রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালত

মিয়ানমারকে গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ

বণিক বার্তা ডেস্ক

রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর গণহত্যাসহ নির্যাতন ও বাস্তুচ্যুতি বন্ধে মিয়ানমারকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (আইসিজে) নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টার দিকে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে চারটি নির্দেশনা দেন আইসিজে।

আদালতের প্রধান বিচারপতি আবদুলকাওয়াই আহমেদ ইউসুফ আদেশ পড়ে শোনান। এ সময় অন্য ১৪ জন স্থায়ী বিচারপতি ও দুজন অ্যাডহক বিচারপতি আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। মিয়ানমারের প্রতি দেয়া নির্দেশনাগুলোতে আদালতে বিচারকরা সর্বসম্মত হয়েছেন।

মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশনাগুলো হলো রাখাইনে বসবাসরত সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে ও বর্মি সেনাবাহিনীর লাগাম টেনে ধরতে হবে। আদালত বলেছেন, সেনাবাহিনী কিংবা অন্য যেকোনো ধরনের নিরাপত্তা বাহিনী যাতে গণহত্যা না চালায় কিংবা উসকানি না দেয়, সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে; রোহিঙ্গা গণহত্যাসংক্রান্ত যেসব অভিযোগ এসেছে, সে-সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ সংরক্ষণ করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য মিয়ানমার কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে, সে-সংক্রান্ত প্রতিবেদন চার মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের কাছে জমা দিতে হবে। এরপর প্রতি ছয় মাসে একটি করে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এসব প্রতিবেদন গাম্বিয়ার কাছে তুলে ধরা হবে।

অন্তর্বর্তী আদেশে উল্লেখিত নির্দেশ বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে মিয়ানমার ও গাম্বিয়া পৃথকভাবে আদালতকে অবহিত করবে। নির্দেশ ঘোষণার চার মাসের মধ্যে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।  

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

এ নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে গত বছরের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে আফ্রিকার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া। গণহত্যার তদন্ত শুরু না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানায় দেশটি। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসে গত বছরের ১০-১২ ডিসেম্বর মামলার শুনানি চলে। ১০ ডিসেম্বর গাম্বিয়ার প্রতিনিধি দল আদালতে গণহত্যার বিষয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে। শুনানিতে গাম্বিয়ার পক্ষে মামলার প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির বিচারমন্ত্রী আবুবকর তামবাদু।

পরদিন ১১ ডিসেম্বর মিয়ানমারের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের সরকারপ্রধান অং সান সু চি। সেখানে তিনি তার দেশের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ১২ ডিসেম্বর মামলার শুনানি শেষ হয়।

এদিকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশ ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ আদেশকে তিনিরোহিঙ্গা, মানবতা, গাম্বিয়া ও বাংলাদেশের বিজয় বলে অভিহিত করেছেন।

একুয়েডর সফররত ড. এ কে আব্দুল মোমেন এক বার্তায় বলেন, “এটা মানবতার বিজয় এবং সারা বিশ্বের মানবাধিকার কর্মীদের জন্য একটি মাইলফলক।

জাতিসংঘের মিয়ানমারের মানবাধিকার-বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি বলেছেন, ‘আশা করি আদালতের সিদ্ধান্ত মিয়ানমার সরকার মেনে চলবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ ইস্যুতে সক্রিয় থাকতে হবে, যাতে মিয়ানমার তার দায়িত্ব থেকে সরে আসতে না পারে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ার ভূমিকা লজ্জাজনক। বিশেষ দূত হিসেবে বাংলাদেশে শেষ সফর উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন