে। গ্যালারিতে তখন টানটান উত্তেজনা। ভক্তদের হার্টবিট বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ব্রাজিলের পক্ষে শেষ শট নেন নেইমার জুনিয়র। দুর্দান্ত গোলে দলকে এগিয়ে দেন তিনি। এরপর আসে চিলির শেষ সুযোগ। কিন্তু গোলপোস্ট মিস করে বেরিয়ে যায়। উল্লাসে ফেটে পড়ে হলুদ গ্যালারি। কিন্তু এতো চাপ নিতে পারেননি এক ব্রাজিলীয় ভক্ত। নেইমারের দুর্দান্ত গোলটি দেখেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু ততোক্ষণে তার অন্তরাত্মা খাঁচা ছাড়া! 

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের ভক্তদের জন্য ফুটবল খেলা দেখা খুবই বিপজ্জনক। হার্ট দুর্বল হলে না দেখাই ভালো!

অক্সফোর্ডের ওই গবেষণায় ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ঐতিহাসিক পরাজয়ের পর ব্রাজিলীয় ভক্তদের লালা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, সেমি- ফাইনালে ৭-১ গোলে পরাজয়ের ধকল সামলাতে তাদের হৃৎপিণ্ডকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে! লালা থেকে প্রচুর পরিমাণ কর্টিসল হরমোন নিংসৃত হয় তাদের। এ হরমোন হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বাড়ায়, ফলে বাড়ে রক্তচাপ।

গবেষকরা আরো খেয়াল করেন, খেলা চলাকালীন পুরুষ এবং নারীদের মধ্যে চাপের মাত্রায় কোনো পার্থক্য থাকে না। যদিও সাধারণত ধারণা করা হয়, নারীদের চেয়ে পুরুষরা প্রিয় দলের সঙ্গে বেশি একাত্ম বোধ করেন। 

দীর্ঘ সময় ধরে বেশি মাত্রায় কর্টিসল হরমোন ক্ষরণ হলে- রক্তনালীগুলি সংকুচিত হয়, রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং দুর্বল হার্টের লোকজনের ক্ষতি হয় বেশি। অক্সফোর্ডের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব স্যোসাল কোহেশনের গবেষক ড. মার্থা নিউসন বলেন, যে ভক্তরা তাদের দলের সঙ্গে বেশি একাত্ম হন তারা খেলা দেখার সময় সবচেয়ে বেশি চাপ অনুভব করেন। অন্য ভক্তরাও কমবেশি চাপ বোধ করেন তবে ব্রাজিলীয় পাঁড়ভক্তদের মতো নয়।

গবেষকরা বলেন, কর্টিসল হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি মানুষের মনে আসন্ন বিপর্যয় সম্পর্কে অতিমাত্রায় সচেতন করে তোলে। যেমন: এই বুঝি গোল হয়ে গেল, ব্লক করতে গিয়ে নেইমার ইনজুরিতে পড়বে না তো-  উত্তেজনাপূর্ণ ফুটবল ম্যাচে ভক্তরা সব সময় এমন আশঙ্কায় টগবগ করতে থাকেন। অতি উত্তেজনা জীবনঝুঁকি পর্যন্ত তৈরি করতে পারে।

এর আগের একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের দিনগুলোতে ভক্তদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ে।

অক্সফোর্ডের ওই গবেষণার জন্য ২০১৪ বিশ্বকাপের তিনটি ম্যাচে ৪০ জন ভক্তের খেলা শুরুর আগে, খেলা চলাকালীন এবং খেলা শেষে লালা সংগ্রহ করা হয়। দেখা গেছে, সেমি-ফাইনাল ম্যাচেই কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ ছিল সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ এ ম্যাচেই ভক্তরা সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা বোধ করেছিলেন। এতে প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছিল।

বেশি উত্তেজনায় অনেকে চোখ খোলার সাহসও পান না

ড. নিউসন বলেন, সেমি-ফাইনাল ছিল চরম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ। বহু মানুষ ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন। তবে ভক্তরা এ পরিস্থিতি সামলাতে চমৎকার কৌশল নিয়েছিলেন। তারা পরস্পরের সঙ্গে হাসি তামাশা ও আলিঙ্গন করে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করেন। এতে করে তাদের উত্তেজনার মাত্রা দ্রুতই খেলার শুরুর পর্যায়ে নেমে আসে।

এই ধরনের ম্যাচে উত্তেজনা থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ড. নিউসন। খেলা শেষের বাঁশি বাজানোর পর মাঠে মৃদু আলো জ্বালানো এবং ধীর লয়ে সঙ্গীত বাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া ক্লাবগুলো পাঁড়ভক্তদের রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন মেপে আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন ড. নিউসন।

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন